পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট ছিলেন মুহাম্মদ মুরসি। নানা চক্রান্তে এক বছরের মধ্যে তাকে পদ থেকে সরে যেতে হয়। স¤প্রতি চিকিৎসা অবহেলায় বিচারাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। স¤প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুডের জনপ্রিয় এই নেতাকে নিয়ে ম্সুলিম ম্যাটার ম্যাগাজিন বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন মুরসি আসুন জেনে নেই- মুরসি ছিলেন কুরআনে হাফেজ। ইসলামের এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজিদ পুরোপুরি তার মুখস্থ ছিল। অল্প বয়সেই তিনি হাফেজ হন। তার এই গুণের কথা অনেকেরই জানা নেই। কারাবন্দী অবস্থায় থাকাকালীন অবস্থায় তিনি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কুরআন শরিফ চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে তাও দেয়া হয়নি। তাই তিনি বলেছিলেন, ওরা হয়তো জানে না, আমি ৪০ বছর আগেই কুরআন মুখস্থ করেছিলাম। আমি তো শুধু এই পবিত্র কুরআনকে একটু ছুঁতে চেয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনি। ছোটো বেলা থেকেই মুরসি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই সাধারণ কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়েও তিনি উচ্চশিক্ষিত হয়েছিলেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ও স্নাতকত্তর পাস করার পর নিজের যোগ্যতায় স্কলারশিপ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পিএইচডি পড়তে যান। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। নাসার সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কিন্তু মাটির টানে তিনি জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। পরে জাগাজিগ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা শুরু করেন। আড়ম্বরহীনভাবে একটি মাত্র অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতেন তিনি। মিসরের কায়রোতে একাধিক বিলাসবহুল বাসভবন ছিল। তবে প্রাচুর্য্য তাকে কোনো দিন আকর্ষণ করেনি। তাই প্রেসিডেন্ট হয়েও একটা ভাড়া অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন মুরসি। বিশ্বের সবচেয়ে কম বেতনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মুরসি। দেশের ধনকুবের ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো দিনই তিনি বিশেষ সুবিধা নেননি। পুরো বছরে তার মোট বেতন ছিল ১০ হাজার ডলার। নিজের বেতন থেকে বাড়ির ভাড়া পরিশোধ করতেন। পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি কখনই সরকারি বিশেষ সুবিধা নেননি। একবার অসুস্থ বোনকে দেখতে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসরা তার বোনকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। মুরসি সহজেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তার বোনকে নিয়ে বিদেশে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। মিসরের সাধারণ অন্যান্য নাগরিকের মতো সরকারি হাসপাতালেই তার বোনের চিকিৎসা হয়েছিল। অবশেষে সেখানে তার বোন ইন্তেকাল করেন। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ছিলেন মিসরের এই নেতা। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কোথাও বক্তৃতা দেয়ার সময়ও তিনি নামাজের বিষয়ে সচেতন থাকতেন। আজান না শুনলে বক্তব্য থামিয়ে তিনি জোরে জোরে নিজেই আজান দিতেন। তার এই গুণ দারুণভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে ছিল। সহজে ফজরের নামাজের জামাত বাদ যেত না তার। দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়তেন জামাতে। অধিকাংশ সময় মসজিদে গিয়েই নামায আদায় করতেন তিনি। জুমার খুতবাতেও তাকে অনেক সময় কাঁদতে দেখা গেছে। তার নিজের ছবি প্রদর্শনে অনীহা ছিল। মিসরের ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসানি মোবারকের ছবি দেখা যেত সব জায়গায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর মুরসি তার ছবি সরকারি অফিসে ঝোলানোর নির্দেশ দেন। সেবামূলক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতেন তিনি। ২০০৪ সালে সুনামি আক্রান্ত ইন্দোনেশিয়াতে ছুটে গিয়ে ছিলেন মুরসি। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এইড মিশনের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া গিয়ে ছিলেন তিনিও। সেবামূলক কাজে অংশ নিতে তিনি এবং তার পরিবারের জন্য কোনো সুবিধা গ্রহণ করতেন না। অত্যন্ত জনদরদি ছিলেন মুরসি। একদিন এক নারীকে তিনি রাস্তার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেন। তাৎক্ষণিক গাড়ি থামিয়ে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, ওই মহিলা বিধবা। তিনি নিরাশ্রয়। তখন তিনি সরকারিভাবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই নারী আবারো গৃহহীন হয়ে পড়েন। ম্সুলিম ম্যাটার ম্যাগাজিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।