নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ব্যাটে রানের ফোয়ারা, বল হাতে গতির ঝড়, রোমাঞ্চ কিংবা হাহুতাশ- কি নেই এবারের বিশ্বকাপে? যেটা নেই তা হচ্ছে বিশ্বায়নের আমেজ। দীর্ঘাকায় সূচির মাঝপথে এসেই কেমন যেন একপেশে হয়ে পড়েছে বিশ্বকাপ। যদিও এখনো কারোরই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি। বাকি সময়ে নাটকীয় যে কোন কিছু ঘটলে ঘটতেও পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর গতিপথ ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা যে আসলেই খুব ক্ষীণ। যাদের সেমিতে যাওয়ার কথা তারাই যাচ্ছে এগিয়ে। আপাতত কোনো চমকের আভাস নেই। যেই চমকের ইঙ্গিত দিয়েও ভগ্ন হৃদয় হয়েছে বাংলাদেশের।
সেদিন সেরা চারে একটা উলট-পালট চাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোসও। ওই চার দলের পাড় সমর্থক ছাড়া রোমাঞ্চ চাইছেন বোধহয় ক্রিকেট-ভক্ত সবাই। কিন্তু ভক্তদের চাওয়া মতো তো আর ক্রিকেট চলে না। এখানে শেষ বিচারে শক্তির তারতম্যই চড়া হয়ে যায়। স্কিল, ভারসাম্য, ফর্ম সব বিচারেই অস্ট্রেলিয়া ঢের এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়ে। কিন্তু লড়াকু আর ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পাঁচবারের এমনকি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বুকেও কি কাঁপন তোলে নি মাশরাফির দল! তুলেছে, আরো অনেক মিনোজও হয়তো তুলবে। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের খুব বেশি অদল-বদল হওয়ার সমীকরণটা যে অনেক কঠিন।
অন্তরে বিশ্বাস আর দু’চোখে সেমির স্বপ্ন নিয়েই এবার ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেই যাত্রার শুরুটাও হয়েছিল স্বপ্নময়। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও হিসেবের মারপ্যাঁচে নিউজল্যান্ডের কাছে হার আর বেরসিক বৃষ্টির তোড়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি ভেসে যাওয়ায় মাশরাফির দল চলে যায় কিছুটা ব্যাকফুটে। পরের ম্যাচেই উইন্ডিজকে উড়িয়ে সেমির পথে থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে রেহে সামনের যাত্রাপথটা হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর।
বিশ্বকাপ পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চার দল যথাক্রমে- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ভারত। এই চার দলের পরেই পাঁচে বাংলাদেশ। টেবিলের শীর্ষ চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। বাংলাদেশ পাঁচে থাকলেও ম্যাচসংখ্যায় ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে, পয়েন্ট ব্যবধানে তো বটেই। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর অনেকেই বাংলাদেশের সেমিতে ওঠার স্বপ্নের সমাধি দেখছেন। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজা এখনই হাল ছাড়ছেন না। তাঁর বিশ্বাস, সামনে কী ঘটবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এখনো বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। আরও তিন ম্যাচ হাতে আছে, আমাদের আরও ভালো খেলতে হবে তারপর দেখা যাবে।’
৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট। তাদের সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ইংল্যান্ড। চারে থাকা ভারতের সংগ্রহ ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও খেলেছে ২টি ম্যাচে বেশি- ৬ ম্যাচ। বিশ্লেষকদের ধারণা, শীর্ষ চার দলের কাউকে ধরার তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই বাকি দলগুলোর। মাশরাফি ভেবেছিলেন টুর্নামেন্টের এ পর্যায়ে শীর্ষ চারটি দল দু-একটি করে ম্যাচ হারবে আর তাতে লাভবান হবে পিছিয়ে থাকা দলগুলো। কিন্তু টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা খুব কম। ভারতের কথাই ধরুন, বাকি পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানানোর দল শুধু ইংল্যান্ড। সাধারণ হিসেব হলো, অন্য চার ম্যাচে ভারতের জেতার সম্ভাবনাই বেশি।
ইংল্যান্ড বাকি ৪ ম্যাচের মধ্যে গতকালই মরগ্যানের দল মুখোমুখি হয়েছে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার। বাকি তিন ম্যাচে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। এভাবেও ভাবা যায়, এই তিন ম্যাচে ইংল্যান্ড হারল আর বাংলাদেশ নিজেদের শেষ তিন ম্যাচ জিতল তাহলেই তো হয়ে যায়! কিন্তু এই ভাবনা সাধারণ বাস্তবতার সঙ্গে কতটুকু যায়? ইংল্যান্ড কিন্তু এই বিশ্বকাপের সেরা দলগুলোর একটি। আর বাকি তিন ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ- আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড- নিজেদের শেষ চার ম্যাচে এই চার দলের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে মোটামুটি দুই ম্যাচ জিতলেই সেমি নিশ্চিত হয়ে যায় কিউইদের। আর অস্ট্রেলিয়ার শেষ তিন প্রতিপক্ষ- ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে একটি ম্যাচ জিতলেই তো হয়! বাংলাদেশের সম্ভাবনা তাই খুব কম। মোটামুটি হিসেব হলো, শুধু নিজেদের বাকি তিন ম্যাচ জিতলেই হবে না অন্য দলের পারফরম্যান্সের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। অথচ মাশরাফি ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু, ‘আমরা ভেবেছিলাম এ পর্যায় পর্যন্ত শীর্ষ দলগুলো কয়েকটি ম্যাচ হারবে আর তাতে টুর্নামেন্টের গতিপথও পাল্টে যাবে। তবে এখনো কিছু ম্যাচ হাতে আছে। তাই নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না। দেখা যাক কী ঘটে।’ অধিনায়কের বলা কথারই অনুরণন খানিকপর পাওয়া গেল তামিমের কণ্ঠেও, ‘এখনও সুযোগ আছে। দলের সবাই একটি কথাই ভাবছে যে, তিন ম্যাচ জিতলে একটি সুযোগ আসতে পারে। এখনও এই অবস্থাতেই আছি আমরা। কখনও যদি এরকম অবস্থা আসে যে কোনো সুযোগ আর নেই, তখন পঞ্চম স্থানের কথা ভাবব।’
আগামী পরশু সাউদাম্পটনে বাংলাদেশের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা যে ‘অঘটন ঘটন পটিয়সি’ এই দলটিকে দিয়ে দিয়েই করতে হবে মাশরাফিদের!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।