মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
‘যে বনে বাঘ নেই, সে বনে শিয়ালই বাঘ’ প্রবাদের মতো ভারত যেন দক্ষিণ এশিয়ার বাঘ হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের হস্তক্ষেপমূলক আচরণে মনে হয় দেশটি বিশাল ক্ষমতাধর। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে অবস্থা শেয়ালের মতো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত চরম বিপর্যয়ের মুখে। এমনকি পররাষ্ট্রনীতিতে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করায় ‘ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের পরবর্তী টার্গেট ভারত হতে যাচ্ছে’ আশঙ্কা প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদন ছেপেছে ভারত থেকে প্রকাশিত সাউথ এশিয়া মনিটর। ‘মোদি ঝামেলাপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে উভয় সঙ্কটে’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনুসরণের মাধ্যমে ভারত যদি মনে করে থাকে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের রফতানি ও আমদানির মাত্রা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে, তাহলে তারা এরই মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতকে সেই সব দেশের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন, যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেই অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে ভারতের আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্য যদি এটা হয়ে থাকে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হবে, সেই উদ্দেশ্যও এখানে নড়বড়ে হয়ে গেছে। কারণ এরই মধ্যে এমন ধারণা ছড়িয়েছে যে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছে ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনবিরোধী নৌ-মহড়ায় অংশ নিয়ে ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কের উন্নতি করতে চায়, তাহলে সে উদ্দেশ্যটাও এরই মধ্যে একটা বড় আঘাত পেয়েছে। কারণ দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে বড় ধরনের ফাটল তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলনে সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিল ভারত। এসসিও প্রতিষ্ঠা করেছিল চীন। যেটা এখন ক্রমেই শক্তিশালী আঞ্চলিক ব্লক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং অঞ্চলের বাইরেও এখন এর প্রভাব ছড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে, এসসিও ক্রমশই একটি শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যেখানে এখন এক ধরণের স্থবিরতার মধ্যে রয়েছে এবং যে উদ্দেশ্য তারা হাসিলের চেষ্টা করছে, সেটা স্ববিরোধী। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শক্তিশালী ও গভীর প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং একই সাথে এই ব্লক থেকেও পূর্ণ সুবিধা পেতে চায়, যে ব্লকটি কার্যত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের বিরোধী।
চীন নিজের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধে ভারতকে নিজের পক্ষে রাখতে চায় এবং সে কারণেই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী তৎপরতা থেকে বের করে আনতে চায়। মার্কিন ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের উপর প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, চীনবিরোধী গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদার হিসেবে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারতের উভয় সঙ্কটের জায়গাটা হলো তারা এই কৌশলে অংশ নিলেই তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার হবে না। বরং মার্কিন সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপযুক্ত কোনো প্ল্যাটফর্ম থাকলে সেটা হলো এসসিও।
সম্মেলনের আগে চীনের ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝাং হানহুই ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ‘বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ এবং একতরফা নীতি এখন সক্রিয়ভাবে গতি পেয়েছে এবং কিভাবে মার্কিন চাপ ও বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে জবাব দেয়া হবে, সেটা শুধু চীনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা যুক্তিসঙ্গত হবে যদি দুই দেশের (চীন ও ভারত) নেতারা এ ব্যাপারে মতবিনিময় করে। এবং আমরা আশা করি তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের বিরোধিতায় ব্যাপক মতৈক্যের জায়গায় পৌঁছতে পারবে।
কিন্তু ‘বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্থ শুধু এটা নয় যে, মুখে শুধু এর বিরোধিতা করলেই হবে। এসসিও’র প্রধান দুই দেশ চীন ও রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার সিস্টেমের বাইরে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি অর্থনৈতিক সিস্টেম প্রণয়নের জন্য কাজ করছে যাতে মার্কিন ‘বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ’ ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে মোকাবেলা করা যায়।
সম্প্রতি সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এইসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে যে সব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোকে ডলারের ভূমিকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেটা ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির একটা অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার পুতিন আরও বলেছেন যে, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে স্বর্ণ-ভিত্তিক একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রস্তাব বিবেচনা করছে, যেটা আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। নতুন একটি অর্থনৈতিক সিস্টেম, যেটা আঞ্চলিকভাবে তৈরি হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেটার সাড়া জাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে এটা কার্যকর হতে পারে। বর্তমান এসসিও সম্মেলনেও এটাই প্রাধান্য পাবে।
মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ দ্বারা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভারত কি সেক্ষেত্রে যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য চীন ও রাশিয়ার দিকে ফিরবে? তাহলে ভারত কিভাবে তাদের প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করবে?
সা¤প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেকটাই বেড়েছে। ভারতের মার্কিন অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সিস্টেম কেনার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এমনকি এখন ভারত বাইরের বিমান হামলা থেকে নয়াদিল্লিকে ‘সুরক্ষার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি মিসাইল সিস্টেম কেনার পরিকল্পনা করছে। লকহিড মার্টিন স¤প্রতি ভারতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এফ-২১ বানিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এখন যেন দুই বিপরীত ঝামেলার মাঝখানে পড়ে গেছে। দুটো বিপরীত বøক থেকে তারা তাদের কৌশলগত/সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে চায়- যুক্তরাষ্ট্র আর চীন/রাশিয়া। ফলে তাদের নীতি-নির্ধারকদের জন্য এই দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ চীনের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধের তাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে দুইপক্ষ এখন দুই মেরুতে অবস্থান করছে।
এই মুহূর্তে ভারতের জন্য মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য এসসিও-ই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো উপায়। যদি তারা রাশিয়ার সাথে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্কটা ফিরিয়ে আনতে পারে; তাহলে তারা হয়তো এই উভয়সঙ্কট কাটিয়ে উঠে অচলাবস্থাটা উৎরাতে পারবে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো: মোদি সরকার কি সেই পদক্ষেপটা নেবে? সময়ই একমাত্র এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।