নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানান মাইলস্টোনে দু’জনের পথচলা হাতে হাত ধরে। আরও একটি মাইলফলকে তামিম ইকবালের ঠিক পরই পৌঁছালেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে স্পর্শ করেছেন ছয় হাজার রান। কালতালীয়ভাবে তখন উইকেটের আরেকপাশেই তার সঙ্গী তামিম। ওশান থমাসকে থার্ড ম্যানে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়ে সাকিব পৌঁছান ছয় হাজারে। ছুটে এসে অভিনন্দন জানান তামিম।
বড় রান তাড়া আর বিশ্বকাপের পরের ধাপের আশা বাঁচিয়ে রাখতে তখনও বাংলাদেশের সামনে কঠিন পথ। সেই পথ পাড়ি দিতে দল চেয়ে আছে এই দুজনের দিকে। তাদের জুটিও জমে উঠেছিল বেশ। জুটিতে পঞ্চাশ রান উঠিয়ে তারা দিচ্ছিলেন বড় কিছুর আভাস। কিন্তু কট্রেলের অখেলোয়াড়সূলভ আচরণে রান আউটের ফাঁদে পড়ে ফিফটি থেকে মাত্র ২ রান আগে ফিরতে হয় তামিমকে। এই পেসারের একটি বল ঠেকালে চলে যায় কট্রেলের হাতে। সঙ্গে সঙ্গে সেটি শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারেন স্ট্যাম্পের দিকে। ক্ষীপ্রতার সঙ্গে ফিরতে চেষ্টা করেন কিছুটা এগিয়ে আসা তামিম। তবে তার হাত আর মুখের ফাঁকগলে কট্রেলের থ্রোটি আঘাত হানে উইকেটে। আউট তামিম। তবে যেভাবে বল ছুড়েছেন তাতে যে কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।
এতটা খেপে যাওয়ার কারণও যে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়ায় আগ্রাসী শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। ২৩ বলে ২৯ করে তিনি ফেরার পর তামিমের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। মাঠে বৃষ্টির কিছু আভাস দেখতেই ডি/এল মেথডের সুবিধা নিতে আক্রমণাত্মক অ্যাপ্রোচ দেন তিনি। তাতে ফলও মিলেছে ভালো। দলের রান বেড়েছে তরতরিয়ে। সময়ের সঙ্গে মানিয়ে পুরো প্রাধান্য নিয়ে খেলেছেন শীর্ষ এই অলরাউন্ডার। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য।
সাকিব অবশ্য আগে বেশিরভাগ সময় নামতেন পাঁচ-ছয় নম্বরে। সেসব পজিশনে বড় রান করার সুযোগ ছিল কম। বছরখানেক ধরে নিজেকে তিন নম্বরে উঠিয়ে আনার ফল পাচ্ছেন হাতেনাতে। এই পজিশনে এই পর্যন্ত তার বিস্ময়কর সাফল্য। সেই সাফল্যের ধারায় অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চকে হঠিয়ে আবারো উঠে এসেছেন রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে।
গতকাল টন্টনে ৬ হাজার থেকে ২৩ রান দূরে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচটি শুরু করেছিলেন সাকিব। এ দিন ১৮ বল খেলে পৌঁছে যান মাইলফলকে। ২৫০ উইকেট তার ছিল আগে থেকেই। ৬ হাজার রান ও আড়াইশ উইকেটের ডাবল তিনিই স্পর্শ করলেন সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে। ইনিংস অবশ্য বেশি লাগল সাকিবের। ১৭৫ ইনিংসে ছুঁয়েছিলেন তামিম, ১৯০ ইনিংসে সাকিব। ছয় হাজার রানে যেতে সাকিবের লাগল ২০২ ম্যাচ। ১৯৭ ম্যাচেই তামিম ততদিনে চলে গেছেন সাত হাজারের কাছে (৬৭৪৩)। তবে ক্যারিয়ার গড় আর স্ট্রাইকরেটে (৮২.০৯) এগিয়ে আছেন সাকিব।
ক্যারিয়ারে পথচলায় আরেকটি জায়গাতেও ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। প্রতিটি হাজার রানের ধাপে সবশেষ এই হাজারই তার দ্রæততম। ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ছুঁতে খেললেন ২২ ইনিংস। এর আগে ১ থেকে ২ হাজার ও ৩ থেকে ৪ হাজার করতে লেগেছিল ৩১ ইনিংস। ওয়ানডেতে প্রথম হাজার রান করতে খেলেছিলেন ৩৮ ইনিংস। ২ থেকে ৩ হাজারে লেগেছিল ৩৬ ইনিংস, ৪ থেকে ৫ হাজার করতে ৩২ ইনিংস।
২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল সাকিবের। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাঁহাতি এই টপ অর্ডার খেলেছেন ২০২ ম্যাচ। ৩৭.৪২ গড়ে রান করেছেন ৬ হাজার ১০১। সেঞ্চুরি ৯টি, হাফসেঞ্চুরি ৪৪টি। বল হাতে তার উইকেটসংখ্যা ২৫৫টি।
চলতি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ৩২ বছর বয়সী তারকা। ৪ ইনিংসে ২ হাফসেঞ্চুরি ও ২ সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৩৮৪ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এরই মধ্যে আরও কয়েকটি মাইলফলকও ছোঁয়া হয়ে গেছে সাকিবের। বাংলাদেশের জার্সিতে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলা ও দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার স্বাদ পেয়েছেন তিনি।
মাইলফলকে পৌঁছে ইনিংসটি নিয়ে গেছেন আরো উঁচুতে। শুরুর ছন্দে দ্রæতই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৪৫তম ফিফটি। আর তাতেই স্পর্শ করেছেন দুটি রেকর্ড। যার একটি আবার বিশ্বকাপের গÐিতেই! যেখানে সাকিব বসেছেন নভজোত সিং সিধু, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, শচীন টেন্ডুলকার, কুমার সাঙ্গাকারা ও গ্রায়েম স্মিথদের মত কিংবদন্তীদের পাশে।
সাকিবের আগে এই ৫ ক্রিকেটার বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা চার ইনিংসে তুলে নিয়েছিলেন পঞ্চাশ বা তারও বেশি রান। তারা হলেন- গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, নবজিত সিং সিধু, শচীন টেন্ডুলকার, গ্রায়েম স্মিথ ও কুমার সাঙ্গাকারা। এর মধ্যে শচীন একাই এই কীর্তি গড়েছেন দু’বার। এছাড়া বিশ্বকাপের প্রথম চার ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার রেকর্ডে সাকিব পাশে পাচ্ছেন মাত্র তিনজনকে- নভজিত (১৯৮৭), শচীন (১৯৯৬) ও গ্রায়েম স্মিথ (২০০৭)।
এই ইনিংস খেলার পথেই সাকিব ছুঁয়েছেন একদিনের ক্রিকেটে টানা পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার বাংলাদেশের রেকর্ডও। যেখানে আগে থেকেই শীর্ষে ছিলেন দেশের অনেক ব্যাটিংয়ের রেকর্ডম্যান তামিম। ২০১২ সালে টানা পাঁচ ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
এদিন যে অন্যরূপে আবর্তিত সাকিব। তিনটি জীবন পাওয়ার পর তাকে থামানোর সাধ্য যে একমাত্র সাকিবেরই ছিল। একের পর এক বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে খুব দ্রæতই চলে এলেন আরেক মাইলফলকে। ৯৪ রান থেকে সেই ওশানে থমাসকে দর্শনীয় কাভার ড্রাইভে যখন সীমানা ছাড়া করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে নাম লিখিয়ে নিলেন বিশ্বকাপের এলিট ক্লাবে, ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির ৯ জনের তালিকায়। মাত্র ৮৩ বলে তার এই শতকটি এখন পর্যন্ত আসরের দ্রæততম।
সেখানেই থেমে থাকেননি। দলকে ইতিহাস গড়া জয় উপহার দিয়ে অপরাজিত ছিলেন ১২৪ রানে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত থাকা লিটন ছিলেন ৯৪ রানে। জুটিতে এই দু’জন এদিন যোগ করেছেন ১৮৯ রান। নিজেদের তো বটেই এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যে কোনো উইকেটেই সর্বোচ্চ রানের জুটি। ফাইন লেগ দিয়ে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের একটি শর্ট বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করেই লিটন ছুটে এলেন ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে, যেখানে দাঁড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে থাকা ম্যাচের নায়ক। সাকিব নায়ক হলে পার্শ্বনায়ক যে তিনিই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।