পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা ইস্যু, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ ক’টি প্রকল্প গুরুত্ব পাবে
চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তাতে গতি পাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রকল্প। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আরও উন্মুক্ত হবে সম্পর্কের দুয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ সামস মোরসালিন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। জাপান সফর করে আসার পর এ সময় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর খুবই গুরুত্ব বহন করছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আগের চুক্তিগুলোর ফলোআপ নতুন কিছু চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ উন্নয়ন সহযোগিতা কামনা করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার বিশাল সমুদ্র সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের জন্যও সহযোগিতা পেতে পারে। আর চীনেরও ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রোগ্রাম সফল করার জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা কতোটা পেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ সামস মোরসালিন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারত ও চীন কোন দেশই বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান রাখছে না। এক্ষেত্রে এ ইস্যুতে বাংলাদেশ চীনকে কতটা পাশে পাবে তা বলা না গেলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে চীন যদি মধ্যস্থতা করে তাহলে মিয়ানমার আরও নমনীয় হতে বাধ্য হবে। চীনের সাথে বাংলাদেশে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে এ বিষয়টি অবশ্যই ভারতকে ভাবাবে। তবে দেখা যাবে, সরকার অবশ্যই এ ক্ষেত্রে ব্যালেন্সিং একটা নীতি নেবে। চীন থেকে আসার পর আবার ভারত সফরও হতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে ঢাকা ও বেইজিং এর কর্মকর্তারা। বেইজিং এ চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ লিয়াও মিং এর ডালিয়ান নগরীতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সামিটে যোগ দেবেন। অত্যাধুনিক বন্দর শহর ডালিয়ান-এ ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ২ জুলাই সামিটে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। ৩ জুলাই ডালিয়ান থেকে তিনি বেইজিং যাবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, প্রধানমন্ত্রী লি কিনকিয়াং ও অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় দেশটির সঙ্গে ২৭ প্রকল্পে ২২ বিলিয়ন (২২০০ কোটি) ডলারের ঋণ সহায়তার সমঝোতা হয় বাংলাদেশের। এরমধ্যে গত তিন বছরে পদ্মাসেতু রেলসংযোগসহ ৫ প্রকল্পে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে দেশটির সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে আরও বেশ কিছু প্রকল্প আশার আলো দেখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’সহ বেশ ক’টি প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও আছে এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রকল্প, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্প, আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ও আইপি টিভি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি সেবা চালু প্রকল্প। জানা গেছে, চীনা ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হবে এমন ২৭টি প্রকল্পেরই সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে চিঠি দেবে ঢাকা। চীনের ঋণে বাস্তবায়ন হবে এমন বেশ কিছু প্রকল্প ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া অংশের যানজট নিরসন করা। সফলভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সহজ সংযোগ স্থাপিত হবে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও হবে যানজটমুক্ত। পাশাপাশি যানজটমুক্ত হবে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকা।
এ প্রকল্পে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেওয়া হবে। সমঝোতা হলেও প্রকল্পের ঋণ চুক্তি এখনো সই হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই প্রকল্পের ঋণ চুক্তির বিষয়টি গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, সমঝোতা অনুযায়ী এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্পে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। ইতোমধ্যেই সরকারি খাত থেকে এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। ঋণ চুক্তির জন্য প্রকল্পটি প্রস্তুতও করা হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হতে পারে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অংক প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এজন্য ইতোমধ্যে এডিপিতে ৭১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এছাড়া আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটের বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপ দেওয়ার প্রকল্পটিতে চীন সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে দেবে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ। অন্যদিকে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের আওতায় এক বিলিয়ন ডলার (৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা) ঋণ দেবে চীন সরকার।
এর বাইরে দেশে ছয়টি আইপি টিভি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশন আসছে। আম্বার আইটি লিমিটেড, বিডিকম অনলাইন লিমিটেড, লিংক থ্রি টেকনোলজি লিমিটেড, ডোজ (কার্নিভাল) ইন্টারনেট, চট্টগ্রাম অনলাইন এবং আইসিসি লিমিটেড নামের ছয়টি কোম্পানি এই আইপি টিভি এবং ভিওডি সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এ খাতেও চীন দেবে ১২ দশমিক ৫ কোটি ডলার ঋণ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একনেকে অনুমোদন পাওয়া বেশ ক’টি প্রকল্পের ঋণ চুক্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে গতি পাবে। অন্য প্রকল্পের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে, যেন কম সময়ে ঋণ চুক্তিতে দু’টি দেশ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র। চীনা ঋণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আরও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে চীনা ঋণের ওপর নির্ভর করে। তাই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর সা¤প্রতিক জাপান সফরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে কয়েকটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি হতে পারে। ঋণ চুক্তি না হলেও বেশ কিছু প্রকল্প গতি পাবে। কিছু প্রকল্প একেবারেই ফাইনাল স্টেজে আছে, যেমন ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক’ প্রকল্প। আর যেসব প্রকল্প এখনো ফাইনাল স্টেজে আসেনি সেসব প্রকল্পের অগ্রগতিও হবে যেমন ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি’ ।
জানা গেছে, চীন বাংলাদেশে রফতানি করে প্রায় ১৬ হতে ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, অথচ বাংলাদেশে থেকে আমদানি করে মাত্র ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশকে তারা বছরে একশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার চারশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করে বছরে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি করে মাত্র ২৬ কোটি ডলারের। কিন্তু দুদেশের মধ্যে অনেক ‹ইনফরমাল ট্রেড› বা অবৈধ বাণিজ্য হয়, যা মূলত ভারতের অনুকুলে। এর পরিমাণ কমপক্ষে দুই হতে তিন বিলিয়ন ডলারের সমান হবে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে যে ভারতীয়রা কাজ করেন তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও হবে দুই হতে চার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে ভারত যে বৈদেশিক সহায়তা দেয় বছরে তার পরিমাণ পনের কোটি ডলারের মতো।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি দেশই বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে। বাংলাদেশে বড় আকারে রেল প্রকল্পে আগ্রহী দুটি দেশই। গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে উভয় দেশের। কিন্তু এসব প্রকল্প খুব বেশি এগুচ্ছেছ না। ভারত বাংলাদেশের সুন্দরবনের কাছে যে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পেয়েছে সেটি বেশ কিছু বাস্তব এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।