নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা টেনেটুনে ১৯ হাজার। এই মাঠেই বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে টিকিটের জন্য আবেদন পড়ে প্রায় সাত লাখ! ম্যাচের আগে কালোবাজারে চড়াও দামে টিকিট বিক্রির খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। এক বিলিয়নেরও বেশি টিভি দর্শকের চোখ ছিল টিভি পর্দায়! বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলে কথা।
উত্তাপের সেই ম্যাচে এবার বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে হেরেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীর দলটির বিপক্ষে অপরাজেয় যাত্রা অব্যহত রাখল ভারত। চার ম্যাচে তিন জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তিন কোহলির দল। একই পরিসংখ্যান নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে দুইয়ে নিউজিল্যান্ড। এক ম্যাচ বেশি খেলে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচে এক জয়ে দশ দলের মধ্যে নয়ে পাকিস্তান।
যে কোনো ধরণের ক্রিকেটেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। ক্রিকেটের বাউন্ডারি পেরিয়ে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। আর ক্ষেত্রটা যদি হয় বিশ্বকাপ তাহলে তো কথাই নেই। এবারের বিশ্বকাপে তা আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জম্মুর পুলওয়ামার বোমা হামলায় চল্লিশজন ভারতীয় জাওয়ানের মৃত্যু হলে। এই ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের সিমানা প্রাচীরে লেগে যায় যুদ্ধ। যে রেশ এসে পড়ে ক্রিকেটাঙ্গনেও। স্বয়ং সাবেক ক্রিকেটাররা পর্যন্ত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ বয়কটের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) পক্ষ থেকেও ম্যাচ বয়কটের ব্যাপারে আইসিসিতে যোগাযোগ করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। কিন্তু আইসিসি ম্যাচ পরিচালনার ব্যাপারে সবসময়ই দৃড় অবস্থানে থেকেছে। শেষ পর্যায়ে এসে গত কয়েকদিন ধরে দুই দেশের গণমাধ্যমেও উত্তেজনা পৌঁছে চরমে। শেষ পর্যন্ত এত আলোচনা-সমালোচনার ম্যাচ যখন মাঠে গড়াবে তখন তা নিয়ে বাড়তি আগ্রহ তো তৈরি হবেই।
এবারের আসরে অধিকাংশ ম্যাচেই বড় নিয়ামক হিসেবে দেখা দিয়েছে বৃষ্টি। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে গতকালের এই ম্যাচেও ছিল এর প্রভাব। কাল অবশ্য বৃষ্টির দেখা মেলে ৪৭তম ওভারে। আধা ঘণ্টা মত পর ম্যাচ শুরু হলেও কোনো ওভার কাটা যায়নি। ভারত ৫ উইকেটে দাঁড় করায় ৩৩৬ রানের সংগ্রহ।
টস জিতে বল বেছে নেন পাকিস্তান অধিনায়ক, লক্ষ্যটা ছিল পরিষ্কার- পিচের ময়েশ্চার কাজে লাগিয়ে দ্রæত উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে বড় সংগ্রহের লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু সরফরাজ আহমেদের সেই পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। বল হাতে মোহাম্মার আমির ছাড়া কেউই তেমন কার্যকর ছিলেন না। ফিল্ডিংটাও হয়েছে যাচ্ছেতাই। দুইবার রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে আসে ১১৩ বলে ১৪০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। ১০ ওভারে ৪৭ রানে ১ মেডেনসহ তিন উইকেট নেন আমির।
ভারতের ওপেনিং জুটি বিচ্ছিন্ন করতেই পাক বোলোরদের লেগে যায় ২৪ ওভার। তার আগে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ ১৩৬ রানের জুটি উপহার দিযে যান লেকেশ রাহুল (৭৮ বলে ৫৭)। ইনিংসের দশম ও এগারোতম ওভারে রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিত ৩৪ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। আসরে নিজের দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ২৪তম শতক পূর্ণ করেন ৮৫ বলে। হাসান আলির বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেয়ার আগে ১৪টি চার ও তিন ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ওয়ানডের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক। তার আগে দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সঙ্গে গড়েন ৯৮ রানের জুটি। এই জুটিই সাড়ে তিনশ রানের আভাস দিচ্ছিল ভারতকে। কিন্তু ভালো শুরু করেও হার্দিক পান্ডিয়ার (১৯ বলে ২৬) ফিরে যাওয়া ও মাহেন্দ্রসিং ধোনির দ্রæত বিদায়ে তা সম্ভব হয়নি। ৪৮তম ওভারে আমিরের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেয়ার আগে কোহলি করেন ৬৫ বলে ৭৭। এই ইনিংসের পথেই শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডেতে দ্রæততম ব্যক্তিগত এগারো হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান কোহলি। ওয়ানডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর যেখানে লেগেছে ২৭৬ ইনিংস, সেখানে ২২২ ইনিংসেই এই মাইলফলকে পা রেখেছেন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি।
রেকর্ড তাড়ায় শুরুটা যেমন হওয়ার তেমন হয়নি পাকিস্তানের। পঞ্চম ওভারেই ১৪ রানে ওপেনার ইমাম-উল-হককে হারায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত জয় পেতে সামনে কঠিন পথ পাকিস্তানের। হ্যামিস্ট্রিং চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া ভুবনেশ্বর কুমারের অসমাপ্ত ওভার শেষ করতে এসে প্রথম বলেই ইমাম-উলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বিজয় শংকর। বাবর-ফখরের ১০৪ রানের জুটিতে সেই ধাকা কাটিয়ে ওঠার আভাস দেয় পাকিস্তান। কিন্তু ১২ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে সরফরাজ বাহিনী। নিজের টানা দুই ওভারে কুলদিপ যাদবের ঘূর্ণী ফাঁদে আটকা পড়েন বাবর-ফখর দুজনেই। পরের ওভারে টানা দুই বলে মোহাম্মাদ হাফিজ ও শোয়েব মালিককে সজঘরে পাঠান পান্ডিয়া। সরফরাজকে বোল্ড করে ম্যাচ দ্রæত শেষ করার ইঙ্গিত দেন শঙ্কর। এরপরই ঝেপে নামে বৃষ্টি। ৩৫ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ১৬৬। পাকিস্তানের নতুন লক্ষ্য বেধে দেওয়া হয় ৪০ ওভারে ৩০২। তার মানে হাতের চার উইকেটে ৩০ বলে তখন পাকিস্তানকে করতে হত ১৩৬ রান। তারা করতে পারে ৬ উইকেটে ২১২। বিশ্বকাপে এ নিয়ে সাত ম্যাচের সবকটিতে হারল পাকিস্তান।
ভারত : ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (রাহুল ৫৭, রোহিত ১৪০, কোহলি ৭৭; আমির ৩/৪৭, হাসান ১/৮৪, ওয়াহাব ১/৭১)। পাকিস্তান : ৪০ ওভারে ২১২/৬ (ফখর ৬২, বাবর ৪৮, ইমাদ ৪৬*, শাদব ২০*; শংকর ২/২২, পান্ডিয়া২/৪৪, কুলদিপ ২/৩২)। ফল : ডি/এল নিয়মে ভারত ৮৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : রোহিত শর্মা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।