ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার বিশ্বকাপের ১৯তম ম্যাচে অপেক্ষা ছিল দুই দলের গতির লড়াই দেখার। কিন্তু অপেক্ষমানদের চরম হতাশ হতে হয়েছে প্রথম ইনিংস শেষেই। ইংলিশদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে যে দাঁড়াতেই পারেনি ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা।
টুর্নামেন্টের ফেভারিটতম দলের বিপক্ষে মাত্র ২১২ রানের পুঁজি নিয়ে আর যাই হোক লড়াইয়ের আশা করা যায় না। সেটা আরো একপেশে করে দেয় জো রুটের অল-রাউন্ডার পারফর্ম্যান্স। বল হাতে মিডিল অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেয়ার পর অপরাজিত সেঞ্চুরি ইনিংস এসেছে তার ব্যাট থেকে। ইংল্যান্ডও উইন্ডিজকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয় ১০১ বল হাতে রেখে।
সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোল স্টেডিয়ামে ইনিংসের শুরুতে জনি বেয়ারস্টো আর জো রুট ছিলেন দৃড়প্রতিজ্ঞ। ১৫তম ওভারে বেয়ারস্টোর (৪৫) বিদায়ে এই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে ৯৫ রান। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসা ক্রিস ওকসকে নিয়ে ১০৪ রানের জুটিতে বাকি পথ সহজ করে নেন রুট। শেষ পর্যন্ত ২৮ বছর বয়সী ডান-হাতি অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ারের ১৬তম ও বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় শতক (৯৪ বলে ১০০) পূর্ণ করে। সাকিব আল হাসানকে টপকে চলতি আসরে চার ম্যাচে দুটি করে ফিফটি ও শতকে সর্বোচ্চ (২৭৯) রান সংগ্রাহকও এখন রুট।
বিশ্বকাপে দুই দলেরই ছিল এটি চতুর্থ ম্যাচ। চার ম্যাচে তিন জয় ও এক পরাজয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় তিনে নেমে গেছে অস্ট্রেলিয়া। তিন পয়েন্ট নিয়ে ছয়েই রয়েছে উইন্ডিজ।
টুর্নামেন্টে ইংলিশদের আগের দুটি জয় এসেছে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুশড়ে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ব্যাটসম্যানদের পর বল হাতে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন উড-আর্চার-ওকসরা। গতকাল তাদের সামলানোর চ্যালেঞ্জ ছিল গেইল-রাসেলদের। সেই চ্যালেঞ্জে নিরঙ্কুশ বিজয় হলো উড-আর্চারদের।
জন্মভুমির বিপক্ষে এদিনও দুর্দান্ত ছিলেন জফরা আর্চার। ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেন মার্ক উড। দুজনেই নেন তিনটি করে উইকেট। মূল্যবার ব্রেক থ্রু এনে দেন বাকি দুই পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকস। মিডিল অর্ডারে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে তাদের সহায়তা করেন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত বল হাতে নেওয়া রুট। ৪৪.৪ ওভারেই শেষ হয় উইন্ডিজ ইনিংস।
একাদশে ফেরা এভিন লুইস এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ রান করা এই ওপেনার ক্রিস ওকসের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে এবার বিদায় নেন ব্যক্তিগত ২ রানে। ১৫ রানে জীবন পাওয়া ক্রিস গেইল (৩৬) খেলোস ছেড়ে বেরুনোর আভাস দিয়েও দারুণ এক বাউন্সারে প্লাঙ্কেটের শিকারে পরিণত হন। শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করা শাই হোপকে এলবিডব্লিউর সফল রিভিউয়ে ফেরান উড।
৫৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রতিরোধ গড়ে চতুর্থ উইকেটে শিমরন হেটমায়ার ও নিকোলাস পুরানের ব্যাটে। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জুটি ভাঙতে রুটকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। হেটমায়ারকে (৩৯) নিজের ক্যাচে পরিণত করে ৮৯ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন রুট। এরপর দ্রুতই শেষ হয় ক্যারিবীয় ইনিংস। শীর্ষ আট ব্যাটসম্যানের ছয়জন দুই অঙ্কে পৌঁছেও বড় ইসিংস উপহার দিতে পারেননি কেউই। একমাত্র ফিফটি ইনিংস পুরানের (৬৩)।
এমন জেয়র পরেই ইংলিশ শিবিরে দুঃশ্চিন্তা যোগ করেছে জেসন রয় ও অধিনায়ক মরগানের ইনজুরি। ম্যাচের অষ্টম ওভারে কাভারে ফিল্ডিং করার সময় পায়ের মাংশপেশীতে টান পান রয়। এরপর আর ফিল্ডিং করতে পারেননি। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘রয়ের বাম হ্যামিস্ট্রিং শক্ত করে কাপড়ে পেচিয়ে রাখা হয়েছে’ এবং ‘তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে’। শেষ দিকে পিঠে টান পেয়ে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন মরগান। পরে অবশ্য তাদের ব্যাটে নামা লাগেনি।
আজ বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ওভালে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আর কার্ডিফের দিবা/রাত্রির ম্যাচে জয়ের সন্ধ্যানে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৪.৪ ওভারে ২১২ (গেইল ৩৬, লুইস ২, হোপ ১১, পুরান ৬৩, হেটমায়ার ৩৯, হোল্ডার ৯, রাসেল ২১, ব্র্যাথওয়েট ১৪, কটরেল ০, টমাস ০*, গ্যাব্রিয়েল ০; ওকস ১/১৬, আর্চার ৯-১-৩০-৩, প্লাঙ্কেট ৫-০-৩০-১, উড ৬.৪-০-১৮-৩, স্টোকস ৪-০-২৫-০, রশিদ ১০-০-৬১-০, রুট ৫-০-২৭-২)।
ইংল্যান্ড : ৩৩.১ ওভারে ২১৩/২ (বেয়ারস্টো ৪৫, রুট ১০০*, ওকস ৪০, স্টোকস ১০*; কটরেল ৩-০-১৭-০, টমাস ৬-০-৪৩-০, গ্যাব্রিয়েল ৭-০-৪৯-২, রাসেল ২-০-১৪-০, হোল্ডার ৫.১-০-৩১-০, ব্র্যাথওয়েট ৫-০-৩৫-০, গেইল ৫-০-২২-০)।
ফল : ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : জো রুট