Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেট জনকল্যাণমূখী- সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৯, ৯:৩৩ পিএম | আপডেট : ৯:৩৪ পিএম, ১৪ জুন, ২০১৯

দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধশালী করতে এবং স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এজন্য বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দেশিয় শিল্প সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে তিন কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা। একই সঙ্গে কালো টাকাকে সাদা করে মূল ধারায় আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাতে দেশ থেকে টাকা পাচার না হয়ে বিনিয়োগ হয়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি দেশকে সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য সমৃদ্ধ এবং কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি অকল্যাণ, ধ্বংস নয়, বরং সৃষ্টির যুদ্ধ। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। সেই লক্ষ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন বাইরে গেলে আগে যারা মনে করত আমরা ভিক্ষুকের জাত হিসেবে যাচ্ছি, এখন আর কেউ তা মনে করে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন। আর এক কথায় এবারের বাজেটকে জনকল্যাণমূলক বাজেট বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সব উদ্যোগ-কার্যক্রমই জনগণের কল্যাণের জন্য।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ্য থাকায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রথম বারের মতো সংবাদ সম্মেলন করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। বাজেটের মতো অর্থনীতির সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়ে সাবলীলভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ না হয়েও মঞ্চে উপস্থিত সাবেক অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ অভিজ্ঞদের কারও সহায়তারও প্রয়োজন হয়নি তাঁর। উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে দৃঢ়তা ও সাহসীকতার সাথে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা

অসুস্থ্যতার জন্য উপস্থিত হতে না পারা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সুস্থ্যতা কামনা করে সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রথমে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বাজেট পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হচ্ছে, বাজেটে আমার সাধারণ জনগণ খুশি কি না। সাধারণ মানুষগুলির ভালো করতে পারছি কি না। এটাই হচ্ছে বড় কথা। একই সঙ্গে আমরা দূরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্য সোনার বাংলা গড়া। তা যাতে চলমান থাকে এক্ষেত্রে সবার সহযোগীতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার ওপরে রয়েছে। বাজেট নিয়ে সমালোচনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সমালোচনা করার তারা করে যাক, ভালো কথা বললে আমরা গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে আমরা ধর্তব্যে নেব না। পরিষ্কার কথা।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থপাচার ঠেকাতে আলাদা কমিটি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, অ্যাটর্নি জেনারেলে কার্যালয় সবাইকে মিলিয়েই কমিটি আছে। আন্তর্জাতিক কমিটিও আছে। সবাই মিলে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে অর্থপাচার যেখানেই হচ্ছে, ধরা পড়ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেশ থেকে যেন অর্থ পাচার না হয়, সে কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার করতে চায়। এটা বন্ধ করার জন্যই বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা আমরাই কেবল নই, এর আগের সব সরকারই এই সুযোগ দিয়েছে। আমরাও এর আগে এই সুযোগ দিয়েছি। এখনো দিচ্ছি। মাঝে মাঝে সেই সুযোগ বন্ধও করেছি। তবে কালো টাকার স্তূপ যেন গড়ে না ওঠে, তাই এই টাকা প্রদর্শন করার সুযোগও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত টাকা যেন বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকে, তাই আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দিয়েছি। চাইলে সেখানে বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকবে। তবে সেখানে বিনিয়োগ করতে চাইলেও সুনির্দিষ্ট হারে চার্জ বা সুদ দিতে হবে। এই সুনির্দিষ্ট হারের অতিরিক্ত চার্জ বা ফি জমা দিয়েই কালো টাকার মালিকেরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর এই ধরনের বিনিয়োগ করলে তাকে আর প্রশ্ন করা হবে না। ভবিষ্যতে যেন এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করা হয়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর করমুক্ত আয়সীমা ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের করহার কম। বিদ্যমান হারে আমাদের জনগণ কর প্রদানে অভ্যস্ত। তিনি বলেন, আমাদের সর্ববৃহৎ রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে বিদ্যমান (করের) ব্যবহার খুবই সহনীয়, অর্থাৎ খুবই কম। গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি বা সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ। টেক্সটাইল শিল্পে করহার ১৫ শতাংশ। উভয় শিল্পে প্রণোদনা দেয়ার জন্য ২০১৯-২০ সালেও এ করহার অপরিবর্তিত থাকবে। প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায় সহায়তা, কৃষি শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রায় ৩৫টি আইটেমে কর অবকাশ সুবিধা আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও নতুন কিছু উপখাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, ‘কাউকে কষ্ট না দিয়ে রাজস্ব জোগাড় করতে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে এক কোটি করদাতা তৈরি করতে চাই।’ আয়-রোজগার ভালো থাকলে মানুষ কর দিতে উৎসাহী হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা। প্রস্তাবিত বাজেট সেই লক্ষ্যমাত্রার পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে। সম্মেলনে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যু পাবে। গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাম হবে আধুনিক শহর।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে। দেশের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বেকারত্ব ঘোচাতে স্টার্টআপ ফান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বাজেটের লক্ষ্য সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।’

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সমালোচনাকে ‘ভালো না লাগা পার্টির অসুস্থতা’। সাধারণ মানুষ এই বাজেটে খুশি কি না, বাজেটে তাদের উপকার হচ্ছে কি না- সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা কোনো কিছু ভালো খুঁজে পায় না। যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনোকিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে।

সিপিডি কী গবেষণা করে এবং তারা দেশের জন্য কী আনতে পেরেছে- সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তাদের একটা কিছু বলতে হবে। তো সেটা ভালো। কিন্তু এতো সমালোচনার পরও আবার বলবে- ‘আমরা কথা বলতে পারি না’। এ রোগটাও আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার মত।

আওয়ামী লীগ সরকার যে এবার নিয়ে টানা ১১ বারের মত বাজেট দিল- সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভালো না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগবে না। এ সময় তিনি একটি গল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, একটা গল্প আছে না, পড়াশোনা করছে ছেলে, পাস করবে না; পাস করার পরে বললো চাকরি পাবে না; চাকরি পাওয়ার পর বললো বেতন পাবে না; বেতন পাওয়ার পরে বললো বেতনের টাকায় চলবে না। তো উনাদের সেই অসুস্থতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে সুশাসন দেখতে চাই। একটি শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবাজার। ‘শিল্পে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। দীর্ঘমেয়াদের ঋণ সংগ্রহে ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা আছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত থাকবে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর পরিহার করা হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৮৫৬ কোটি টাকা আবর্তনশীলের ভিত্তিতে পুনর্ব্যবহারের জন্য ছাড় করা হয়েছে।

সরকারের আরো লক্ষ্য রয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে নতুন তিন কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তবে কর্মসংস্থান মানে শুধু চাকরি নয়, যেকোনো একজন মানুষকে ট্রেনিং দিয়ে শিক্ষিত করে কাজ করার মাধ্যমে সে যদি কর্ম করে খাওয়ার সুযোগ পায় সেটাই কর্মসংস্থান। সেখানেও বেকারত্বের অবসান ঘটে। এ সময় তিনি আরও বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলে ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। যেখানে ধান কাটলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দৈনিক পাওয়া যায় এবং তিন বেলা খাবার পাওয়া যায় তারপরেও লোক পাওয়া যায় না, তখন বুঝতে হবে বেকারত্বের কথা যেভাবে বলা হয় তত বেকার নেই। শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থান মানে সবাইকে চাকরি দেয়া এমন বোঝায় না। ১৬ কোটি মানুষকে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। কোন দেশ আছে যারা এত লোককে চাকরি দিতে পারবে? নিজের কর্ম নিজেকেই সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি সেই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাকরি ছাড়াও নানাভাবে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তখন দেশে ৩ কোটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।

দেশে প্রচুর চাল উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমদানির প্রয়োজন নেই। তাই চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে সব ধরনের ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় চিনি শিল্পরক্ষায় চিনির টাক্স বাড়ানো হয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, ‘চিনি খেলে ডায়বেটিস হয়, তাই চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছি।’

এ সময় তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন; ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামানো ও ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। পাশপাশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে চক্রবৃদ্ধি সুদের হিসাবেরও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে সুদের হার অনেক বেশি। ব্যাংকগুলোতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়। আবার খেলাপি ঋণের হিসাব যখন দেওয়া হয়, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ যোগ হয়ে যে ঋণের পরিমাণটা দাঁড়ায়, সেই হিসাব প্রকাশ করা হয়। তাই অঙ্ক অনেক বড় মনে হয়। প্রকৃত ঋণ আসলে অতটা নয়। তবে এক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। ধীরে ধীরে বিষয়গুলো অ্যাডজাস্ট করা হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর আমরা আগেও বলেছি, খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণও শোধ দেওয়ার সুযোগ দেবো। সেই প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন আইনের সংস্কার করা হবে। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে পত্রিকা ও টিভি মালিকদেরই দুষলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিডিয়া মালিকরা কে কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা পরিশোধ করেছেন, সে হিসাব দিতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘খবর নেবেন, পত্রিকার মালিকরা কে কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন। সব ব্যাংক থেকে এই তথ্য বের করেন। যত মিডিয়া আছে, প্রত্যেকে বলবেন, কোন মালিক কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা শোধ দেননি। খেলাপি হয়ে নিজেরা হিসাব করলে আমাকে আর প্রশ্ন করতে হবে না। বেশি বেশি ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণ তুলে ধরে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।’ অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত্রতত্র অনলাইন নিউজ পোর্টাল গজিয়ে উঠছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো নিবন্ধনের ওপর তাগিদ দেন।

ব্যাংকের সুদ নিয়ে ৯/৬ এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেটে ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে সিংঙ্গেল ডিজিটে রাখার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি যেন ব্যাংক সুদের হার সিংঙ্গেল ডিজিটে থাকে। সুদের হার সিংগেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে আমরা কিছু সুবিধাও দিলাম ব্যাংকগুলোকে। কিন্তু তারা সেই সিদ্ধান্ত মানেনি। এবারের বাজেটে এই সুদের হার সিংঙ্গেল ডিজিটে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। যারা এই নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, নিয়ম যেটা থাকবে, সেটা মেনে চলতে হবে। ব্যাংক ঋণে সুদের হার যেন সিংঙ্গেল ডিজিটে হয়, ডাবল ডিজিটে যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে। তাতে বিনিয়োগ বেশি হবে। এ জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটাও করা হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। বর্তমানে দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। গ্রাম হবে আধুনিক শহর। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে। দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন পরিচালনা করা যায় কি-না এ বিষয়ে একটা সমীক্ষা করা হবে। সরকার রেলওয়েকে একটি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে এ খাতের উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়িয়ে প্রাথমিকে ৭৫০ টাকা, মাধ্যমিকে ৮০০ টাকা ও উচ্চশিক্ষায় ৯০০ টাকা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট ২০১৯


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ