Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘুষ দাতা-গ্রহীতা কেউ ছাড় পাবে না

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা তুলে ধরে দৃঢ় কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই ধরা হবে। গ্রহীতা (ঘুষ গ্রহণকারী) এবং দাতা (ঘুষ প্রদানকারী) কেউই ছাড় পাবেন না। ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া, দুটোই অপরাধ। তাই সকল অপরাধীকেই শাস্তি পেতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অর্থশালী-বিত্তশালীদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেভাবেই বিচার করতে হবে। অপরাধ যারা করছে আর অপরাধে যারা উস্কানিদাতা তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এতথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি কোনো ধরণের অপরাধের সঙ্গে আমাদের দলেরও কেউ যদি সম্পৃক্ত থাকে, আমি তাদেরকে ছাড় দিচ্ছি না, ছাড় দেব না। আর অন্য কেউ যদি করে তারা তো ছাড় পাবেই না। আইনের প্রয়োগ ঘর থেকেই শুরু করতে হবে, আমিও তাই করছি। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা সংস্থার কেউ এধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই ব্যবস্থা নেয়াটা অব্যাহত থাকবে। কারণ এটা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের এমপি বেগম রওশন আরা মান্নানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের একজন সেবক মনে করি। প্রধানমন্ত্রিত্ব হলো মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ। আমি সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি সেই সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের কতটা উন্নয়ন করা যায়। দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি কতটা করা যায়। অন্যায় অবিচারের হাত থেকে দেশের মানুষকে কীভাবে রক্ষা করা যায়? তিনি আরো বলেন, শুধু আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই দেখা যায় একটা দেশ যখন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে অগ্রযাত্রা শুরু করে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরণের টাউট বাটপার বা বিভিন্ন ধরণের লোকের সৃষ্টি হয়। তাদের দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সম্ভব নয়; এটা সামাজিকভাবেও করতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতি দমনে জনসচেনতা সৃষ্টির বিষয়টি ইতোমধ্যে গুরুত্ব দিয়েছি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী গোয়েন্দা সংস্থা সবাইকে কাজে লাগাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন মানুষ যেমন শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, অভিভাবক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল পদে কর্মরত সবাইকে নিয়ে; বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি আছে তাদেরকে বলবো- প্রত্যেকটা এলাকায় এলাকায় একটা করে কমিটি করুন। যাতে এধরণের কোন অন্যায়কে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়। তিনি আরো বলেন, আমরা উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করতে হবে। শুধু বাহিনীর (আইন শৃংখলা বাহিনী) উপর নির্ভরশীলতা নয়, মানুষকে সামাজিকভাবে সচেতন করতে হবে। দুর্নীতি আমরা করবো না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না। ঘুষ যে গ্রহণ করবে, ঘুষ যে দেবে- তারা উভয়ই অপরাধী। দুইজনকেই ধরা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জনগণের কল্যাণে এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জনসচেনতামূলক কার্যক্রম জোরদার এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি পরিধি ক্রমান্বয়ে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিশেষ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে একটি সুশাসন ভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি দুদককে ‘স্পর্শকাতর’ সংস্থা উল্লেখ করে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মীদের আরও সচেতন হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা ছাড়া এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তো ঠিক আছে, আমি মনে করি এই সংস্থাকে এখন থেকে সচেতন হতে হবে বা যারা কাজ করবে তাদেরও সচেতন হতে হবে যেন তারা এমন কিছু না করেন যাতে এই ধরনের জনশ্রুতি সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বলতে পারবেন না সবাই একশ’ ভাগ সৎ হবে। ঈদের আগে যখন দেশের বাইরে ছিলাম তখন কিছু বড় বড় (আড়ং-পারসোনাসহ বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভেজাল বিরোধী অভিযান) জায়গায় হাত দেওয়ায় একজন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা (ম্যাজিষ্ট্রেট বদলি) নেওয়া হলো। এটা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। বরং আমি আজকেও বলে দিয়েছি যে, তাকে আবার ওই দায়িত্বেই দিতে হবে। খুব নামি-দামি জায়গা, তাদের যে কোনো খারাপ কিছু হবে না বা থাকবে না যারা ওটার মালিক তারাওতো এই গ্যারান্টি দিতে পারবে না। অথচ যারা ধরতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়। আবার কিছু পত্র-পত্রিকা লেখালেখি শুরু করে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, কে কি বললো তাতে কান দেওয়ার দরকার নেই। তিনি বলেন, সাধারণ ছোট খাটো চোর ধরতে পারবেন, আর বড় অর্থশালী-বিত্তশালী হলেই তাদের হাত দেওয়া যাবে না! তাদের অপরাধ অপরাধ না, এটা তো হয় না? আমার চোখে অপরাধী ভোটবড় যেই সে অপরাধীই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব।
জাতীয় পার্টির এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল পরিকল্পিত। ওই দুভিক্ষের ঘটনার যিনি মুল হোতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার তাকে খাদ্যমন্ত্রী করেছিল। তার পুত্র বিএনপির এখনও বড় নেতা।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে ধানসহ সকল ধরণের উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পায় এবং মধ্য স্বত্বভোগীরা যাতে কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে লক্ষ্যে সরকার চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ক্রয় করছে। বাজারদর বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের প্রশ্নের জবাবে দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের আধুনিকীকায়নও গতিশীল করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে সারাদেশে বিচারাধীন মামলার পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। মামলা দ্রæত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ও দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।



 

Show all comments
  • Abdul Hakim ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
    ঘুষ দাতা একান্তই বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয় আর গ্রহিতা সরকার এবং জনগনের প্রতি অবাধ্য হয়েই গ্রহন করে। দুটি ব্যাপার সম্পুর্ন ভিন্ন। যদি কোনদিন এদেশে ঘুষ বন্ধে কঠোর বা নিষ্ঠুর কোন আইন প্রনয়ন এবং প্রয়োগ করা হয় সেদিন থেকে সরকারী চাকুরী করার জন্য কাউকে এদেশে পাওয়া যাবেন। যেমন ধান কাটার জন্য কামলা পাওয়া যায়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Riyadul Islam Saki ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৪৮ এএম says : 0
    Islamic Ayineo etay bole
    Total Reply(0) Reply
  • Shihab Ahmed ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৪৮ এএম says : 0
    তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Murad ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৪৯ এএম says : 0
    ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা সব লোকই তো আপনাদের নিয়ন্ত্রনে।।। কারো তো এখন শাস্তি হয়নি। বরং ঘুষের টাকা সরিয়ে ফেলার জন্য তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।।। কারন, কর্ম ক্ষেত্রে থাকলে টাকা সরাতে অসুবিধা হবে।।। তাই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shariful Islam ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৫১ এএম says : 0
    ঘুষ গ্রহিতারা সব মঙ্গল গ্রহে থাকে।তাই তাদের ধরা যায় না। সব online kore den.যাতে সরকারি অফিসে কারো যেতে না হয়।complain er jonno control room chalu koren.dekhi ঘুষ কোথায় পায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ১৩ জুন, ২০১৯, ২:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ