নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার, অনেক দিন থেকেই বিশ্বসেরাদের একজন। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টানা তৃতীয়বারের বিশ্বকাপে খেলছেন সেরা অলরাউন্ডারের মুকুট নিয়ে। এমনিতে প্রমাণের কিছু ছিল না তার। তবে একটি জায়গায় ঠিকই কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সময়ের সেরা এই ক্রিকেটারকে। বোঝাতে হয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। প্রমাণ করতে হয়েছে নিজেকে। শুরুর সাফল্য সহজ করে দিয়েছে পথচলা। তিন নম্বরে উঠে আসার পর থেকে যে সাফল্য যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই পথ ধরে অনেক দূর এগোতে চান বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। তবে এখনই তৃপ্ত হচ্ছেন না সাকিব আল হাসান।
তিন নম্বরে নেমেই গতপরশু কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ বলে ১২১ রানের ইনিংস খেলেছেন সাকিব। বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। তিনে খেলেই এবারের বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচে সাকিব করেছেন ৭৫ ও ৬৪। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনিই। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ শেষে ২৬০ রান সাকিবের, ২১৫ রান নিয়ে দুইয়ে জেসন রয়।
ক্যারিয়ার জুড়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করেছেন সাকিব আল হাসান। কখনোবা চারে। গত কয়েকটি সিরিজ থেকে নিজের ইচ্ছাতেই তিন নম্বরে নামছেন তিনি। তিনে নেমে পাচ্ছেন চোখ ধাঁধানো সাফল্য। তিনে সাকিবের নিয়মিত খেলার শুরু গত বছর। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে বিচ্ছিন্নভাবে দুটি ম্যাচে তিনে খেলে ভালো করতে পারেননি। গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে ব্যাট করতে শুরু করেন তিনে। সেই টুর্নামেন্টে মোটামুটি সফল হন। পরে ভালো করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। কিন্তু গত এশিয়া কাপের সময় চোট নিয়ে ছিটকে যাওয়ার পর আবার জায়গা হারান তিনে। দল পরখ করে দেখে অন্যদের। সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে আবার তিনে ফেরেন সাকিব। যথারীতি সফল এবারও। তিন ইনিংসের দুটিতেই করেন অপরাজিত ফিফটি। এরপর বিশ্বকাপের এই সাফল্য। সব মিলিয়ে তিনে যতটুকু খেলেছেন, তার রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ৮৩১ রান করেছেন ৫১.৯৩ গড়ে, এই পজিশনে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা গড়। ১৮ ইনিংসে ৮টি হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি এই সেঞ্চুরি, ১২১ রানের ইনিংসটি তিন নম্বরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের।
কিন্তু বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বড় ইনিংস ছিল না একটা লম্বা সময় ধরে। খরা ঘুচেছিল কার্ডিফে, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি করে। সেই কার্ডিফেই এবার সাকিব আল হাসান পেলেন প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির স্বাদ। ইংল্যান্ডের রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশ খুব বড় চ্যালেঞ্জ জানাতে না পারলেও সাকিব করেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। খেলেছেন ১১৯ বলে ১২১ রানের ইনিংস। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরের রেকর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেই ম্যাচে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দলের অবিস্মরণীয় জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সাকিব। তবে সেবার সঙ্গী পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহকে, যার ব্যাট থেকেও এসেছিল সেঞ্চুরি। এবার সেই রিয়াদকে সাক্ষী রেখেই দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে তুলে নিলেন শতক।
এবারের আগে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন সাকিব। ২১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল ৬৩, তার মাপের একজন ক্রিকেটারের পাশে যা বড্ড বেমানান। এবার প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই স্কোর ছাড়িয়ে খেললেন ৭৫ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এলো ৬৪ রান। এবার সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটির পর সাকিব ফিরে তাকালেন তিন নম্বরে নামার সিদ্ধান্তের শুরুর দিনগুলোয়। জানালেন, নিজে সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পর বোঝাতে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের অনেককে, ‘হ্যাঁ, আমারই ছিল (তিনের সিদ্ধান্ত)। সবাইকে বোঝাতে হয়েছে, সবাইকে। কারণ একটি ম্যাচে রান না করলেও তারা বলত যে পাঁচ নম্বরেই আমার খেলা ভালো। তিন নম্বরে খেলতে তাই অনেককে রাজি করাতে হয়েছে আমাকে।’
ব্যাট কথা বলতে শুরু হওয়ার পর অবশ্য কথায় আর কাউকে বোঝাতে হচ্ছে না। বরং তিনি উপভোগ করছেন এই নতুন চ্যালেঞ্জে, সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের সাফল্য। এখনই সন্তুষ্ট না হয়ে দলে অবদান রাখতে চান আরও বেশি, ‘এটা একটু আলাদা, ভিন্ন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে আমি এই মূহুর্তে উপভোগ করছি। আমার কাছে মনে হয়েছিল, আমার জন্য আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ এটি। ব্যাটে আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ। তবে বলতেই হবে, এটা কেবলই শুরু। এই টুর্নামেন্টে এবং এরপরও আরও অনেক ম্যাচ আছে। আরও অবদান রেখে যেতে হবে। ব্যাটে-বলে আমি যতটা সম্ভব, আরও বেশি অবদান রাখতে চাই।’
তিন নম্বরে উঠে আসার পর থেকেই অসাধারণ ধারাবাহিকতা সাকিবের ব্যাটে। এই ম্যাচের আগে ১৭ ইনিংসে ফিফটি পেরিয়েছিলেন ৮ বার। তবে সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের কাছে দলের দাবি থাকে বড় ইনিংস। সেই দাবিও মেটালেন এবার। তিন নম্বরে বাংলাদেশের মাত্র পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি এটি। দুটি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, একটি জুনায়েদ সিদ্দিক। আর সাকিবের ইনিংসের আগে তিনে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড ছিল সৌম্য সরকারের, গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ১১৭। শতক করে ৬ হাজার ওয়ানডে রানের পথেও এগোচ্ছিলেন সাকিব। তবে বেন স্টোকসের ইয়র্কারে তাকে থামতে হয়েছে একটু দূরে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার ছুঁতে তার প্রয়োজন আর ২৩ রান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।