নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
৩৭৩/৩, ৩৫৯/৪, ৩৪১/৭, ৩৫১/৯, ৩১১/৮, ৩৩৪/৯- ইংল্যান্ডের টানা ৬ ম্যাচের দলীয় সংগ্রহ। একটি দক্ষিন আফ্রিকা, বাদবাকি সবক’টিই হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই টালিতে গতকাল যোগ হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৮৬/৬! ব্যাস, হয়ে গেল বিশ্ব রেকর্ড! ওয়ানডেতে টানা ৭ ম্যাচে তিনশ’র্ধো রান সংগ্রহকারী আর কোন দলই যে নেই ক্রিকেট ইতিহাসে! এর আগে রেকর্ড কুক্ষিগত করে রেখেছিল তাদেরই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ সালে টানা ছয় ম্যাচে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়েছিল অজিরা।
সামনে বিশাল লক্ষ্য। জিততে হলে বিশ্বকাপে রান তাড়ার সব রেকর্ড গুড়িয়ে দিতে হতো বাংলাদেশকে। তাতে যেটুকু নিজেদের নিবেদন রাখা দরকার তা দেখা গেল কেবল সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। খটখটে ব্যাটিং উকেটে তামিম-সৌম্যরা ভালো শুরু এনে দিতে না পারলেও বাংলাদেশ ম্যাচে ছিল সাকিব-মুশফিকের ১০৬ রানের জুটির কল্যাণেই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি সাকিবের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। অনিয়মিত বোলার বেন স্টোকসের ¯েøায়ার-ইয়র্কারে বোল্ড হবার আগে ১১৯ বলে ১২ চার ও এক ছক্কায় ১২১ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের গড়া ৩৮৭ রানের পহাড় টপকাতে গিয়ে বাংলাদেশ থামে ৭ বল হাতে রেখে ২৮০ রানে। টাইগারদের বরণ করতে হয় ১০৬ রানের বিশাল পরাজয়।
এতদিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই তালিকায় এবার নাম উঠলো সাকিবের নামও। ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৯৫ বলের শতকটি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শতকটি ওয়ানডেতে ৮ম। বাকিদের আসা যাওয়ার মিছিলে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন মুশফিক (৪৪), যা দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। দিনের বাকিটা সময় জুড়েই ছিল ইংলিশ হাইলাইটস। অধিকাংশ টাইগার ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে।
কার্ডিফে শুরুটা হয়েছিল জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টোর ১২৮ রানের জুটিতে ভর করে। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৫ ওভারে ইংল্যান্ড পেরিয়ে যায় একশ। রয় তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতক। থেমেছেন মিরাজের বলে টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে দেড়শ’ পেরুনোর পরেই। তবে থামেনি ইংল্যান্ড। সাকিব, মাশরাফি, মিরাজ, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজ, মোসাদ্দেকদের তুলোধুনো করে রানের পাহাড় গড়ে মরগ্যানের দল। খরুচে ছিলেন সবাই। আগের দুই ম্যাচে দারুণ বোলিং করা সাকিব ১০ ওভারে ৭১ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য, মাশরাফি তার কোটা পূরণ করে ৬৮ রানে নিয়েছেন এক উইকেট, সাইফউদ্দিন দুই উইকেট পেলেও হতে পারেননি বিধ্বংসী, তুলতে পারেননি গতির ঝড়, ৯ ওভারে দিয়েছেন ৭৮ রান, সবেচেয়ে বড় তোপ গেছে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের কান্ডারী মুস্তাফিজের উপর দিয়ে। ৯ ওভারে এক উইকেট নিয়ে কাটার মাস্টার দিয়েছেন ৭৫ রান। সেই হিসেবে অনেকটা মিতব্যয়ী ছিলেন মিরাজ। ১০ ওভার পূর্ণ করে দুই উইকেট নেয়া এই স্পিন অলরাউন্ডারের খরচা ৬৭ রান।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে বেঙ্গালুরুতে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩৩৮ রান করেছিলো তারা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লো স্বাগতিকরা। এর আগে ঢাকায় ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত করেছিলো ৩৭০। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি রান আছে কেবল একটি। ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডই ৪ উইকেটে করেছিল ৩৯১ রান। বিশ্বকাপে এত বড় রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড কোন দলেরই নেই। ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের দেয়া ৩২৭ রান তাড়া করে জিতে আয়ারল্যান্ড। এখন পর্যন্ত যা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড।
তবে প্রথম ৫ ওভারে কেউ কি ভেবেছিল ম্যাচের চিত্রটা এমন পাল্টি খাবে? দুই ম্যাচ হারার পর এবার টস জিতেছিলেন মাশরাফি মুর্তজা। তবে আগে বোলিংয়ের কাক্সিক্ষত সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি দল। তবে খড়খড়ে মরা উইকেটে নির্বিষ বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়ায় ম্যাচ হাতছাড়ার প্রেক্ষাপট তৈরী হয় প্রথম ইনিংসেই। যদিও বোলিংয়ের শুরুটা সাকিব-মাশরাফিদের হাত ধরে হয়েছিল স্বস্তিরই। তবে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে মুস্তাফিজ-মিরাজ-সাইফদের চোখের পানি নাকের জল এক করে ছাড়েন রয়, বেয়ারস্টো, মরগ্যানরা।
১৯ ওভারে ১২৮ রান তুলে ফেলা জুটি ভাঙেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মাশরাফি। ততক্ষণে রয়ের ব্যাট আরো অপ্রতিরোধ্য। ৯২ বলে রয় স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক, ৭৯ ওয়ানডেতে তার নবম সেঞ্চুরি। মাইলফলকের পর বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন আরও। সাকিবকে টানা তিন বলে মারেন দুই চার এক ছক্কা, মিরাজকে টানা তিন ছক্কায় দেড়শ পেরিয়ে যান ১২০ বলে। টানা চতুর্থ ছক্কার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মিরাজকেই উইকেট দিয়ে আসেন রয়। তবে ইংল্যান্ডের রানের গতি ধরে রাখেন বাটলার। ব্যাটিং অর্ডারে চারে প্রমোশন পেয়ে তোলেন ঝড়। চতুর্থ উইকেটে বাটলার ও ওয়েন মরগান জুটিতে ৯৫ রান আসে ৬৫ বলে। ৪৪ বলে ৬৪ করে বাটলার সাইফ উদ্দিনের বলে সীমানায় ধরা পড়েছেন সৌম্য সরকারের হাতে। মিরাজের বলেই সৌম্যই নিয়েছেন ৩৩ বলে ৩৫ করা মরগ্যানের ক্যাচ।
এই দুজনের বিদায়ে একটু ভাটার টান এসেছিল রানের গতিতে। শেষ দিকে আবার তান্ডব চালান ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট। মাত্র ১৭ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন। ৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন প্লাঙ্কেট, ৮ বলে ১৮ ওকস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।