Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘হ্যাটট্রিকে’ চোখ বাংলাদেশের

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

‘যদি খেলা হয়’- প্রথমেই অনিশ্চিত এক বাক্যে লেখা শুরু করার মতো কষ্টসাধ্য কাজটি করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের বেরসিক আবহাওয়ার ‘কল্যাণে’। বিশ্বকাপে (রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত) মাঠেই গড়াতে পারেনি গতকালের পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য প্রশ্নটি আরো বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে রবিন লিগের এই বিশ্বকাপে আজ কার্ডিফে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড বলেই। বিশ্বকাপে যে দলটিকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হেরেছে সেই ২০০৭ সালে। আজ কার্ডিফে জয়ের হ্যাটট্রিকই লক্ষ্য মাশরাফি-সাকিবদের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতিগুলোর একটি। বৃষ্টি না হলে সেই সুখের ভেলায় বাংলাদেশ আরেকবার ভাসাতে পারে লাল-সবুজের পতাকা।
স্টিভ রোডসের জন্য কাজটা বড্ড কঠিন। হাজার হলেও মাতৃভূমি বলে কথা, একটা আলাদা টান তো থাকেই। তবে ইংলিশ এই কোচ পেশাদার বটে। আগেই জানিয়েছেন, আপাদমস্তক ইংলিশ হলেও বাংলাদেশের হয়ে এবার হারাতে চাইবেন ইংল্যান্ডকে। মাশরাফিদের জন্য কাজটা হয়তো কিছুটা সহজ হয়ে যাচ্ছে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের রোডসের চেয়ে ভালো আর কে-ই বা চিনবেন! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের রেকর্ডটাও ভালো। টানা দুটি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর মধুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই আজ কার্ডিফে নামবে দল। বাংলাদেশ কী পারবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’ করতে?

বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয়ের রেকর্ডটা সেই ২০০৭ সালের। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৪ উইকেটে। ১৪৩ রানে অলআউট হওয়া সে ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট ফেলে দেওয়াটাও কম কৃতিত্বের ছিল না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংলিশদের সুখস্মৃতি বলতে সেটিই। এরপরের ইতিহাস সবটাই বাংলাদেশের পক্ষে। ২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে শফিউল-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং স্ট্রসদের তো বটেই, পুরো ক্রিকেটবিশ্বকেই ভড়কে দিয়েছিল। ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১৬৯। ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ তখনো জয় থেকে ৫৭ রান দূরে। ওই অবস্থায় বাংলাদেশের নিশ্চিত হারই দেখছিলেন সবাই। এমনকি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম খালি করে দর্শকেরাও বাড়ির পথ ধরেছিলেন। সে ম্যাচটিই বাংলাদেশ জিতেছিল শফিউলের দারুণ ব্যাটিংয়ে। আর ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের কাছে হেরে তো বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা। সেই ম্যাচের পর থেকেই বাংলাদেশ এক অন্য দল।
কার্ডিফে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ড। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের মাঠটিও বড় পয়া বাংলাদেশের জন্য। এই মাঠে আছে বাংলাদেশের দারুণ দুটি জয়ের স্মৃতি। প্রথমটি ২০০৫ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়টি। দ্বিতীয়টি ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর সেই ২৪৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। আরেকটি মজার তথ্য। কার্ডিফে দুটি ম্যাচই এসেছিল জুন মাসে। কাকতালীয় ব্যাপারগুলো কিন্তু খেলাধুলায় খুব আলোচিত হয়। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিও সেই জুন মাসেই।

টপ ফেবারিট তকমা নিয়েই এবার বিশ্বকাপে খেলছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। মরগানদের সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বরং শক্তিমত্তায় বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়েই। কিন্তু তবুও আশা ঘরবসতি। দক্ষিণ আফ্রিকাও তো বাংলাদেশের চেয়ে কত শক্তিশালী ছিল! সেই দলটিতে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করায় বাংলাদেশের প্রত্যাশার পারদ এ বিশ্বকাপে সবচেয়ে উঁচুতে। এ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের দল সবচেয়ে অভিজ্ঞ। পাশাপাশি সা¤প্রতিক পারফরম্যান্সটাও আশা জাগানিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২ উইকেটে পরাজিত হলেও ২৪৪ রানের স্বল্প পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ লড়ে গিয়েছে দারুণভাবে।
দ্বিতীয় ম্যাচে ভাগ্যটা যেন সহায় ছিল না বাংলাদেশের। এছাড়া উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের কিপিংয়ে ভুল আর ব্যাটিংয়ে রান আউটের শিকার হওয়া যেন বদলে দিয়েছিল ম্যাচের মোড়। তবে অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটারের সামর্থ্য সবারই জানা। বাংলাদেশ ভুগেছে গতির ঝড় তুলতে পারা এমন একজন পেসারের অভাবেও। রুবেল হোসেনের বলের গতি অন্যদের চাইতে বেশি হলেও প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না তিনি। কার্ডিফে গত দুই ম্যাচে পেসাররা ভালো করায় এ ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে তার। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে অবদান রাখার পাশাপাশি বল হাতে জোড়া উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তিনি দলে থাকলে কমতে পারে একজন ব্যাটসম্যান।

ইংল্যান্ডেরও একই অবস্থা। বাংলাদেশের মতো এটিও তাদের তৃতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল তারা। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড। লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ছন্দে নেই। গত ম্যাচে দিয়েছিলেন ৫ ওভারে ৪৩ রান। নিতে পারেননি কোনো উইকেট। এছাড়া কাঁধের চোটও রয়েছে। তার বদলে একাদশে ঢুকতে পারেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। তবে স্বাগতিক দল ইংল্যান্ডকে হারানোটা কঠিনই হবে। ব্যাটিংয়ে জেসন রয়, জো রুট আর ইয়ন মরগানদের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশের বোলাররা। বেশ লম্বা ব্যাটিং অর্ডার তাদের। তামিম ইকবালদের মুখোমুখি হতে হবে জোফরা আর্চরের গতি আর সুইংয়ের। অলরাউন্ডার বেন স্টোকস একাই পারেন ম্যাচের রং বদলে দিতে। তবে ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাই কার্ডিফে দেখা যাবে এক আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশকে।

 



 

Show all comments
  • Subhajit Banerjee ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
    যদি জেতার জন্য খেলতে হয় তাহলে বাংলাদেশিরা বেশি করে রোহিত শর্মার ইনিংস টা দেখুক । ১৪৪ বলে ১২২ করেছে । বাংলাদেশকে সহজে উইকেট দিয়ে আসলে চলবে না । লিটন কে মিঠুনের জায়গায় খেলানো হোক । সৌম্য দায়িত্ত্ব নিক সাকিবের সাথে । প্রথম ৩০ ওভারে এক উইকেট তাহলেই বাংলাদেশ জিতবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • msIqbal ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    অনেক আবেগ দেখানো হয়েছে, আর না। বিশ্বকাপ শেষের অপেক্ষা না করে মাশরাফিকে এখনই বিদায় বলাটা দেশ ও দলের জন্য মঙ্গল! শুধুমাত্র ভালো অধিনায়কত্বের কারণে ১১জন খেলোয়াড়ের বিপরীতে ১০ জনকে নিয়ে খেলার কোন মানে হয় না। মাশরাফি তো এই টুর্নামেন্টের পর আর খেলছেন না। মাশরাফির অধিনায়কত্ব পাব না জন্য আমরা কি তখন আর কোন ম্যাচ জিতবো না? সুর থাকতেই গান ছাড়া ভালো, এমপি হবার পর মাশরাফির এই বোধ আর নাও কাজ করতে পারে। তাই খারাপ লাগলেও বোর্ডকে আজ এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবারের আসরে আমাদের যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে, আবেগ আর অবহেলার কারনে সেটি হারানোটা হবে দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল!
    Total Reply(0) Reply
  • রুস্তম ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    ইংল্যান্ডের ম্যাচ মানেই রানের ছড়াছড়ি। গত ম্যাচে তামিম মাহমুদুল্লাহ যেরকম বোরিং ব্যাটিং করেছে, সেরকম ব্যাটিং নিয়ে জয় আশা করা যায় না। স্ট্রাইক রেটের দিকে নজর রেখেই খেলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohiuddin ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    ভাই আপনারা পারেনও । আমরা যদি সম্মানজনক হারও হারি তবুও খুশি থাকব । আস্তবাতা চিন্তা করা উচিত । অদের ৮/৯ জন আল্রাউন্ডার আর আমাদের ?! মাশ ফর্মে নেই , নিজের ১০ over কৌটা পুড়ন করতে পারেনা । তামিম ও তেমন সুবিধা জনক মণে হচ্ছে না
    Total Reply(0) Reply
  • Md Younos ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    ম্যাশকে এটাও বুঝতে হবে সে অধিনায়ক ও খেলোয়াড়। তাই অধিনায়কত্বের পাশাপাশি খেলোয়াড় হিসেবেও দ্বায়িত্ব আছে। আর খেলোয়াড় হিসেবেও পারফর্ম করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রিদওয়ান বিবেক ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    ইংল্যান্ড তাদের শেষ ম্যাচের পর ৫ দিন সময় পেয়েছে নিজেদের তৈরি করতে।বাংলাদেশ পাবে মাত্র ২ দিন।তাই বাংলাদেশ একাদশে কোন পরিবর্তন না আনলেই বুদ্ধিমানের কাজ করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hijama Helpline ৮ জুন, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
    বলা যায়না, জয় পেয়ে যেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ ক্রিকেট

১৬ জুলাই, ২০১৯
১৫ জুলাই, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ