Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ আনন্দে মেতেছে শহর গ্রাম

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঈদের ক’টাদিন বেশ আনন্দে কেটেছে রাজশাহীর মানুষের। আবহাওয়ায় ছিল রোদবৃষ্টির খেলা। ফলে গরম ছিল খানিকটা নরম। কিশোর তরুন যুবকরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে। স্বজন বন্ধু বান্ধবদের বাসায় গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশপাশি ছিল খাবারের আয়োজন। ধনী গরিব সবার ঘরে ছিল ঈদের আমেজ। যে যেভাবে পেরেছে ঈদের খুশী ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেছে। ঈদের দিন এবাড়ি ওবাড়ি গেলেও পরের দিন মুক্ত বিহঙ্গের মত ভিড় জমিয়েছে নগরীর বিনোদন কেন্দ্র আর মরা পদ্মার বিশাল বালুচরে। মুখরিত ছিল পদ্মা তীরের বিনোদন স্পটগুলো। বাধের ওপর ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউ নৌকায় ভেসেছে ক্ষীন ধারায় বয়ে যাওয়া পদ্মার বুকে।

নগরীর দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। সেই ফাঁকা রাস্তায় মটর সাইকেল, প্রাইভেট কার নিয়ে তারুন্যের দাপাদাপি কম নয়। কার মাইক্রেবাসে উচ্চ ভলিউমে গান বাজিয়ে ছুটে চলা। এমন আনন্দ থেকে বাদ যায়নি অন্যরাও। মিনি ট্রাকে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়িয়েছে সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত। এ এক অন্যরকম আনন্দ।
শিক্ষানগরী রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ায় শহর খানিকটা ফাঁকা হলেও পরের দিন শহরতলী থেকে হাজারো মানুষ ছুটে এসেছিল নগরীর বিনোদন স্পটগুলোয়। তারাই মুখরিত করে রাখে। পদ্মা তীরের ফাষ্টফুডের দোকান ছাড়াও ভাল ব্যবসা করেছে চটপটি ফুচকা পেয়ারা বাদাম আর বারোভাজা ওয়ালারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এবার সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল ফুচকার। রাস্তা কিংবা নদীর ধারে চেয়ার পেতে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়েছে। গল্পে গল্পে মেতে উঠেছে।

পেশাগত কারনে নগরীর যারা বাইরে থাকেন। তারাও স্বজনদের সাথে ঈদ করতে এসেছেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মেতে উঠেছেন রকমারি গল্প আড্ডায়। আনন্দে উল্লসিত হয়েছেন। আবার বেদনায় সমব্যথী হয়েছেন। ছিল খুনসুটি। রাজশাহীর ভাষায় যাকে বলে লাড়া লাড়ি। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে বরাবরের মত ঈদের পরেরদিন বিকেলে বসেছিল প্রাক্তন ছাত্রদের মিলন মেলা। স্মৃতিচারন, সঙ্গীত পরিবেশন, মিষ্টিমুখ করানো আর র‌্যাফেল ড্র পুরস্কার নিয়ে বিজয়ীদের হাসি। এবারের ঈদ আনন্দে বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ঘরে বাইরে সবাই মিলে উপভোগ করেছে। বাড়িতে স্বজন এমনকি যারা মেহমান হয়ে এসেছিলেন তাদের চোখও ছিল টিভির পর্দায়। আবার অনেকেই বাইরে কোথাও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে একসাথে বসে ক্রিকেট খেলা দেখেছে। আনন্দ করেছে। টিভি চ্যানেল গুলোয় ভাড়ামো অনুষ্ঠানের বদলে ক্রিকেট খেলা দেখা অনেকের কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে।

এতো গেল শহুরে জীবনের ঈদ আনন্দের কথা। গাঁও গেরামের মানুষও ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছিল। যদিও কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য ধান শাকস্বব্জি আম, লিচু নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছে মানুষ। কৃষি অর্থনীতিতে এখন ভাটার টান। যার প্রভাব পড়েছে ঈদের কেনাকাটায়। তারপরও চিরচেনা টানাপোড়েনের মধ্যে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তাছাড়া ঈদের ছুটিতে গাঁয়ে ফিরেছে শহর। এসব মানুষের পদচারনায় গ্রাম যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শহরে থাকা স্বজনদের কাছে পেয়ে গ্রামের দাদাদাদি নানা নানি খালা ফুপু চাচারা দারুন খুশী। বছরের এ কটা দিনতো একটু কাছে পাওয়া। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা। যাকে বলে রক্তের বাঁধন। প্রযুক্তির কল্যানে সব সময় যোগাযোগ হলেও স্বপরিবারে এমনতো আর পাওয়া যায়না। ওরা আসবে বলে গ্রামের স্বজনরা যতœ করে রাখে পুকুরে মাছ শাকস্বব্জী দেশি মুরগী ডিমসহ আরো কত কি। পুকুরে গোসল, মাছ ধরা, বিশাল লাউ কুমড়োর মাচা, শসা পটলের ক্ষেত। একেবারে টস টসে সবুজ কিংবা লাল রংয়ের শাকস্বব্জির ক্ষেতে দাড়িয়ে সেলফি তুলেছে। এখনতো আম, জাম, লিচুর ভরা মওসুম। থোকায় থোকায় গোলাপী আভার লিচু আর গাছে গাছে পাক ধরা আম। একেবারে গাছের তলায় গিয়ে আম লিচুর স্বাদ নিতে ভুল করেনি কেউ। একেবারে টাটকা আম লিচু জামের স্বাদই যে অন্যরকম। কেউ কেউ একেবারে গাছে বসে এসব মনের সুখে খেয়েছে। বড়রা গ্রামে ফেরা বন্ধুদের সাথে দেখা করেছে খোঁজ খবর নিয়েছে। আর এবাড়ি ওবাড়ি দাওয়াততো ছিলই। ঈদের পরদিন থেকেই শহর গ্রামে বেজেছে বিয়ের সানাই। এ সময় সব আত্মীয় স্বজন একসাথে থাকে বলে বিয়ে শাদীর ধুম পড়ে যায়। ঈদ আনন্দের সাথে বিয়ের আনন্দ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
শহরে কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে দুষিত বাতাসে ফুসফুসটাও দুষিত হয়ে গিয়েছিল। গ্রামে এসে সবুজের শ্যামলীমায় আর নির্মল বাতাসে দুষিত হয়ে যাওয়া ফুসফুসটা যেন রিচার্জ হয়ে গেছে। নিজেদের বেশ ফুরফুরে লেগেছে। এরিমধ্যে কোথাও আবার বিদায়ের করুন সুর বেজে উঠেছে। কর্মজীবী মানুষ ঈদশেষে ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামের স্বজনরা বলছেন যেতে নাহি দেব হায় ...। বিদায় নেবার সময় অশ্রæসজল নয়নে বলছেন আবার হবে গো দেখা। এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো। রেলস্টেশন আর বাস টার্মিণাল গুলোয় কর্মস্থলে ফেরা মানুষের দেখা যায়। যাবার সময় অধিকাংশের হাতে ছিল আম লিচুর ঝুড়ি। বাস ও ট্রেন কর্তপক্ষ জানায় আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত মোটামুটি ভাবে তাদের টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। ফিরতি বাস ট্রেনে যাত্রী কম আসছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ