নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। জো রুট আর জস বাটলারের সেঞ্চুরিতে সে পথে ভালোই এগোচ্ছিল ইংল্যান্ড। শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ৫৫ রান। এই সময়ই ওয়াহাব রিয়াজ নামক জাদুর কাঠিতে ভোজভাজির মতো পাল্টো গেল পাকিস্তান। পর পর দুই বলে নিলেন জোড়া উইকেট। দল যেখানে সবেছিল ক্যাচ আর ফিল্ডিং মিসের মহড়ায়, সেখানেও এই পেস অলরাউন্ডার হাঁটলেন উল্টো পথে। দুর্দান্ত দুটি ক্যাচে ফেরালেন ভয়ঙ্কর বাটলার আর জোফরা আর্চারকে। শেষ ওভারে এসে তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই ১৪ রানের জয় পেল ১৯৯২ বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
গতকাল নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৩৪৮ রান তোলে ৮ উইকেট হারানো পাকিস্তান। এক রানের জন্য বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ স্পর্শ করতে পারেনি তারা। তবে এবারের আসরে এপর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ। আগের সেরাটি ছিল একদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা বাংলাদেশের ৬ উইকেটে ৩৩০। জবাবে শেষ পর্যন্ত খেলেও ৩৩৪ রানেই থামে ৯ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড।
আগের ম্যাচে উইন্ডিজ পেসারদের গতি সামলাতে না পেরে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা এদিন শুরু থেকে সাবলীল ব্যাট করছে। তিন ফিফটিতে ঘুরে দাঁড়াল আগের ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়া পাকিস্তান। মোহাম্মদ হাফিজ, বাবর আজম ও সরফরাজ আহমেদের ব্যাটে চড়ে গড়ল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ইমাম-উল-হক ও ফখর জামানের ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালো করে পাকিস্তান। যথারীতি আক্রমণাত্মক ছিলেন ফখর। দেখেশুনে খেলছিলেন ইমাম। কঠিন সময় পার করে দিয়ে অফ স্পিনার মইন আলির বলে ফিরেন তারা। শুরু থেকে সাবলীল ছিলেন বাবর। একটু নড়বড়ে ছিলেন হাফিজ। তবে ধীরে ধীরে জমে উঠে তৃতীয় উইকেট জুটি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন বাবর। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন মঈন।
সরফরাজের সঙ্গে আরেকটি ভালো জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন হাফিজ। আট চার ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করা হাফিজকে থামিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন মার্ক উড। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকেননি সরফরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ক ৪৪ বলে ৫ চারে করেন ৫৫ রান। শেষের দিকে নিয়মিত উইকেট হারালেও সবার ছোট ছোট অবদানে ৩৪৮ পর্যন্ত যায় পাকিস্তান।
জবাবে আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করা ইংল্যান্ড জেসন রয়কে (৮) ফিরিয়ে প্রথমেই পড়ে বিপদে। অধিনায়ক এউইন মরগ্যানকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা কাটিয়েছিলেন জনি বেয়ারস্টো। তবে ৩১ বলে ৩২ রান কার বোয়ারস্টো ফিরে গেলে বিপদ বাড়ে স্বাগতিকদের।
মরগ্যানকেও পাওয়া যায়নি নিজের স্বভাবে। মোহাম্মদ হাফিজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৯ রান। এরপর প্রথম ম্যাচে দূর্দান্ত খেলা বেন স্টোকস (১৩) শোয়েব মালিকের বলে বিদায় নিলে চাপ বাড়ে ইংলিশ শিবিরে।
সেই সময়ই রুট-বাটলারের প্রতিরোধ। চমৎকার ব্যাটিংয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৩০ রান যোগ করে জয়ের স্বপ্ন দেখান তারা। এবারের বিশ্বকাপ প্রথম সেঞ্চুরিও দেখে ফেলে রুটের সৌজন্যে। সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে থামেন ১০৭ রানে। ১০৪ বলের ইনিংসটি ১০টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো।
তার আউটের পর ইংল্যান্ডকে পথে রাখেন বাটলার। রুটের পথে হেঁটে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এই উইকেটরক্ষকও তুলে নেন সেঞ্চুরি। গত কয়েক বছর ধরে ছন্দহীন থাকা বাটলার পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। যদিও শতক পূরণ করার পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ৭৬ বলে ৯ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় খেলে যান তিনি ১০৩ রানের কার্যকরী ইনিংস। তার আউটের পর মঈন আলী (১৯), ক্রিস ওকস (২১) ও মার্ক উড (১০*) চেষ্টা করলেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ওয়াহাব রিয়াজ ৮২ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট শিকার মোহাম্মদ আমির ও শাদাব খানের। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন হাফিজ ও মালিক।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবেছিল পাকিস্তান। সেই দলটিই এবারের বিশ্বকাপের ফেভারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান উৎসব করে পেয়েছে প্রথম জয়। তাও এমন একটি দলের বিপক্ষে যারা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে দেশের মাটিতে রান তাড়ায় কোনো ম্যাচ হারেনি। অন্যদিকে ওয়ানডেতে টানা ১১ ম্যাচে হারার পর জয়ের দেখা পেল পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ইমাম ৪৪, ফখর ৩৬, বাবর ৬৩, হাফিজ ৮৪, সরফরাজ ৫৫, আসিফ ১৪, মালিক ৮, ওয়াহাব ৪, হাসান ১০*, শাদাব ১০*; ওকস ৩/৭১, আর্চার ০/৭৯, মঈন ৩/৫০, উড ২/৫৩, স্টোকস ০/৪৩, রশিদ ০/৪৩)।
ইংল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (রয় ৮, বেয়ারস্টো ৩২, রুট ১০৭, মরগ্যান ৯, স্টোকস ১৩, বাটলার ১০৩, মইন ১৯, ওকস ২১, আর্চার ১, রশিদ ৩*, উড ১০*; শাদাব ২/৬৩, আমির ২/৬৭, ওয়াহাব ৩/৮২, হাসান ০/৬৬, হাফিজ ১/৪৩, মালিক ১/১০)।
ফল : পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মোহাম্মদ হাফিজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।