Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ি অঞ্চলের ঈদ উৎসব

পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতির সেতুবন্ধন

রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে উৎসব। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফেতর। আর পার্বত্যাঞ্চলের ঈদ আনন্দ সমতলের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ঈদোৎসবে শহরের তুলনায় পাহাড়ের আনন্দ একটু বৈচিত্র্য, বিভিন্ন ধরনের অনুভুতি প্রকাশ প্রায়। যেমন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন পুরোদমে ঈদের আনন্দ যেভাবে খুশি মনে উপভোগ করে, তেমনি উপজাতি ও অন্য সম্প্রদায়ের মাঝেও সে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দেখা যায়। তাছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবে পাহাড়ি-বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সবাই সমানভাবে উপভোগ করেন। সেটা হোক ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঈদুল ফিতর-ঈদুল আজহা, সনাতনীদের দুর্গাপূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই, চাকমাদের বিজু নামে স্বস্ব ধর্মীয় উৎসবগুলো মিলে মিশে আনন্দের সাথে পালন করে আসছেন।

এ সময় এ ধর্মীয় উৎসবে যার যার ধর্মমতে সকল সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়। তাইতো এ অঞ্চলের সকল ধর্মীয় উৎসবগুলো হয়ে উঠে সার্বজনীন উৎসব। স্থানীয়দের মতে, তিন পার্বত্য জেলায় রাজনৈতিক ও কিছু সুবিধা লোভি লোকদের কারণে মাঝে মাঝে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে জালাও পোড়াও-সংঘাত হলেও ধর্মীয় উৎসবে তা দেখা যায় না। তখন মনে হয় এ অঞ্চল যেন উৎসবের অঞ্চল।

রামগড় উপজেলা পরিষদের নবর্নিবাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারীর এ প্রতিনিধিকে বলেন, ঈদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও এ অঞ্চলে এটি সবার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। যেমন, পাহাড়ে প্রায় অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে উৎসবের আনন্দগুলো ভাগ করে নিতে দেখা যায়। তিনি আরো বলেন, তাইতো শহরের ধর্মীয় উৎসবের আমেজের চেয়ে পাহাড়ের আনন্দটা বৈচিত্র্য ও আনন্দময়।

রামগড় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, শ্যামল রুদ্র বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি তাদের যার যার ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে পালন করে আসছে। এসব ঐতিহ্যগুলো ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপন করে থাকে সম্প্রতির বন্ধনে আবন্ধ হয়ে।

রামগড় উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ ধর্মীয় অনুভূতির দিক দিয়ে সবসময় শান্তি প্রিয়। আর ধর্মীয় উৎসবেও ভিন্যতা দেখা যায়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে যেমন আমরা অংশ গ্রহন করি, তেমনি তারাও ঈদসহ বিভিন্ন্ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে দেখা যায় এবং একে অপরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। এ যেন পাহাড়ের পাহাড়ি- বাঙালির সম্প্রতির সেতুবন্ধন।

কার্বারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনন্দ মোহন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়েরর যে কোন উৎসব আনন্দের এবং বৈচিত্র্যময়। তিন পার্বত্য জেলায় ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এখানে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খেয়াং, চাক, খুমি, তঞ্চঙ্গা, বমসহ ১৪টি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস।

রামগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা দীক্ষায় প্রায় মিল রয়েছে। তেমনি আচার-অনুষ্ঠানে একে অপরের পাশে থাকতে ও সহযোগিতা করতে ভালবাসেন। আর ঈদ-দুর্গাপূজা-সাংগ্রাই-বৈসু-বিজু-বিহু পার্বনগুলো সার্বজনীন রুপনেয়। যা পাহাড় আর শহরের আনন্দ একটু ভিন্নতা দেখা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ