নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এবার মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সাকিব আল হাসানের ব্যাট ঘুরে এলো রেকর্ড জুটি, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার গড়লেন ব্যাক্তিগত অনন্য আরেক রেকর্ড, শেষ দিকে মিঠুন-মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই, বিশ্বকাপ এমনকি নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়লো বাংলাদেশ। গতকাল লন্ডনের ওভালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রান তোলে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান করেছিল বাংলাদেশ। আর সেবছরই এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৯ করেছিল সাকিবের দল। এই রান তাড়া করে জিততে হলে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। কারণ বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জেতেনি আর কেউ। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের তোলা ৩২৭ রান তাড়া করে জিতে রেকর্ড গড়েছিল আয়ারল্যান্ডের।
গতকাল সৌম্য সরকার পাইয়ে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু। ১২তম ওভারে যখন সাকিব আর মুশফিক জুটি বাঁধেন তখন দল ঠিক বিপর্যয়ে নয় বটে, তবে ওই পরিস্থিতিতে দ্রুত আরেক উইকেট পড়ে গেলে ফ্যাসাদ বেঁধে যেত। দুজনেই তাই দায়িত্ব নিলেন। ঝুঁকি একদমই নিলেন না, আবার রানের চাকাও মন্থর হতে দিলেন না। তাতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়ে গেল।
তৃতীয় উইকেটে সাকিব-মুশফিক ১৪২ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। ৮৪ বলে ৮ চার আর এক ছক্কায় ৭৫ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে আউট হয়ে ফেরত গেছেন সাকিব আল হাসান। এতেই ভেঙে গেছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগের রেকর্ড একটি বিখ্যাত জয়ের ম্যাচে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারানোর দিন পঞ্চম উইকেটে ১৪১ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোনো উইকেট জুটিতেও এটি এখন বাংলাদেশের রেকর্ড। এর আগে ২০১৫ সালেই ঢাকায় সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছিল ১৩৫ রানের জুটি। বিশ্বকাপে আগের রেকর্ড জুটিতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ছিলেন মুশফিক, এবার সাকিবের সঙ্গে জুটিতেও থাকলেন তিনি।
১৪২ রানের জুটি গড়তে একদম বল নষ্ট করেননি তারা। ১৪১ বলেই এসেছে এই রান। প্রোটিয়া পেসারদের দুজনেই সামলেছেন দারুণভাবে। চেপে বসতে দেননি স্পিনারদের। ফাঁকা জায়গা বের করে নিয়েছেন সিঙ্গেল। বাউন্ডারি এসেছে নিয়মিতই। তবে তার জন্য বাড়তি খাটুনি করতে হয়নি। স্কিলের মুন্সিয়ানায় বল সীমানা পার করে এগিয়েছেন ঝুঁকিহীনভাবে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শতরানের জুটি আছে কেবল আর দুটি। সেই দুই জুটিও হয়েছে গত বিশ্বকাপেই। নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ। ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৪ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব ও মুশফিক।
এবারের জুটিতে আরেকটি জায়গাতেও এখন যৌথভাবে সবার ওপরে মুশফিক ও সাকিব জুটি। দুজনের এটি ছিল পঞ্চম শতরানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি শতরানের জুটি নেই আর কারও। মুশফিক ও তামিম মিলে একশ ছোঁয়া জুটি গড়েছেন ৫টি। তামিম ও সৌম্য সরকার জুটিও তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে ৫ বার।
জুটির মোট রানে দুইজন যোজন যোজন এগিয়ে বাংলাদেশের আর সব জুটির চেয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর এই জুটির রান ছুঁতে চলেছে ৩ হাজার। ২ হাজার রানও নেই বাংলাদেশের অন্য কোনো জুটির। তবে জুটিটা যখন আরও বিপজ্জনক দিকে এগুচ্ছিল, তখনই গড়বড় হয়ে যায় সাকিবের। ইমরান তাহিরের সোজা ডেলিভারি সুইপ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। বল সোজা আঘাত হানে স্টাম্পে।
তবে তার আগে অনন্য এক রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছে বিশ্বকাপ। পোর্ট অব স্পেন থেকে শুরু। মিরপুর, ক্যানবেরা হয়ে এবার ওভাল। প্রতিটিতেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে সাকিব গড়লেন অনন্য কীর্তি। টানা চার বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচে ফিফটি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান এখন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। আগের তিন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে করা ফিফটির ধারাবাহিকতা টেনে নিলেন টানা চারে।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসর দিয়ে শুরু সাকিবের বিশ্বকাপ। পোর্ট অপ স্পেনে ভারতকে হারানো সেই অবিস্মরণীয় ম্যাচে তখনকার তরুণ সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার করেছিলেন ৫৩ রান। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন অধিনায়ক। এবারও প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত। তবে জয় ধরা দেয়নি সেবার। সাকিব খেলেছিলেন ৫০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস।
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশর প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে এক পর্যায়ে বিপদে থাকা দলকে সাকিব উদ্ধার করেন মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে। খেলেন ৫১ বলে ৬৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। অবিশ্বাস্যভাবে, এবারের আগে বিশ্বকাপে সেটিই ছিল সাকিবের সর্বোচ্চ স্কোর। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওভালে পেরিয়ে গেলেন নিজের আগের সেরা। নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়েও।
ব্যক্তিগত আর জুটির রেকর্ডের ভিড়ে মনের আকাশে উঁকি দিচ্ছিলো আরেকটি সম্মিলিত রেকর্ডের। শেষ দিকে মোহাম্মদ মিঠুন (২১), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪৬*) আর মোসাদ্দেক হোসেন (২৬) মিলে পূর্ণতা দিয়েছেন তা। দল হিসেবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয়
স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যু আসর
৩৩০/৬* দ.আফ্রিকা ওভাল ২০১৯
৩২২/৪ স্কটল্যান্ড নেলসন ২০১৫
২৮৮/৭ নিউজিল্যান্ড হ্যামিল্টন ২০১৫
২৮৩/৯ ভারত ঢাকা ২০১১
২৭৫/৭ ইংল্যান্ড অ্যাডিলেড ২০১৫
*ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।