Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিরোপা সানরাইজার্সের

আইপিএল সেরা উদীয়মান মুস্তাফিজুর

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সানরাইজার্স হায়দারাবাদ : ২০৮/৭ (২০.০ ওভারে)
রয়েল চ্যালেঘ্জার্স বেঙ্গালুরু : ২০০০/৭ (২০.০ ওভারে)
ফল : সানরাইজার্স ৮ রানে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : অতৃপ্তি নিয়ে শেষ করতে হয়নি মুস্তাফিজুরকে। ১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে আইপিএলে বিক্রি হয়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়া মুস্তাফিজুরের বোলিং স্বপ্ন দেখা সানরাইজার্স হায়দারাবাদকে স্বপ্ন দেখানো এই বিস্ময় কাটার টম মুডি, ভি ভি এস লক্ষণ, ডেভিড ওয়ার্নারদের ভাসিয়েছেন শিরোপা আনন্দে!  রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে হার দিয়ে আইপিএল মিশন শুরু করেছে সানরাইজার্স যে ভেন্যুতে, সেই ভেন্যুতেই স্বাগতিকদের কাঁদিয়ে শিরোপা জিতেছে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ! জিতেছে ট্রফির সঙ্গে ১৫ কোটি রূপী। উপভোগ্য ফাইনালে ২০৯ রানের চ্যালেঞ্জে স্বাগতিকদের ফেলে দিয়ে ৮ রানে জিতেছে সানরাইজার্স, এমন ম্যাচেও দলের জয়ে রেখেছেন অবদান মুস্তাফিজুর। ইয়র্কার ডেলিভারিতে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের আন্দ্রে রাসেলকে ভুপাতিতত করে বোল্ড আউটে আসর সেরা ডেলিভারির স্বীকৃতি পেয়েছেন আগেই। আসরের বিস্ময় (১৭ উইকেট) বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর পেয়েছেন এমার্জিং (সেরা উদীয়মান) খেলোয়াড়ের পুরস্কার।   
গেইল তা-বে প্রথম ৫ ওভারে সানরাইজার্সের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছাড়া বেঙ্গালুরুর স্কোর যখন ৫৫/০, তখন প্রথম পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে (৬ষ্ঠ ওভারে) মুস্তাফিজুরের হাতে বল তুলে দিয়ে ম্যাচে ফিরে আসার উপায় পেয়েছে সানরাইজার্স অধিনায়ক। ওভারপ্রতি ১০.৫০’র লক্ষ্য তাড়া করে ব্যাট করছে যে দল, সেই দলের ভয়ংকর ওপেনিং জুটিতে আটকে রাখার কাজে সফল, ওই ওভারে খরচা মাত্র ৪ রান মুস্তাফিজুরের। তৃতীয় স্পেলে ওয়াটসনকে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে ম্যাচটি মুস্তাফিজুর নিয়ে এসেছেন সানরাইজার্সের হাতের মুঠোয়। আইপিএলের অভিষেকেই শিরোপায় হাত পড়েছে মুস্তাফিজুরের! ৪-০-৩৭-১, তিন স্পেলের এই বোলিংয়ে এদিনও ১৭ এবং ১৯তম ওভারের দায়িত্বটা ছিল মুস্তাফিজুরের উপর। ১২ বলে যখন ৩০ রানের লক্ষ্য কোহলীর দলের, তখন ১৯তম ওভারে ১২ রানের বেশি না দিয়ে শেষ ওভারের চাপটা দিয়েছেন মুস্তাফিজুর। জর্ডানের সহজ ক্যাচটি স্রানের হাত থেকে ফসকে না গেলে উইকেট সংখ্যা হতে পারতো ২। তারপরও ভুবনেশ্বর (২৩), চাহাল (২১), ওয়াটসন (২০), কুলকার্নির (১৮) পর উইকেট শিকারের তালিকায় মুস্তাফিজুর (১৭ উইকেট)। শীর্ষ উইকেট শিকারীদের মধ্যেওভারপ্রতি তার খরচাই সবচেয়ে কম (৬.৯০)।
বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের সবার চোখ নিব্বিষ্ট ছিল মুস্তাফিজুরের উপর। কোয়ালিফাইয়ার ‘টু’ তে খেলা হয়নি তার হ্যামেস্ট্রিংয়ে হালকা ইনজুরির জন্য। সেই ইনজুরিটা না জানি আইপিএলের ফাইনালে খেলার পথে তৈরি করে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। একাদশে মুস্তাফিজুরের নাম দেখতে তাই অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে টস পর্যন্ত। ফাইনালে সেরা অস্ত্র ছাড়া মাঠে নামবে কিভাবে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ? কোয়ালিয়াইয়ার ‘টু’ তে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে মুস্তাফিজুরের পরিবর্তে কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের অমিতব্যয়ী বোলিংই (৪-০-৩৯-১) ফাইনালে মুস্তাফিজুরের খেলার আভাস দিচ্ছিল। ফিটনেস টেস্টে উতরে শেষ পর্যন্ত একাদশে বাঁ হাতি কাটার মাস্টারকে দেখে মুস্তাফিজুর ভক্তদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক ছিল সানরাইজার্সের প্রতিপক্ষ। তারপরও স্বাগতিক দলের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছে সানারাইজার্স ব্যাটিংয়ে। টসে জিতে ফাইনালে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সানরাইজার্স অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার সেরা বোলিং কম্বিনেশনের জন্যই। নিজের শুরুটাও ছিল দারুন। প্রথম পাওয়ার প্লেতে উইকেটহীন ৫৯, প্রথম জুটির ৬৩ নেতৃত্ব দেয়া এই বাঁ হাতি ওপেনার আইপিএলের চলমান আসরে রেকর্ড ৯ম ফিফটি উদযাপন করেছেন। ২৪বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় শোভিত ফিফটির ইনিংসটি থেমেছে তার ৬৯ রানেÑবেঙ্গালুরুর বাঁ হাতি পেস বোলার অরবিন্দর শর্ট বলে কভারে খেলতে যেয়ে মিস টাইমিংয়ে শর্ট থার্ডম্যানে দিয়ে এসেছেন ক্যাচ। ভাল খেলতে খেলতে স্পিনার চাহালকে পর পর ২ বলে ছক্কা, চার এ মাতিয়ে যুবরাজ থেমেছেন ৩৮এ। ক্রিস জর্ডানের শ্লোয়ারে একস্ট্রা কভারে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। শেষ ৫ ওভারে ঝড় তুলেছেন বেন কাটিং (১৫ বলে ৩ চার ৪ ছক্কায় ৩৯ নট আউট)। তার ব্যাটিং ঝড়ে শেষ ৩০ বলে ৬৮ রান যোগ করেছে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ। যার মধ্যে বেঙ্গালুরু পেস বোলার শেন ওয়াটসনের শেষ স্পেলকে (২-০-৩৬-০) একটু ভালই বাগে পেয়েছেন বেন কাটিং। শেষ ওভারে ওয়াটসনকে খরচা করতে হয়েছে ২৪ রান, যার মধ্যে বেন কাটিংয়ের তিনটি ছক্কা ছিল দেখার মতো। যার একটি ছক্কার দূরত্ব ১১৭ মিটার ! ওয়ার্নারের হাতে ছক্কা দিয়ে বোলিং শুরু, শেষটাও করেছেন ওয়াটসন ছক্কা হজমে। ৪-০-৬১-০! এমন মারই খেতে হয়েছে তাকে। ৩টি শিকারেও কম মার খাননি ক্রিস জর্ডান, খরচা তার ৪৫! বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে ২০৮/৭ স্কোর পুঁজিতেই বোলারদের উপর রেখেছে ভরসা ডেভিড ওয়ার্নার। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে গেইল (৩৬ বলে ৭৬), কোহলীর (৩৫ বলে ৫৪) ব্যাটিংয়ে কঠিন হয়ে পড়েছিল সানরাইজার্সের, বেন কাটিংয়ের ব্রেক থ্রুতে গেইলের ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু সানরাইজার্সের উৎসব। এই বেন কাটিংই ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন সানরাইজার্সকে (২/৩৫)। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে ৯ হাজারী ক্লাবের প্রথম ক্রিকেটার গেইলের দানবীয় ইনিংস ম্লান করেছেন তিনি। ফাইনাল হিরো তিনিই। বেঙ্গালুরুর ১১৪ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে পড়তে দেননি ভুবনেশ্বর। ভুবনেশ্বরের মিতব্যয়ী বোলিংয়ে (৪-০-২৫-০) ২০৯’র চ্যালেঞ্জের রোমাঞ্চকর ফাইনাল ৮ রানে জিতে আইপিএলে প্রথমবারের মতো ট্রফি জয়ে মেতে উঠেছে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ। মুস্তাফিজুর, ভুবনেশ্বরের কম্বিনেশনে ৪০ উইকেটÑপুরো টুর্নামেন্টেই সানরাইজার্সকে দেখিয়েছেন যেই জুটি  স্বপ্ন। আসরে সর্বাধিক ৯৭৩ রানে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলী পেয়েছেন মোস্ট ভেল্যুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিরোপা সানরাইজার্সের
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ