Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরবনে প্রস্তুত পাচারকারীরা উপলক্ষ ঈদ

মনিরুল ইসলাম দুলু, মংলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বনজ সম্পদ রক্ষা, বন্যপ্রাণী পাচার ও নাশকতা রোধে অঘোষিত রেড এলার্ট জারি করেছে কোস্ট গার্ড ও বনবিভাগ। নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে বনবিভাগ থেকে বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি সীমিত করা হয়েছে। ঈদের আগ থেকে শুরু করে এ রেড এলার্ট ঈদের পরেও বলবৎ থাকবে। কোস্ট গার্ড ও বনবিভাগের বিশেষ টিম স্মার্ট বাহিনীকে সার্বক্ষণিক পেট্রোল টহল চালিয়ে যাবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কতিপয় লোক বনের মধ্যে বন্যপ্রাণী শিকার ও মাছ ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবে এদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে কঠোর হুশিয়ারি।

বিভিন্ন সূত্র জানান, ঈদের ছুটিকে পুঁজি করে বনের মধ্যে কিছু লোক বনবিভাগের কতিপয় লোকদের সাথে আঁতাত করে বন্য প্রাণী শিকার করে থাকে। এই রকম অন্তত ১৫টি গ্রæপ এ বছর প্রস্তুত আছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। এছাড়াও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বেশ কিছু খাল রয়েছে। যেখানে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। ওই সকল খালেও ঈদের ছুটিতে রাতে মাছ ধরার জন্য অন্তত ১০টি গ্রæপ প্রস্তুত আছে বলেও দাবি করা হয়েছে সূত্রগুলো থেকে।

মাছ ধরার জন্য বন বিভাগকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় ৩ দিন মাছ ধরার জন্য। সবকিছু বেশি হয় সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকাতে। এই সব কিছুর কলকাঠি নাড়ছে বন্দর কেন্দ্রিক চোরাচালান ও বন্যপ্রাণী পাচারকারিদের হোতা দেলোয়ার। এই ব্যক্তি অর্থ ও পাচারের কৌশল দিয়ে থাকে। বছরের পর বছর এই কাজ করে আসলেও দেলোয়ার রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

মংলাস্থ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের অপারেশন্স কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট ইমতিয়াজ আলম জানান, ঈদের ছুটির ফাঁকে কোন প্রকার পাচার, শিকার হতে পারবে না। সেই জন্য কোস্ট গার্ড প্রস্তুত রয়েছে। নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। অভয়ারণ্য এলাকাতে চলতে পারবে না ইঞ্জিন চালিত নৌযান। এছাড়াও ৩১ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত এই অঞ্চলের সকল ঘাটে তল্লাশি ও নজরদারি করছে কোস্ট গার্ড। এই চক্রকে দমাতে প্রয়োজনের কঠোর হবে বলেও হুশিয়ারি দেন এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে, সুন্দরবনের হরিণ শিকার, অবৈধভাবে গাছ কাটা এবং জেলেদের কাছ থেকে বনদস্যুদের চাঁদা আদায় রোধে ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৃথক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ বিশেষ টিম গঠন করে টহল জোরদারসহ প্রত্যেক স্টেশন কর্মকর্তার সমন্বয়ে টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া হরিণ নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে আরেকটি চক্র। তারা বাদ দেয় না রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকার। অপরদিকে দুর্বৃত্তচক্র বনের অভ্যন্তরে নাশকতা সৃষ্টিরও পাঁয়তারা চালায়। এসব অপতৎপরতা প্রতিরোধে বনবিভাগ থেকে অঘোষিত রেড এলার্ট জারি করাসহ নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার বলয়।

মংলাস্থ চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শাহীন কবির জানান, ইতোমধ্যে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনবিভাগের অফিসার ও স্টাফদের ছুটি সীমিত করা হয়েছে টহল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তাছাড়া বিশেষ টিমের পাশাপাশি রাত-দিন বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির সমন্বয়ে গঠিত টিম সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় টহল কার্যক্রম চালানো হবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মাহমুদুল হাসান বলেন, ঈদের সময় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে যাতে কোন ধরনের হরিণ শিকার, অবৈধভাবে গাছ কাটা এবং জেলেদের কাছ থেকে বনদস্যুদের চাঁদা আদায় রোধ ও দুস্কৃতকারীরা নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বনের অভ্যন্তরে অঘোষিত রেড এলার্ট জারি ও বনকর্মীসহ বিশেষ টিম স্মার্ট বাহিনীকে সার্বক্ষণিক পেট্রোল টহল চালিয়ে যাবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঈদের আগ থেকে শুরু করে এ রেড এলার্ট ঈদের পরেও বলবৎ থাকবে। এ সময়ে নেয়া এসব পদক্ষেপ তিনি নিজেই মনিটরিং করবেন। এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদী এলাকা থেকে সোমবার আট কেজি হরিণের গোশতসহ বাদশা নামের একজনকে আটক করেছে বন বিভাগ। এছাড়াও সুন্দরবনের নলিয়ান এলাকা থেকে ১১০ সিএফটি কাকড়া গাছ জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ