Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের বাজারে উপচেপড়া ভিড়

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে উৎসব। এই উৎসবকে আরো রাঙাতে, আরো আনন্দময় করে তুলতে দেশব্যাপী চলছে নানা প্রস্তুতি। ঈদে চাই নতুন নতুন পোশাক। যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে এ রেওয়াজ চালু আছে। তাই ঘরে ঘরে নতুন জামা-জুতা কেনার ধুম পড়ে গেছে। পছন্দমতো নতুন নতুন জামা-কাপড়, জুতা ও প্রসাধনী কিনতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেশের প্রায় সকল মার্কেটে এখন উপছে পড়া ভিড়। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-

পাবনায় তরুণীদের পছন্দ সারারা-গারারা

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবাহনী জানান, পাবনায় ২০ রোজার পর থেকে ঈদের বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে প্রচন্ড তাপদাহে সকাল ১১ টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত দোকান-পাটে তেমন বেচা-বিক্রি থাকে না। সন্ধ্যার পর বিক্রি বাড়ে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা মানুষজন সকাল দিকেই কেনা-কাটা করছেন। শহরের মানুষজন ইফতারের পর বাজারে আসছেন। শাড়ি কাপড়, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি বাড়ছে। জুতা-সেন্ডেলের বিক্রেতা বাবু জানালেন, ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে। চাঁদ রাত পর্যন্ত ক্রেতা বাড়বে। শাড়ি-কাপাড়ের দাম আগের মতো থাকলেও, দোকানিরা ক্রেতা বুঝে দাম হাকাচ্ছেন, কারো কাছে ২ হাজার টাকার শাড়ি ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন, আবার যারা শাড়ি চেনেন ও দাম জানেন তাদের কাছ থেকে খুব বেশি দাম নিতে পারছেন না।

২ হাজার টাকার মধ্যে ভালোমানের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের মানুষ ৫-৬ শ’ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। গত ঈদে পাবনার বাজারে গ্রামীণ কৃষকের ভিড় ছিল, এবার তেমনটা নেই। কারণ ধানের মূল্য কম পাওয়ায় তারা শহরমুখী হচ্ছেন না, উপজেলা বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় বস্ত্রাদি সাধ্যমত ক্রয় করছেন। উচ্চবিত্তরা আগের মতই রাজধানীতে ঈদ বাজার করেন।

পাবনার বাজারে তরুণীদের মন কেড়েছে, সারারা ও গারারা। বড় ঘের শালীন পোশাক হাঁটুর নিচে কুচি দেয়া সালোয়ার কামিজের সুতি কাপড়ের তৈরি পোশাকের নাম সারারা আর মাঝারি কামিজ এ দুটোর নামই সারারা-গারারা। শালীনবস্ত্র কেনায় এবার মহিলাদের আগ্রহ বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলার প্রবীন ব্যক্তি হাজী মোকারম হোসেন জানান, ‘ভাই এটা খুব ভালো কথা, যে পর্দা-শালীনতায় ফিরছেন তরুণীরা। হাতাকাটা, ডানাকাটা পোশাক থেকে ফিরে এসেছে তাদের মন ও মনন।’

বোরকা বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই। সব মিলিয়ে পাবনার শপিং মলে শাড়ি কাপড়, সারারা-গায়ারা, বোরকা মহিলারা কিনছেন। পুরুষের ঈদ পোশাক বলতে পায়জামা-পাঞ্জাবি। টুপি, আতর, সুরমা কেনা হচ্ছে ফুটপাত থেকে। ছোট বাচ্চাদের পোশাক তাদের বায়না ও পছন্দ অনুসারে পিতা-মাতাকে কিনতে হচ্ছে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ কম-বেশী প্রয়োজনীয় পোশাক কিনছেন।

ঝালকাঠিতে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

ঝালকাঠি থেকে মু. আব্দুর রশীদ জানান, শেষ মুহূর্তে জমতে শুরু করেছে ঝালকাঠির ঈদ বাজার। রমজানের শেষ সপ্তাহে মার্কেটের দোকানগুলোতে চলছে রমরমা বেচাকেনা। কিন্তু দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতাদের। তবে গুণগতমানের কারণে দাম বেশি পড়ছে বলে বিক্রেতাদের দাবি। মুসলমানদের বৃহত্তম এ উৎসবকে কেন্দ্র করে শহরের বিপণি বিতানগুলো এখন সরগরম। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিক্রেতারা। পুরুষের চেয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশুদের সমাগম বেশি। শাড়ি, ছিটকাপড়, থ্রিপিসসহ তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই আছে।

জানা যায়, রুচিশীল পোশাক-পরিচ্ছদে ঝালকাঠিবাসী বরাবরই ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে। তাই ঈদ আয়োজনের কমতি নেই এ জেলায়। এ বছরও ঈদ বাজারে মেয়েদের বিশেষ আকর্ষণ গাউন। দিলওয়ালি আর বাজরাঙ্গিসহ নানা নামে পাওয়া যাচ্ছে গাউন। পাশাপাশি সিল্কের থ্রিপিসের বেশ চাহিদা রয়েছে। মধ্য বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে শাড়ির পসরা। তবে এবছর দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। মধ্যবৃত্ত ও নিম্মমধ্য বিত্তদের কাছে পছন্দের পোশাক নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। দুই হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় মেয়েদের গাউন বিক্রি হচ্ছে। আর পছন্দের শাড়ি কিংবা থ্রিপিস পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবারের চাহিদা মেটাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককে।

ক্রেতা মো. আজিজুর রহমান বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে দাম বেশি। দামবৃদ্ধি পাওয়ায় বাজেট ঠিক রাখা যাচ্ছে না। পোশাকের মান ভাল, তবে দামটা আরেকটু কম হলে ভাল হতো।

ক্রেতা সোনিয়া আক্তার বলেন, বিপণি বিতানগুলোতে পছন্দের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ওড়না গর্জিয়াস দেখে পোশাক কিনেছি। দাম একটু বেশি, তবে ক্রয় ক্ষমতার একেবারে বাইরে নয়।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, আকর্ষণীয় পোশাকের একটু দাম বেশি পড়াটা স্বাভাবিক। গুণগণ মান বিচারে দাম হেরফের করছে। তবে নিম্মমধ্যবৃত্তদের জন্যও কম দামের পোশাক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শহরের মৌ ফ্যাশনের মালিক মঞ্জুর মোর্শেদ লিটু বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক রয়েছে আমার দোকানে। মানসম্মত পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এবারে ঈদে মেয়েদের গর্জিয়াস পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের ইজি ব্রান্ডের পোশাকের চাহিদা রয়েছে।

মাদারীপুরে জমজমাট ঈদবাজার

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে বাহারি রঙের পোশাকে দোকান সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। আর সব শ্রেণীর মানুষ ছুটছেন ঈদের পোশাক কিনতে। মাদারীপুর শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরানবাজারের বিপণি বিতানগুলোতে চলছে ঈদের পোশাক কেনার উৎসব। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারতায় মুখরিত শহরের আমিন সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, হাওলাদার মার্কেট, বীথি মিনি বাজার, সিটি মার্কেটসহ প্রতিটি বিপণি বিতান। ছেলেদের পছন্দ ফেসবুক, বাহুবলি, এইচডি, ককটেল, পুমা নামের জিন্স প্যান্ট ও শার্ট-পাঞ্জাবি। আর মেয়েদের ঝোঁক শারা, ইশিতাসহ ভারতীয় টিভি চ্যানেল সিরিয়ালের বিভিন্ন নামের মার্কেটে আসা পোশাকের দিকে। বাচ্চাদের পোশাকেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।

দর্জিদের দম ফেলার সুযোগ নেই। অনেকে দোকানে কাজের চাপে অর্ডার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ভারতীয় সিরিয়ালের নামের ও অনুকরণে তৈরি পোশাক বেশি চলছে। এবার তার প্রভাব আগের চেয়ে অনেক বেশি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার প‚র্বখাগদী গ্রামের গৃহবধ‚ ক্রেতা লিমা আকতার মনি বলেন, ‘শহরের দোকানগুলোতে প্রায় ৬ ঘণ্টা ঘুরে পছন্দের সব জিনিসপত্র কিনেছি। ঈদ এলেই কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। পছন্দের সবকিছু পেয়ে আমি খুবই খুশি।’

শহরের পুরানবাজারের বীথি শপিং সেন্টারের স্বত্ব¡াধিকারী সোহেল রানা জানান, ‘ভারতীয় চ্যানেলকে প্রাধান্য দিয়েই ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক কিনছেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বরিশালের বেশকিছু ঈদের কেনাকাটা করতে মাদারীপুরে আসছেন। বর্তমানে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদ বাজার।’ কাজীর মোড়ের ডিএম টেইলারের পরিচালক আবদুর রহিম জানান, ‘দর্জিপাড়ায় ফেলার সুযোগ নেই। শ্রমিকেরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এখন আর অর্ডার নেয়া সম্ভব হবে না’।

সৈয়দপুর যেন রাতজাগা নগরী

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু জানান, রমজান ঈদের উৎসবকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর বাজার এখন রাতজাগা নগরীতে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলা শহরের দোকানপাট ও বাজারে গ্রামাঞ্চলের লোকজনের দখলে থাকলেও রাত্রের বেলায় চলে পুরো শহরবাসীর কেনাকাটা।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন-বোনাস দিতে শুরু করায় বাজারে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। তাদের পথচলায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শহরের সৈয়দপুর প্লাজা থেকে শুরু করে শহীদ ডা. শামসুল হক রোডের দোকানগুলো।

এছাড়া নিউ ক্লথ মার্কেট, পুরাতন কাপড় মার্কেট কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গণ দু’দিন থেকে পোশাকের পাশাপাশি গিফট শপ, ঈদ কার্ড, ইমিটেশন-জুয়েলারি ও ক্রোকারিজের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। সৈয়দপুর শহরের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মহিলাদের কাছে শাড়ি ও থ্রিপিসের কদর অটুট রয়েছে। শাড়ির মধ্যে এ বছর সিফন জর্জেট ও হাফসিল্কের চাহিদা বেশি। এছাড়া সাউথ কাতান, কাঞ্চি পুরিয়া, ধলিয়া, বেনারসি, রাজশাহী সিল্ক, ইতালিয়ানসহ বিভিন্ন নামের কাপড় কিনছে মহিলারা।

জানা যায়, জরি, মেটাল, চুন্দ্রি, হ্যান্ডস্টিচ ও পাথরের জমকালো কাজ করা শাড়িগুলোর চাহিদা অনেক। আর এসব শাড়ির মান ভেদে মূল্য ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবারের ঈদ বাজারে শাড়ি, থ্রিপিস ও রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকানগুলোতেই প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই ছেলেদের পোশাক বিক্রির দোকানগুলো। শার্ট-প্যান্ট ছাড়াও হাল ফ্যাশনের ফতুয়া, শর্টপাঞ্জাবিসহ ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সম্ভার ঘটিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের দর্জি দোকানগুলো অনেক আগে থেকেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একেবারেই ঘনিষ্ঠ যারা তাদেরই অর্ডার নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে অভিযোগ মিলেছে কতিপয় দর্জি তথা টেইলার্সগুলো নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকদের কাছ থেকে সেলাইয়ের মজুরি আদায় করছেন। এদিকে রেলপ্রধান শহর সৈয়দপুরে চাকরিজীবীরা এরই মধ্যে কেনাকাটা সেরে ছুটছেন বাড়ি ফেরার পথে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ