গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে পুঁজি করে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) সিগারেটের ব্র্যান্ড প্রমোশনাল কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (৩০ মে) বিকালে রাজধানীর এসইএল সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এলায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ (এএফআইবি) এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি একটি বিদেশী কোম্পানী জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে তাদের উৎপাদিত পণ্য/ব্র্যান্ড প্রমোশনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক হুমকী। সিগারেট ব্যবসা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে দেশের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে এ ধরনের হীন কার্যক্রম প্রকাশ্যে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে।
এএফআইবি’র সম্পাদক ইবনুল সাইদ রানা বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাংঙ্গালী সংস্কৃতিকে পূজি করে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল সিগারেটের ব্র্যান্ড প্রমোশনের কূটকৌশল অবলম্বন করে সিগারেটের ভোক্তা তৈরির উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাপান ভ্রমণ ইতিহাস নিয়ে তারকা শিল্পী তাহসান খানের একটি অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপণ প্রচারনা চলছে। এ প্রমোশনাল বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে জাপান টোব্যাকোর (জেটিআই) ব্রান্ড কালার এবং স্লোগান যা মূলত জাপান টোব্যাকোর ব্রান্ড প্রমোশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পরিপন্থী।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বোর্ড অব ট্রাস্টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিগারেটের ব্যবসা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে উক্ত কোম্পানী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্যার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে তিনি অবশ্যই এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতেন। রবীন্দ্রনাথ বাংঙ্গালীর চিন্তাধারার একটি বড় জগৎ জুড়ে বিদ্যমান। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর প্রতি মানুষের দূর্বলতাকে পুজি করে সিগারেট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন একটি বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ধরনের কূটকৌশল যেমন বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে অপমান করা, তেমনি মানুষকে ঠকিয়ে সিগারেটের ব্যবহার উৎসাহিত করার প্রচারনা করা।
এলআরবি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া বলেন, প্রচারিত বিজ্ঞাপনে জাপান টোব্যাকোর নাম বলা না হলেও পাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে যেসব ক্যাম্পেইন চলছে এবং সিগারেট বিপনন কর্মকর্তারা যে শার্ট গায়ে দিচ্ছেন, সেখানে ‘জাপানিজ কোয়ালিটি স্লোগানের সঙ্গে জেটিআই এর লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পরিপন্থী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে এ যুগের একজন জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা তাহসান কে এ কাজে সম্পৃক্ত করেছে। তিনি বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং দেশে তরুন সমাজের একজন আইকনও বটে। জেটিআই এর অর্থায়নে তৈরি এ ধরনের বাঙ্গালী সংস্কৃতি বিরোধী এবং জনস্বাস্থ্য পরিপন্থী একটি বিজ্ঞাপনে তার অংশগ্রহণ সিভিল সোসাইটিকে দারুন ভাবে ব্যথিত করেছে। দেশের যুব সমাজকে সিগারেটে আকৃষ্ট করার এ অভিনব কৌশল বন্ধ করা স্বার্থে তাহসান খান তার সম্পৃক্ততা তুলে নিবেন বলে আমরা আশা করি।
জনস্বার্থ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডি এম সাকলায়েন বলেন, ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন তামাকজাত দ্রব্য বা তামাকের ব্যবহার প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যে কোন ধরনের বানিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান আইনের এই বিধান লংঘন করলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। অথচ একটি বিদেশী কোম্পানী দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে কিভাবে এ ধরনের জনস্বাস্থ্য বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে তা সবাইকে অবাক করে। আশা করি সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উক্ত কোম্পানীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যেখানে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেখানে বহুজাতিক তামাক কোম্পানীর এমন প্রচারনার দুঃসাহস কেমন করে পায় তা অনুসন্ধান করা জরুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের আইন বিরোধী কার্যক্রম বন্ধে কঠোর শাস্তি, বিভিন্ন এলাকায় প্রচারিত কার্যক্রম বন্ধ ও প্রচার সামগ্রী ধ্বংস, বাঙ্গালী সংস্কৃতির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা, জনপ্রিয় নাট্য শিল্পী তাহসান খানকে জনগণের কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাওয়া, জেটিআই এর যে সকল কর্মকর্তা আইন বিরোধী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান এবং জাপান টোব্যাকোর এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসকে সতর্কীকরণ পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।