নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ফেভারিট’- আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত বাক্য সম্ভবত এটিই। আসলেই কী তাই? কেনই বা ইংল্যান্ডকে এমন ফেভারিটের তকমা দেওয়া হচ্ছে? চলুন দেখে নেওয়া যাক:
র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল
আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান শীর্ষ দল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত তো বটেই রেটিংয়ে অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে তারা। গত বিশ্বকাপের পর থেকে তাদের ধারাবাহীক পারফম্যান্সই তাদেরকে এই পর্যায়ে উন্নীত করেছে। এসময় ইংলিশরা দুই তৃতাংশেরও বেশি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। জয়ের হার ৭০.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের জয়ের হার ৬৫.৯ শতাংশ।
এ তো গেল ইংলিশদের সাম্প্রতিক পারফম্যান্স। তার চেয়েও বড় সুবিধা হলো নিজেদের পরিচিত কন্ডিশন, ঘরের দর্শক। অবশ্য পরিচিত কন্ডিশন তাদেরকে কতটুকু সুবিধা দিতে পারবে এই প্রশ্ন রয়েই যায়। এর আগেও তারা চারবার বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয়েও কোনোবারই চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করতে পারেনি।
আগ্রাসী ও উদ্ভোবনী ব্যাটিং
২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর খেলার ধরণটাই বেমালুম পাল্টে ফেলেছে ইংল্যান্ড। গত কয়েক বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজস্ব একটা ধরণই তারা তৈরি করে ফেলেছে। অন্য দলগুলো যা অনুকরণীয় হিসেবে মেনে চলার চেষ্টা করছে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রæত রান তোলাই তাদের মূলমন্ত্র। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওভারপ্রতি রান নেয়ায় অন্য যে কোনো দলের চেয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড। গত চার বছরে তারা একদিনের ক্রিকেটে রান করেছে ওভারপ্রতি ৬.২৯ গড়ে। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত একই সময়ে রাত তোলে যথাক্রমে ৫.৭২, ৫.৭১ ও ৭.৭ গড়ে। বাংলাদেশের ওভারপ্রতি রানের গড় ৫.৩১।
এই সময়েই তারা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দুইবার দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড ভেঙে দেয়। প্রথম দল হিসেবে দলীয় সংগ্রহে পাঁচশ’প্রায় রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। গত গ্রীষ্মে ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৪৮১ রানের রেকর্ড গড়ে ইয়ন মরগানের নেতৃত্বাধীন দলটি। গত চার বছরে পাঁচবার দেখা গেছে চারশোর্ধো দলীয় সংগ্রহ, এর চারটিই ইংল্যান্ডের।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর ৪০০ দলীয় সংগ্রহ
দল স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যু/বছর
ইংল্যান্ড ৪৮১-৬ অস্ট্রেলিয়া ট্রেন্ট ব্রিজ/২০১৮
ইংল্যান্ড ৪৪৪-৩ পাকিস্তান ট্রেন্ট ব্রিজ/২০১৬
দ. আফ্রিকা ৪৩৮-৪ ভারত মুম্বাই/২০১৫
ইংল্যান্ড ৪১৮-৬ উইন্ডিজ গ্রানাডা/২০১৯
ইংল্যান্ড ৪০৮-৯ নিউজিল্যান্ড এজবাস্টন/২০১৫
শুরু থেকেই ঝড়
ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা গেছে জনি বেয়ারস্টো, অ্যালেক্স হেলস অথবা জেসন রয়কে। বর্তমান সময়ে দ্রæততম সময়ে দলীয় সংগ্রহ তিন অঙ্কে পৌঁছানোয় এদের ধারেকাছে কেউ নেই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শেখর ধাওয়ানের প্রতি ১০০ রানে বলের গড় যেখানে ৯৫ সেখানে বেয়ারস্টো ও হেলস তিন অঙ্কে যেতে নেন যথাক্রমে ৭৫ ও ৮৩ বল। গত দেড় বছরে ইংলিশদের মত ওপেনিং জুটিতে এত বেশি রান করেনি কেই।
৫৮.৭ গড়ে রান করা বেয়ারস্টো-রয় জুটিই এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক (৫৭.৭) অবশ্য ওপেনিং গড়ে তাদের চেয়ে বেশি দূরে নয়। তবে স্ট্রাইক রেটের কারণে বেশ এগিয়ে ইংলিশ জুটি। দলে বর্তমান তিনজন (জস বাটলার, বেয়ারস্টো ও রয়) আছেন যারা স্ট্রাইক রেটে সর্বকালের সেরা দশজনের মধ্যে (কমপক্ষে ১ হাজার রান)। বাটলারের (১১৯.৫৭) আগে কেবল অস্টেলিয়ার গেøন ম্যাক্সওয়েল (১২১.৯৫) রয়েছেন যিনি প্রতি ১০০ বলে করেছেন বেশি রান। তবে গড় রান রেটে ম্যাক্সওয়েলের (৩৩.৩৩) চেয়ে অনেক এগিয়ে বাটলার (৪১.৫৪)। ৬০ বা তার চেয়ে কম বল খেলে বাটলার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনবার। যে সময়ে বাটলারের সেঞ্চুরি আটটি একই সময়ে মাত্র একটি শতক ম্যাক্সওয়েলের। চলতি মাসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলেন বাটলার। গত এক দশকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সবার মন কাড়া এবি ডি ভিলিয়ার্সও বাটলারের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকান মারকুটে ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট যেখানে ১০১.০৯ সেখানে বাটলারের ১১৯.৫৭! আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ইংল্যান্ডের দ্রæততম ছয় সেঞ্চুরির সবকটিই এসেছে গত চার বছরের মধ্যে।
রশিদের জাদুকরী স্পিন
একটা ম্যাচ জিততে সব বিভাগেই সাফল্যের ছাপ রাখা লাগে। ব্যাটিংয়ে যেমন বাটলার-রয়-বেয়ারস্টো-মরগান-হেলসরা আছেন তেমনি বল হাতে সফল সময় পার করেছেন ইংলিশ বোলাররা। বিশেষ করে গত চার বছরে পারফম্যান্সের বিচারে সফলতম বোলার হলেন আদিল রশিদ। লেগ ব্রেক বোলিংয়ে এসময় তিনি নিয়েছেন সর্বোচ্চ ১২৯ উইকেট। আফগানিস্তানের রশিদ খানের চেয়েও চারটি বেশি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মইন খান। স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েও যিতি সিদ্ধহস্ত।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার
বোলার দল উইকেট
আদিল রশিদ ইংল্যান্ড ১২৯
রশিদ খান আফগানিস্তান ১২৫
ট্রেন্ট বোল্ট নিউজিল্যান্ড ১০৭
কাগিসো রাবাদা দ. আফ্রিকা ১০৬
ইমরান তাহির দ. আফ্রিকা ৯২
উপরোক্ত তালিকার একটা বিষয় স্পষ্ট যে সাফল্যের জন্য টপ ক্ল্যাস স্পিনার অথবা পেসার দলে থাকতে হবে। রশিদকে তো দেখাই যাচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলে তুরুপের তাস হতে পারেন জোফরা আর্চার। বারবাডোজে জন্ম নেওয়া এই বোলার একটানা ৯০ মাইল গতিতে বল করতে পারেন। লাইন লেন্থ ও সুইং দিয়ে ইতোমধ্যে ক্রিকেট বোদ্ধাদের মন জয় করে নিয়েছেন এই তরুণ। শেষদিকে ব্যাটে এসে ঝড় তুলতেও জুড়ি নেই তার। এছাড়া অভিজ্ঞ ডেভিড উইলির মত বোলারের উপরও আস্থা রাখতে পারে স্বাগতিকরা।
মরগানের নেতৃত্ব
এমন একটি দলকে এক সুতোয় বেধে রাখার কৃতিত্ব দলপতি ইয়ন মরগানকে দিতেই হয়। ফর্ম এবং নেতৃত্বগুনে আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই ব্যাটসম্যান দলে নিজেকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দলটির সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বর্তমান অধিনায়ক সম্পর্কে বলেন, ‘আমি তাকে আমার দেখা সেরা ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মূল্যায়ন করব।’ ‘সে এমন একজন যে খেলাটা পড়তে পারে, সামনে থেকে আপন ব্যাক্তিত্বে দলকে নেতৃত্ব দেয়। সে দারুণভাবে সবাইকে ম্যানেজ করতে পারে।’ ‘দলের সবাই তাকে মেনে চলে। তারা মরগানের নেতৃত্বে নিরাপদ বোধ করে।’
কে বা কারা তাদের থামাতে পারে?
‘কে’ এই প্রশ্নে সবার আগে চলে আসে বিরাট কোহলির নাম। একজন আধুনিক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান হিসেবে যিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন গত কয়েক বছরে। ভারত অধিনায়কের রানক্ষুধা যে কোন দলকে খাঁদে ফেলে দিতে যথেষ্ট। গত চার বছরে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ওয়ানডেতে চার হাজারের বেশি রান করেছেন, গড় ৭৮.২৯! আর যে ম্যাচগুলো ভারত জিতেছে সেই ম্যাচে কোহলির ব্যাটিং গড় আরো ভয়ঙ্কর, ৯৫.২৪!
ইংল্যান্ড যদি রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তাহলে কোহলির নেতৃত্বে ধাওয়ান-রোহিতরা যে কোনো রান তাড়া করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে তিনটি দ্বিশতক হাঁকানো রোহিতের সক্ষমতা কারো অজানা নয়।
ইংল্যান্ডের ছোট মাঠ আর ব্যাটিং পিচে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যে কোনো দিন। সাথে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ খ্যাত পাকিস্তান ও ব্যাটে বলে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকেও খুব বেশি পিছিয়ে রাখা যাবে না। সব মিলে উপভোগ্য এক বিশ্বকাপে বুধ হয়ে থাকার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।