Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোমাঞ্চের অপেক্ষায়

॥ রোজাউর রহমান সোহাগ ॥ | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক্রীড়া সাংবাদিকতার শুরু থেকেই পেশাদারিত্বের খাতিরে ঘুরেছি বহু দেশ, অভিজ্ঞতা হয়েছে নানা ক্রীড়া আয়োজনের সাক্ষী হবার, ইতিহাসের সঙ্গী হবার। এই তো সেদিনও রাশিয়া ঘুরে এলাম ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে। রাজ্যের বিস্ময় ভরে দেখেছি ফুটবল উন্মাদনা। মেসি-রোনালদো-নেইমারদের সেই আবেগভরা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্রই, সবার মনে। পরক্ষনেই মনটা ভরে উঠে এক রাশ বিষন্নতায়- ইস! যদি বাংলাদেশ থাকতো!! মনের কোনে জমে থাকা সেই আক্ষেপ সান্ত¦না হয়ে বুঝ দেয় এই বলে ‘হয়তো একদিন ফুটবলের এই বিশ্বমঞ্চেও উড়বে লাল-সবুজের গর্বের পতাকা’। লাখো রঙ-বেরঙের পতাকায় যখন ছেয়ে যায় গোটা দেশ, তখন মনে হয় বাংলাদেশ না খেলেও যেন ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু তার পরও মানের কোনে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস ফুশ্ করে বেরিয়ে আসে অজান্তেই। তারপর সেই রাশিয়া থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুণছিলাম, বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কিংবা বুক উচিঁয়ে উড়ন্ত গর্বের লল-সবুজ পতাকার পতপত শব্দ শোনার। এসেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ।

ক্রিকেটে এই আক্ষেপটা ঘুঁচেছে প্রায় দুই যুগ হলো। ভারত, পাকিস্তান এরপর শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশই যখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়ে গেছে, তখনই বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের আদি ভূমিতেই মেলে টাইগারদের বিশ্বকাপ টিকেট। প্রথম আসরেই বিশ্বকে জাত চেনায় বুলবুল-নান্নুরা। সে ধারায় আজ ওয়ানডে ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিধর দল বাংলাদেশ।
এবারও ভেন্যু সেই ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। দলে আছেন সিনিয়র এমন পাঁচ ক্রিকেটার যারা প্রত্যেকেই দশ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম খেলতে যাচ্ছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ। মাহমুদউল্লাহ খেলবেন তার তৃতীয় বিশ্বকাপে। এই পাঁচজনই যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের মূল চালিকাশক্তি হবেন, তা বহু আগে থেকেই চূড়ান্ত। এবারের বিশ্বকাপে তাদের সঙ্গে গোটা দলের টোটাল পার্ফরম্যান্স নির্ভর করবে বেশ কিছু সুযোগ ব্যাটে-বলে এক করার মাধ্যমে।

আইসিসি ইভেন্টে ব্যাটিংবান্ধব পিচে বানানো হয়, এমন একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে। তবে এবারের বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ডে বলেই কি না, হাই স্কোরিং-ম্যাচই হবে, সেই নিশ্চয়তা ঠিক দেওয়া যাচ্ছে না। ইংলিশ কন্ডিশন যে বরাবরই ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে ভালোবাসে! উইকেট যতই ব্যাটিংবান্ধব হোক, আকাশে মেঘ থাকলে নতুন বলে বোলাররা নিশ্চিতভাবেই সুইং পাবেন। আর ঠান্ডা আবহাওয়ায় সুইং বোলিংয়ের সামনে ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব নতুন কিছু নয়। সে ক্ষেত্রে রাবাদা-বোল্টদের মতো সুইং বোলারদের সামনে খাবি খেতে হতে পারে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাটসম্যানদেরও। তবে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সবশেষ আইসিসি ইভেন্টের পরিসংখ্যান বলছে, নতুন বলের তোপ সামলে নিতে পারলে এই কন্ডিশনেও রানবন্যা ছোটাতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১৫ ম্যাচে ৭ বার ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছিল দলগুলো। অথচ তার চার বছর আগে, ২০১৩ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১৫ ম্যাচে ৩০০ ছাড়ানো স্কোর হয়েছিল মাত্র ২ বার!

এই বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠতে পারে ফরম্যাট। এবার বিশ্বকাপে নেই কোনো গ্রুপিং। অর্থাৎ, নকআউটে পর্বে যাওয়ার আগে প্রতিটি দলই একে অন্যের মুখোমুখি হবে একবার করে। ৯টি করে ম্যাচ শেষেই নির্ধারিত হবে কোন চার দল পাবে সেমিফাইনালের টিকিট। আর এই সূচির কারণেই চমক উপহার দিতে পারে এবারের বিশ্বকাপ। ৯ ম্যাচ ধরে ছন্দ ধরে রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। যে কারণে ভালো শুরু করেও শেষের ব্যর্থতায় যেমন কপাল পুড়তে পারে, তেমনি শুরুটা ভালো না হলেও পরপর কয়েক ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফিরে আসার সুযোগ থাকছে।

পরিবর্তিত এই সূচিতে ইনজুরির বিষয়টিও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ফুটবলের ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যায়, দীর্ঘ লীগ শেষ করতে করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ই ইনজুরিতে পড়ে যায়। এবার বিশ্বকাপেও তেমন পরিস্থিতির উদ্রেক হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের ব্যাপারটাও তাই দিন শেষে দলগুলোর ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে। সবশেষ এই সূচিতে খেলা হয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সেবার বিদায়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। এবারও সে রকম চমকজাগানিয়া কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না মোটেও।

২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর থেকে যেন ওয়ানডে ক্রিকেটে বিপ্লবের মিশনে নেমেছে ইংলিশরা! ওয়ানডে ব্যাটিং খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে দলটি। শুরুতে দেখে খেলে শেষে মেরে খেলার যে ‘অলিখিত নিয়ম’ ছিল ওয়ানডেতে, সেটি ভেঙে দিয়েছে ইংল্যান্ড। যার প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানেও। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ৩৪ বার ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছে ইংল্যান্ড! অন্য যেকোনো দলের তুলনায় যা অনেক বেশি। ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটিও নতুন করে লিখেছে দলটি। একমাত্র দল হিসেবে গত চার বছরে চারবার ৪০০-র বেশি স্কোর করেছে ইংল্যান্ড। চার বছর আগের তুলনায় ব্যাটিং যে এখন অনেক বেশি আগ্রাসী, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই ইংল্যান্ডই।

শুধু ইংল্যান্ড নয়, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অন্য দলগুলোও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কাছাকাছি আছে ভারত। গত বিশ্বকাপের পর থেকে মোট ২১ বার ৩০০-এর বেশি স্কোর করেছে তারা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ বার করে ও নিউজিল্যান্ডও ১৫ বার ৩০০-এর বেশি স্কোর করেছে।
ব্যাটসম্যানদের এই আগ্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অবদানও কম নয়। যত বেশি টি-টোয়েন্টি খেলছেন ব্যাটসম্যানরা, তত নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করছেন দ্রুত রান তোলার। আগে তাই ক্রিজে এসেই শট খেলা কঠিন হলেও এখন পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই উইকেটে আসামাত্রই হাত খুলতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই দিকটি প্রভাব ফেলেছে ওয়ানডেতেও। দলগুলোর আগ্রাসী ব্যাটিং তাই ঘুরিয়ে দিতে পারে যেকোনো ম্যাচের মোড়।

ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী ব্যাটিং থামাতে অধিনায়কদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন লেগ স্পিনাররা। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি দলই তাই অন্তত একজন করে লেগ স্পিনার তৈরি করে রেখেছে, ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে লেগ স্পিনারদের সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। তাই অনেক নামী ব্যাটসম্যানদের ভিড়ে যদি রশিদ খান, ইমরান তাহির, কুলদীপ যাদব, অ্যাডাম জাম্পা বা ইশ সোধির মতো লেগ স্পিনার টুর্নামেন্টের নায়ক হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

খেলা যদিও হবে ইংল্যান্ডে, কিন্তু উপমহাদেশের দলগুলোর মনে হলেও হতে পারে, তারা নিজেদের ঘরের মাঠেই খেলছে। মনে হবে না-ইবা কেন, যুক্তরাজ্যে উপমহাদেশের দলগুলো কী ব্যাপক সমর্থন পায়, সে কথা তো আর কারোর অজানা নয়! উপমহাদেশের প্রচুর লোক বাস করেন যুক্তরাজ্যে, মাঠে তাই দর্শক সমর্থনের অভাব হয় না বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোর। দর্শক সমর্থনের বিষয়টি তাই বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে উপমহাদেশের চার দলকে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল গত আসরের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠা। এবার মাশরাফিদের লক্ষ্য সেমিফাইনাল। সেই রোমাঞ্চ উপভোগের অপেক্ষায় রইলাম।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১১ জয়
১৯৯৯ (ইংল্যান্ড)
প্রতিপক্ষ ব্যবধান ভেন্যু তারিখ
স্কটল্যান্ড ২২ রানে এডিনবার্গ ২৪ মে
পাকিস্তান ৬২ রানে নর্দাম্পটন ৩১ মে
২০০৭ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
প্রতিপক্ষ ব্যবধান ভেন্যু তারিখ
ভারত ৫ উইকেটে পোর্ট অব স্পেন ১৭ মার্চ
বারমুডা ৭ উইকেটে পোর্ট অব স্পেন ২৫ মার্চ
দ.আফ্রিকা ৬৭ রানে প্রোভিডেন্স ৭ এপ্রিল
২০১১ (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা)
প্রতিপক্ষ ব্যবধান ভেন্যু তারিখ
আয়ারল্যান্ড ২৭ রানে ঢাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি
ইংল্যান্ড ২ উইকেটে চট্টগ্রাম ১১ মার্চ
নেদারল্যান্ডস ৬ উইকেটে চট্টগ্রাম ১৪ মার্চ
২০১৫ (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড)
প্রতিপক্ষ ব্যবধান ভেন্যু তারিখ
আফগানিস্তান ১০৫ রানে ক্যানবেরা ১৮ ফেব্রুয়ারি
স্কটল্যান্ড ৬ উইকেটে নেলসন ৫ মার্চ
ইংল্যান্ড ১৫ রানে অ্যাডিলেড ৯ মার্চ
* ২০০৩ (দ.আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে) বিশ্বকাপে জয়হীন বাংলাদেশ



 

Show all comments
  • Mohammad Tanveer ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৪৫ এএম says : 0
    সেই রোমাঞ্চ উপভোগের অপেক্ষায় রইলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Razzak ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৫০ এএম says : 0
    হারলেও আছি ;জিতলেই আছি।।আমি ভাই বাংলাদেশ ক্রিকেটদলকে বড় ভালবাসি।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamen Bhuiyan ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৫২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে এবার খুব ভাল করবে। ইনশা আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Bhuiyan ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৫২ এএম says : 0
    আমরা ফাইনাল খেলবো ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • M A Mobarak Manik ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম says : 0
    শুভ কামনা টিম বাংলাদেশের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ ক্রিকেট

১৬ জুলাই, ২০১৯
১৫ জুলাই, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ