নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিদায় একদিকে যেমন বেদনার আবার সেই শূণ্য স্থানে নতুনের বারতাও নিয়ে আসে। এবারের বিশ্বকাপেও সেরকম কিছু তারকার উত্থান হতে পারে। এমন মঞ্চে কে খেলতে চান না! যারা বিশ্বকাপে সুযোগ পান তারা নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করেন। যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য এটি একটি আজন্ম লালিত স্বপ্ন। শুধু সুযোগই না, প্রত্যেকেই চান পারফর্ম করতে। নিজেদের পতাকাকে সবার ওপরে তুলে ধরতে। প্রথমবারের মতো যারা বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন তারা রয়েছেন ভিন্ন রোমাঞ্চে। প্রতিবার অনেক খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপে অভিষেক হয়। বিশ্বকাপের চাইতে আর ভালো কোন মঞ্চ নেই নিজেদের স্কিল দেখানোর। তাইতো অভিষেকেই বাজিমাত করতে চান তারা।
বিশ্বকাপ অভিষেক হবে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা কম নয়। প্রত্যেক দলেই রয়েছে একাধিক ক্রিকেটার। প্রত্যেক দলের একজন অভিষিক্তকে দেখা যাক যারা এবারের আসরে আলো ছড়াতে পারে, যাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে তাদের দল।
* মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ) : ক্রিকেটে তার আগমন অনেকটা ধুমকেতুর মতো, চারিদিক আলোকিত করে। ভারতের সাথে অভিষেক, সেই ম্যাচেই ছয় উইকেট শিকার। মুস্তাফিজের বোলিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আকস্মিক স্লোয়ার এবং কাটার ডেলিভারি। যার সাহায্যে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান তার সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর থেকে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে তাকে কাটার মাস্টার বা দ্য ফিজ নামেই ডাকতে থাকে। দেশের আঙিনা ছেঁড়ে বিদেশের মাটিতেও সে সমান ভাবেই ক্ষুরধার। আইপিএল, পিএসএল কিংবা কাউন্টি ক্রিকেট সবখানেই তার তুমুল জনপ্রিয়তা ছিলই। তবে মাঝে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলেন। ঘন ঘন ইনজুরির কারণে নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেন। ইনজুরি প্রবণ হওয়ার কারণে ভয় ঢুকে মনে। তবে আশার বিষয় ধীরে ধীরে সে আবার তার পুরনো রুপে ফিরে আসছে। প্রথমকার সময়ের মত আবারো ফর্মে ফিরেছেন। বোলিং করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের অন্যতম প্রধান অস্ত্র বলা যায় তাকে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপে কিছু করতে হলে অবশ্যই তাকে বড় ভুমিকা রাখতে হবে । দেখা যাক নিজের প্রথম বিশ্বকাপে কততা স্মরণীয় করে রাখতে পারেন ফিজ।
* বিজয় শংকর (ভারত) : ভারতীয় দলে তার অন্তভূক্তি নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। বিশেষ করে আম্বাতি রাইডু ও রিশভ পান্তকে বাদ দিয়ে যখন বিজয় শংকরকে নেওয়া হয় তখন থেকেই নির্বাচক এমএসকে প্রসাদকে ধুয়ে দিচ্ছিল ভারতীয় গণমাধ্যম, আমজনতা। এখন বিজয়ের সামনে ভালো সুযোগ রয়েছে দলের চার নাম্বার পজিশনের জন্য । তামিলনাডুর এই ক্রিকেটার ভারতীয় এ দলের হয়ে ব্যাটে-বলে ভালোই সময় কাটিয়েছেন। স্ট্রাইকার ধরে রাখা ও বিগ শট খেলা, দুটোতেই তার ভালো দক্ষতা আছে । লিস্ট ‘এ’তে তার গড় ৩৬.৬৫ এবং গড় ৯২ এর উপর রয়েছে । দুর্দান্ত ফিল্ডিং সাথে মোটামুটি কার্যকরী বোলিংয়ের মিশেলে তাকে করেছে এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ।
* ইমাম উল হক (পাকিস্তান) : ১৯৯২ সালে পাকিস্তান যেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল সেবারের দলটির আনসাং হিরো ছিলেন ইনজামাম-উল-হক। এবার তারই ভাতিজা ইমাম-উল-হক খেলবেন বিশ্বকাপ। ইমামকে যখন জাতীয় দলের জন্য নির্বাচন করা হয় তখন অনেক সমালোচনা হয়। অনেকেই বলে আত্মীয় হওয়ায় (বর্তমানে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে ইনজামাম) ইমাম এই সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ইমাম খেলার মাঠে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করেন। ছোট ক্যারিয়ারে রয়েছে কিছু অসাধারণ ইনিংস। ২০১৭ সালের অক্টোবরে অভিষেকের পর যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তখনই বোঝা যাচ্ছিল পাকিস্তানের ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হতে যাচ্ছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। স্টাইলিশ এই ওপেনারের রয়েছে ব্যাটিংয়ে চোখধাঁধানো টেকনিক ও স্কিল । ২৩ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যেহেতু সুযোগ পেয়েছে তাই আশা করা যায় কিছু দুর্দান্ত ইনিংস দিয়ে সব সমালোচনার জবাব দেবে ।
*রশিদ খান (আফগানিস্তান) : রশিদ খান ইতিমধ্যে তারকা খেতাব পেয়ে গেছেন। তার বিচক্ষণ স্পিনে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান নাকাল হয়েছে বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে। এবারের বিশ্বকাপ তার প্রথম। তার দলের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে তার বোলিংয়ের উপর। দেখা যাক বিশ্বকাপের মত বড় আসরে রশিদ তার স্কিল কতটা ধরে রাখতে পারে, অবশ্য বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা বড় বড় তারকাদের সান্নিধ্য তাকে অনেকটা সাহায্য করবে। ক্রিকেট ইতিহাসের ১০০ উইকেট শিকারিদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বোলিং গড় তার, ১২৩ উইকেট নিয়েছেন ৫৪ ইনিংসে। দিন দিন আরও বেশি ক্ষুরধার এবং দক্ষ হচ্ছেন এ লেগ স্পিনার। রশিদ পাশে পেয়েছেন মোহাম্মদ নবী ও মুজিব-উর-রহমানকে, যা আফগান দলের ভালো ফলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
* এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা) : এবি ডি ভিলিয়ার্স অবসরে। হাশি আমলা অফফর্মে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ যাত্রা কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে ফাফ ডু প্লেসির পারফরম্যান্সের ওপর। তার প্রধান দুই অস্ত্র কুইন্টন ডি কক ও আইডেন মার্করাম। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় মার্করাম। প্রতিভাবান এ ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে যতটা নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে ততটা পারেননি। কিন্তু তাই বলে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে বোকামি । লিস্ট ‘এ’ তে ৫০ গড়ে এবং ১০০ এর উপর স্ট্রাইক রেটে ২৫০০ এর ওপরে রান করেছেন এ ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজনে হাত ঘোরাতেও পারেন। অফস্পিন বোলিং করার সামর্থ্য তাকে করে তুলেছে বিশ্বকাপের মত আসরে একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার । ইংলিশ কন্ডিশনে দীর্ঘদিন ধরেই খেলে আসছেন মারক্রাম। নিয়মিত কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন হ্যাম্পশায়ারের হয়ে। সেই হিসেবে আশা করা যায় তার কাউন্টির অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
* জনি বেয়ারেষ্টো (ইংল্যান্ড) : জনি বেয়ারষ্টোর ওয়ানডে ক্রিকেটে উত্থান খুব দুর্দান্ত ছিল। দলে জায়গা পেয়েছিলেন তৃতীয় ওপেনার হিসেবে যখন জেসন রয় ও অ্যালেক্স হেলস খুব ভালো ফর্মে ছিলেন। বর্তমানে ইংল্যান্ডের ওডিআইতে সবার উপরে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেয়ারষ্টোর অবদান। বেয়ারষ্টোর ওয়ানডে অভিষেক ২০১১ সালে কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নিজের জায়গা করতে পারেনি। তার সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে। যেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে ওডিআই ক্রিকেটে বেয়ারষ্টো খুব উপযুক্ত ওপেনার এবং সে খুব আগ্রহী অভিষেক বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে।
* টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড) : কিউই দলে তার ভুমিকা স্তম্ভের মতো। দলের মিডল অর্ডারে রস টেইলরের সাথে তার উপস্থিতি কিউই দলকে খুব ভরসা দেখাচ্ছে। মূলত সে একজন ওপেনার এবং ওই পজিশনে ভালোই ছিল। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মিডল অর্ডারে এসে স্থিথি হয়। স্পিন বা পেস, দুটোতেই তার দক্ষতা রয়েছে। বিশ্বকাপে সে পাঁচ নাম্বারে খেলবে যা কোন দলের অন্যতম প্রধান স্থান। দলের রান বড় করার পেছেনে তার নিজের অবদান অবশ্যই রাখতে হবে। যখন ইনিংসের মধ্যখানে বিশেষ করে লেগস্পিনাররা খুব বাঁধা হয়ে যায় তখন টম ল্যাথাম রস টেইলরদের ট্রাম্পকার্ডের ভুমিকা পালন করতে পারবে।
* উসমান খাজা (অস্ট্রেলিয়া) : স্মিথ ও ওয়ার্নার যখন দলে প্রায় বারো মাস নিষিদ্ধ ছিলেন তখন উসমান খাজা দলের অন্যতম ত্রাতার ভূমিকা পালন করেন। ওই সময়ে খাজা ১৩ ওডিআই খেলে এবং এর ৮টিতে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস উপহার দেন। সর্বশেষ ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওডিআই সিরিজে সর্বোচ্চ রান ছিল তার। ৩৮৩ রান করে সিরিজ জয়ে বড় ভুমিকা পালন করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পাঁচ ম্যাচের ওই সিরিজে খাজা দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি করেন। এমন দুর্দান্ত ফর্মের কারণে বিশ্বকাপে নিজের জায়গা করে নেন খাজা। ওয়ার্নার ফিরে আসায় খাজা তিন নাম্বারে খেলবেন, যা দলের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং অস্ট্রেলিয়াকে একটি ভালো রেজাল্ট আনতে সহায়তা করবে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ভালোভাবেই রাঙাতে চান অসি ক্রিকেটার।
* শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) : গত কয়েক বছরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের তালিকা করা হলে শাই হোপের নাম থাকবে শুরুর দিকেই। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে অভিষেকের দ্বিতীয় ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন এ ডানহাতি ওপেনার। শেষ ২০ ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় ৭০ এর ওপরে। ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই ১০টি ম্যাচ খেলে তার ব্যাটিং গড় ৫৩.৮৭। বিশ্বকাপে ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে দেখা যাবে তাকে। তার সামর্থ্য নিয় কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ধীরগতিতে ব্যাটিংয়ের কারণে প্রায়ই তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। তবে প্রতিভাবান এ ব্যাটনম্যানই ক্যারিবীয়ান দলে সবথেকে আস্থার জায়গা নিয়ে আছে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে তৈরি হয়ে যান কিছু দুর্দান্ত ইনিংস দেখার জন্য।
*কুশল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা) : বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম সেরা উচ্চাকাক্সক্ষী প্রতিভা হল কুশল মেন্ডিস। বর্তমানে যেকোন বোলিং লাইন ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে তার। তার কব্জিতে জোর রয়েছে এবং সে জানে তাকে রান সংগ্রহ করতে হবে এবং সে এই কাজটি অনেকবারই করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বার যখন দল হিমশিম খাচ্ছে তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতরন করেন কুশল। আক্রমণাত্বক এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান জানেন যে কখন জ্বলে উঠতে হয় এবং পছন্দ করেন প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার দুর্দান্ত ৮৯ রানের ইনিংস তার দলকে ভারতের বিরুদ্ধে এক অসাধ্য ম্যাচে জয়ী হতে সাহায্য করে। টেস্টে সে কিছু বিস্ময়কর ইনিংস খেলে যা তার স্বভাবের পরিচয় দেয়। এখন শ্রীলঙ্কা খুব সংগ্রাম করছে এবং সেই পারে ভাল পারফরমেন্স দিয়ে বিশ্বকাপে তার দলকে বাঁচাতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।