Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কট উত্তরণে পোশাক খাতে প্রণোদনা দাবি

৩ সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

চরম সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের তৈরী পোশাক খাত। শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারায় গত এক মাসে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। প্রতি মাসেই গড় হারে ২০ থেকে ২২টি কারখানা বন্ধ হচ্ছে। অনেক মালিক কারখানার মেশিন বিক্রি করে বেতন-বোনাস দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ আগামী ৫ বছরের জন্য তৈরি পোশাক খাতে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে হবে। এই প্রণোদনা পেলে রফতানি আয় ও কর্মসংস্থানে শীর্ষে থাকা খাতটি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে এক হোটেলে পোশাক খাতের ৩ সংগঠন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ। এছাড়াও রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
ড. রুবানা হক বলেন, নির্বাচনে কারণে ক্রেতারা অর্ডার কম দিয়েছে। তাই এখন অনেক কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারছে না। এ অবস্থায় পোশাক খাত সহায়তা-সহযোগিতা না পেলে আরো ধুকতে থাকবে। সরকার প্লাস্টিক দ্রব্য রফতানিতে ১০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে, এতে রফতানি ৪৬ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। সিরামিক পণ্যে ১০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে, রফতানি বেড়েছে ২১ মিলিয়ন ডলার। চামড়া ও ফার্নিচারে ২৫ শতাংশ দিচ্ছে, এ দুই খাতে ৯৬২ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। অথচ তৈরি পোশাকে আগামী ৫ বছরের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিলে পোশাক খাত আবারও ঘুড়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতকে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হলে অতিরিক্ত ১১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা লাগবে। যেখানে হলমার্ক ৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়, সেখানে এই টাকা কিছুই না। এছাড়া প্রণোদনার অর্থ পেতে এক থেকে দেড় বছর লাগে, এটা সহজ করতে হবে। শিল্পের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বেতন দিতে না পারায় ঈদের আগে আরো ২-৪টি কারখানা বন্ধ হতে পারে।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ শুল্কমুক্ত ও মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা সুতা, কাপড় ও বিদেশি ড্রেস ম্যাটেরিয়াল অবাধে বিক্রির কারণে দেশের স্পিনিং, উইভিং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং মিলগুলো অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছে। উদ্যোক্তারা কম দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে মিলগুলোর আর্থিক কাঠামো নাজুক হয়ে পড়েছে। বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না হলে শিল্প আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে ট্যারিফ প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় সর্বনিম্ন গ্রেডের সুতার দাম ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডের সুতার দাম প্রতি কেজি ২৩ টাকা বাড়বে। তাই সুতায় ট্যারিফ মূল্য বহাল রাখা উচিত।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তা শিল্পের জন্য আত্মঘাতি হবে মন্তব্য করে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গত এক বছর ধরে প্রতি কেজি সুতায় ব্যবসায়ীরা ২০-৩০ সেন্ট লোকসান দিচ্ছে। এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে উৎপাদন খরচ দ্বিগণ বাড়বে। এ বর্ধিত ব্যয় টেক্সটাইল শিল্পে অন্য কোন খাতে সমন্বয় করার সুযোগ নেই। তাই গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নিশ্চিতভাবে এই খাত ধ্বংসের দোড়গোড়ায় গিয়ে পৌছবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসব সার্কুলারে ভালো ঋণ গ্রাহকদের সুযোগ দেয়া হয়নি। রেয়াতের যে কথা বলা হয়েছে, তা সাপলুডু খেলার মতো। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের পরও কেউ শিপমেন্টের কারণে একমাসের কিস্তি দিতে না পারলে রেয়াত সুবিধা পারে না। অথচ বিনাশর্তে ঋণ খেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে।
বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল পোশাকের বাজার রয়েছে। শুল্ক বাধার কারণে এসব বাজারে রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর ১৬-৩০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির জন্য ১৬ শতাংশ প্রণোদনা দিলে রফতানি বহুলাংশে বাড়বে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাত ক্রান্তিকাল পার করছে। এ খাতকে বিদ্যমান সব প্রণোদনার পাশাপাশি আগামী বাজেটে নতুন ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিলে শিল্প টিকে থাকবে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রণোদনা পেতে রফতানিকারকদের হয়রানি হতে হয়। নতুন বাজারের প্রণোদনাতেও শুভংকরের ফাঁকি আছে। ৫ শতাংশের জায়গায় ৩ দশমিক ২ শতাংশের বেশি প্রণোদনা পাওয়া যায় না। প্রণোদনা পেতে শুরুতে অডিট ফার্মের সার্টিফিকেট হয়রানি, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট বিভাগের হয়রানি ও সর্বশেষ স্থানীয় রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের কাছে হয়রানি হতে হয়। এতো সব হয়রানি পর প্রণোদনা পেতে দেড় থেকে ২ বছর সময় লাগে। এ হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রণোদনা সহজীকরণ করতে হবে।
বাজেটে সংগঠনগুলোর চাওয়া : পোশাক খাতের সংকট মোকাবিলায় আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ৩টি সংগঠনই। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে-রফতানির উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ বহাল, কর্পোরেট কর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত পণ্য ও সেবাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, ভ্যাট রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিলের বিপরীতে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি, নিরাপত্তা সামগ্রী আমদানিতে ৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে অব্যাহতি এবং বন্ড অডিটের জন্য দলিলাদি জমার সময়সীমা ৩ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পোশাক কারখানার জন্য ব্যাংক ঋণের সুদ হার এক অংকে নামিয়ে আনা এবং তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে সংগঠনগুলো। ঋণ পুন:তফসিলীকরণের মেয়াদ দ্বিগুণ এবং এ খাতে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যেসব কারখানা ইচ্ছাকৃত খেলাপি নয়, তাদের উৎপাদন কাজে ফিরে যাওয়া এবং ব্যবসা সচল রাখার সুযোগ হিসেবে ঋণ পুন:তফসিলের মেয়াদ দ্বিগুণ করা যেতে উচিত। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, সর্বোপরি অর্থনীতি সুফল ভোগ করবে। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। এছাড়া এলসি খোলা ও স্বীকৃতির কমিশন ২০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনগুলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোশাক

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ