Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেসবুকের কাছে কী তথ্য চায় বাংলাদেশ সরকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ৭:৫৩ পিএম

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের কাছে ১৯৬টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে। ফেসবুক এরই মধ্যে ৪৪% অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করেছে বলে তাদের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কী কারণে এবং ঠিক কী ধরনের তথ্য ফেসবুকের কাছে চেয়েছে? এবং ফেসবুক এর জবাবে সরকারকে কী বলেছে?

সরকার কোন তথ্যগুলো চায় এবং কেন:
সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত হত্যা, অপহরণ, জঙ্গিবাদের মতো বিভিন্ন অপরাধের তদন্তের জন্য বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেতে ফেসবুকের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইমের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান জানান, বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বিশেষ করে যেগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত সে বিষয়ে তদন্তে ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়েছে।

মি. আলিমুজ্জামান বলেন, "অনেক সময় দেশে ফেইক নিউজ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়, হত্যা বা হামলার হুমকি দেয়, ফেইক আইডি থেকে অনেক অবৈধ কাজ পরিচালনা করা হয়, আবার সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা কিংবা সাইবার হ্যারাসমেন্ট অথবা ব্ল্যাকমেইলিং- এ ধরনের ঘটনা তদন্তে আমাদের কিছু ফেসবুক আইডির তথ্যের প্রয়োজন হয়।"

প্রায়ই ফেসবুকের মাধ্যমে ফেইক নিউজ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
আরও পড়তে পারেন:
সরকারের নিয়ন্ত্রণ চেয়ে ফেসবুকের যত সুপারিশ

কোন কোন পাসওয়ার্ড হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ায়?

ফেসবুক ব্যবহার নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়াচ্ছে?

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাবস্ক্রাইবার তথ্য অর্থাৎ অভিযুক্তের পরিচয় বা অবস্থান সনাক্ত করা যায় এমন তথ্যগুলো দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।

অ্যাকাউন্টগুলোর ঠিক কোন কোন তথ্য প্রয়োজন সেগুলো নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় বলে ফেসবুক গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফেসবুক কিসের ভিত্তিতে তথ্য দেয়:
ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আসা এসব অনুরোধ আইন এবং পরিষেবার শর্তাবলী অনুসারে তারা বিবেচনা করে থাকে।

আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তথ্য দেয়ার বা প্রত্যাখ্যানের আগে প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খুব সাবধানে পর্যালোচনা করে।

মি. আলিমুজ্জামান বলেন, "ফেসবুক মূলত সঠিকভাবে সব উৎস ও কারণ যাচাই বাছাইয়ের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আমাদের গুরুত্বের ভিত্তিতে আগে বা পরে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।"

মূলত তথ্যগুলো চাওয়ার পেছনে যদি কোন শিশুর ক্ষতি, হত্যার হুমকি অর্থাৎ কারো গুরুতর শারীরিক আঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকির বিশ্বাসযোগ্য কারণ পাওয়া যায়, তাহলে ফেসবুক কোন দেরী ছাড়াই জরুরি ভিত্তিতে তথ্য প্রকাশ করে থাকে।

এই জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ বা ইমার্জেন্সি ডিসক্লোজারের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে আবেদন মিলে গেলে তারা সাধারণত ৩০ মিনিটের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করে থাকে বলে জানান মিস্টার আলিমুজ্জামান।

প্রতিদিন বিভিন্ন দেশ থেকে ফেসবুক আইডির তথ্য দেয়ার অসংখ্য অনুরোধ ফেসবুকের কাছে আসে।
ফেসবুকের জরিপে দেখা যায় যে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ ছয় মাসে, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোট ১৯৬টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ১৩০টির তথ্যই চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি অনুরোধের মাধ্যমে।

ফেসবুক মূলত জন নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের কারণে অভিযোগ আনা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক কোন সাড়া দেয় না বলেও তিনি জানান।

অভিযোগ যাই হোক সেসব তথ্য চাওয়ার অনুরোধ ওই দেশের সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেই আসতে হবে বলে ফেসবুকের গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

সেখানে বলা আছে, তথ্যগুলো এমন হতে হবে যেন সেগুলো সনাক্ত ও পুনরুদ্ধার করা যায়।

কেননা, ব্যবহারকারীরা যদি তথ্যটি মুছে ফেলেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

তবে পুলিশ জানিয়েছে তারা ফেসবুক কন্টেন্টের পরিবর্তে আইডির সাবস্ক্রাইবের তথ্য চেয়ে থাকে।
ফেসবুক কিভাবে অনুরোধ গ্রহণ করে থাকে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কারো ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের আইডি ট্র্যাকিং বা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফেসবুকের ল' এনফোর্সমেন্ট অনলাইন রিকোয়েস্টের মাধ্যমে তাদের অনুরোধ জমা দিতে পারে।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে কারো অনুরোধ ফেসবুক গ্রহণ করে না।

এ কারণে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সমস্যার মুখোমুখি হন, তাহলে তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তথ্য চাইতে হবে।

এছাড়া ফেসবুকের ঠিকানায় সরাসরি লিখিতভাবে অনুরোধ জানানোর সুযোগ রয়েছে।

তবে চিঠির মাধ্যমে আসা আবেদনের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।

 

সূত্র :বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ সরকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ