Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ সরকারকে ইইউ পার্লামেন্ট অবিলম্বে সংলাপের উদ্যোগ নিন

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অগ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান : হাউস অব কমন্সে সেমিনারে বক্তারা
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসে পার্লামেন্টের মিটিংয়ে উপস্থিত সকল এমপিরা একযোগে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন।
পার্লামেন্টে উপস্থিত এমপিরা উদ্বেগের সাথে বলেছেন, বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যদি পরিস্থিতি অনুধাবন করে সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নেয়, তাহলে দেশটির অর্থনীতি ও বাণিজ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কমিশনের সাউথ এশিয়ান ডিভিশনের হেড মারিয়া ক্যাস্টেলো তার বক্তব্যে পার্লামেন্টে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানা দিক দিয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মতে, দেশটির সকল স্তরের রাজনৈতিক সেক্টরকে সাথে নিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। মারিয়ার মতে, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যু যদি উন্নতি না হয় তাহলে এর প্রভাব পড়বে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতেও। সরকারকে অবিলম্বে বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসতে হবে।
মারিয়া ক্যাস্টেলো গভীর উদ্বেগের সাথে আরো বলেন, আসন্ন আসিয়ান সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জঙ্গি ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবেÑ যা অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গোলিয়াতে ১৫ ও ১৬ জুলাই ২০১৬-তে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশ সরকারকে ইউনিভার্সাল মূল্যবোধ, ডেমোক্রেসি এবং হিউম্যান রাইটস সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
জিন ল্যাম্বার্ট এমইপি তার বক্তব্যে বাংলাদেশে এম্বাসাডারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জরুরী ভিত্তিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারের গোচরীভুত করতে, যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসরোধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অথরিটি সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। এমইপি আইভান স্টেফানি বর্তমান পরিস্থিতিতে নাগরিকদের ক্র্যাকডাউনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কট্টরপন্থীদের গ্রেপ্তারের নামে গণগ্রেপ্তারে বিরোধী নেতাকর্মীদের ৩০০০ মতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন স্টিফেন ওক, ম্যূলার ম্যান। মিটিং এ ইউরোপীয় কমিশনের এক্সটার্নাল একশন সার্ভিসের সিনিয়র অফিসিয়্যাল, তাদের মধ্যে পাসক্যল আলফাসনো, স্যাম্যুয়েল সাইমন, বেলজিয়ামের বাংলাদেশ দূতাবাসের এম্বাসাডার ইসমত জাহান।
‘বাংলাদেশে অগ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান’
এদিকে বাংলাদেশের চলমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের সেমিনারকক্ষে সিটিজেন মুভমেন্টের উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সেমিনারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিগণ বলেন, বাংলাদেশে অগ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনহীন শূন্যতার কারণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বাংলাদেশে এখনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বাক-স্বাধীনতা ধসে পড়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশ সংক্রান্ত সর্বদলীয় কমিটির সহ-সভাপতি সায়মন ড্যানজুকের পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান মেইন এমপি, নিস ডাকিন এমপি, রিচার্ড ফোলার এমপি, পাওয়েল ব্লুমফিল্ড এমপি, জেমস কার্টেইজ এমপি, এ্যান্ডু স্টিভেন এমপি, এ্যান্ডু সিমেন্স এমপি, জিম পেট্রি এমপি, সিটিজেন মুভমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ মালিক, ব্যারিস্টার আবু বক্কর মোল্লা, মুফতি শাহ সদর উদ্দিন, সাংবাদিক মুসফিকুল ফয়সাল আনসারী, লর্ড হোসাইন ও লর্ড কোরবান আলী প্রমুখ।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান মেইন এমপি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে হাউস অব কমন্সে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। তিনি অভিযোগ করেছেন যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা ধসে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে কনজারভেটিভ, লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাট সবাই একমত পোষণ করেছে। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় এবং শিগগিরই সবার অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সব দলের সদস্য একমত হয়েছেন।
ব্রিটিশ এমপি সাইমন ডানুজক বলেন, ‘বাংলাদেশে যে কোনো সময় গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। বাংলাদেশে সুশীল সমাজ চুপসে যাচ্ছে এবং সুশীল সমাজের জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে জঙ্গিরা। ‘অতীতে মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে ক্রমেই জঙ্গিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ছুরি ও চাপাতির আঘাতে যাদের খুন করা হয়েছে তাদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী। যদিও বাংলাদেশ সরকার এই হত্যাকা-ের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা নাকচ করে দিয়েছে।’
সাইমন ডানজুক বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে অগ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। রিচার্ড ফোলার এমপি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিবিদদের মধ্যে অবশ্যই সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরস্পরের প্রতি আস্থা নেই। তিনি বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত না হলে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশ ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্রসফায়ার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-গুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। সন্ত্রাসী হামলার সঠিক তদন্ত না হওয়ায় দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা দিচ্ছে। পাওয়েল ব্লুমফিল্ড এমপি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি মর্মে এরই মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসতে হবে।
জেমস কার্টেইজ এমপি বলেন, বাংলাদেশে অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় সরকার গঠন করা হয়েছে। এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় না।
সিটিজেন মুভমেন্টের চেয়ারম্যান এমএ মালিক বলেন, বাংলাদেশে এখন ভারতের উপনিবেশ। ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এখনই শেখ হাসিনার গণবিরোধী সরকারকে হটাতে ব্যর্থ হলে জনগণ নিজেরা যদি মোকাবেলা করে তবে সেটি হবে আরো একটি বিপর্যয়।
জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, দেশে প্রতিদিন মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে, জনগণের বাক-স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সরকার হরণ করেছে। ৫ জানুয়ারির পর থেকে বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এটা বর্তমান সরকারেরই একটি পূর্ব পরিকল্পনা। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন থেকে বিশ্বসম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এই হামলা হচ্ছে। এর সঙ্গে সরকারি দলের লোকরাই জড়িত। বিভিন্ন জায়গায় হামলা করার সময় সরকারি দলের লোকরা ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচার হচ্ছে। এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদ-ে হয়নি বলে এরই মধ্যে বিশ্বসম্প্রদায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার ভিন্নমতকে পুরোপুরি দমন করেছে। এরই মধ্যে দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন এবং এক সময় বর্তমান সরকারি দলের সমর্থক ছিল, হালে ভিন্নমত পোষণকারী পত্রিকাও রেহাই পায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধ করা হচ্ছে মিডিয়া। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডের নামে পুলিশ হেফাজতে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এখনও কারাগারে তাকে নানা নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। সাংবাদিক শফিক রেহমান দীর্ঘদিন ধরে জেলে বন্দি।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউকে বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এমএ কায়সার, ইন্টারন্যাশনাল ল’ইয়ার্স ভয়েসের সভাপতি ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরে আলম বর্ষবরণ, মানবাধিকার সংগঠক মনিরুল হক, এসএম মাহবুবুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজ মল্লিক, কামাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার শাহজাহান, ব্যারিস্টার হামিদুল হক লিটন আফিন্দি, সলিসিটর নাসের খান অপু, জাহিদ হাসান গাজী প্রমুখ। সূত্র: শীর্ষনিউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ সরকারকে ইইউ পার্লামেন্ট অবিলম্বে সংলাপের উদ্যোগ নিন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ