পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্দিষ্ট সময়ের আগে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছে জাপানের তিন নির্মাণ কোম্পানি। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনায় প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ রাখে জাপানের তিন নির্মাতা কোম্পানি। এজন্য প্রকল্প মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোরও আবেদন করে তারা। কিন্তু সেই ৬ মাস তো দূরে থাক, আগের সময় এক মাস হাতে থাকতেই নির্মাণ শেষ করেছে তারা। কেবল তাই নয়, ‘ভেলকি’ দেখিয়েছে তিন সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়ে। যেখানে বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি টাকার অংক বাড়ানো নিত্যদিনের ঘটনার মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সেখানে জাপানি তিন কোম্পানির মেয়াদের আগেই কাজ শেষ করা এবং প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজ জাপানি কোম্পানির সেই দৃষ্টান্ত আলোর মুখ দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতীর সেতুর উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়েছে বলেও জানান তিনি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু গত মার্চ মাসে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন এসে আগে পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতুতে একলেনে উঠতো। পুরাতন সেতুটি বেশি ঢাল এবং যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানজটের আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়তেন যাত্রী ও চালকেরা। এক হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর রয়েছে ১৬টি পিলার। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। আর পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতু পুনঃনির্মাণের জন্য ব্যয় হবে ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে, উদ্বোধনের পর নতুন সেতু দুটি সকল প্রকার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলেও পুরাতন দুই সেতু আজ থেকে সংস্কারের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেত্তয়া হবে। অপরদিকে এই প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া অর্থে অন্য উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, আসন্ন ঈদ মৌসুমে যাত্রী সাধারন নির্বিঘ্নে চলাচলার কথা চিন্তা করে পুরাতন মেঘনা ও গোমতী দুই লেনের সেতু দুইটি চালু রাখার ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অনেক প্রকৌশলী খোলা রাখার পক্ষে থাকলেও সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। আজ থেকে পুরাতন দুটি সেতু সংঙ্কার কাজের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ মাসের জন্য সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এদিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ব্যবসায়ী, বাস মালিক ও বাস চালকসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেকের দাবী জানিয়েছেন, অত্যন্ত ঈদ মৌসুমে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নতুনটির পাশাপাশি পুরাতন দুটি সেতু যেন ঈদ পর্যন্ত খোলা রাখার দাবী জানান। তবে তাদের এই দাবীর সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যারা নিয়মিত ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নিয়মিত দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন সমস্যাসহ নানা কারণে অকারণে অনেক সময় যানজট তৈরী হয়। যা আমাদের নিয়মিত সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই ঈদ মৌসুমে নিবিঘের্ প্রতিটি যাত্রী সহজেই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগভাগি করতে পারে সেজন্য পুরাতন দুইটি সেতু চালু রাখার পক্ষে দাবী জানানো হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রাম ও প্রধান সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল সুগম করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু চার লেনের সুফল পাওয়ার আগেই যানজটের যন্ত্রণায় সব ম্লান হয়ে যায়। অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়তে থাকে। যানজটে একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি। চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে এক লেনে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে যানজট লেগেই থাকে। তার উপর সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির মুখে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর পাশেই মহাসড়কে জনদুর্ভোগ কমাতে আরও তিনটি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক বিভাগ। ২০১৬ সালে কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল হলেও কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতুর কাজ চলতি বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে শেষ হলে সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দুই লেনের গোমতী ও মেঘনা সেতুতে ওঠার সময় সেতুর দুই পাশে যানজট তীব্র হতে থাকে। বিশেষ করে শুক্রবার ছুটির দিন অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের সময় যানবাহনের জটলা সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় চালক ও যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে রোগী, নারী, শিশু, বৃদ্ধদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে দ্বিতীয় মেঘনা এবং কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দ্বিতীয় গোমতী সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এই সেতুগুলো যৌথভাবে নির্মাণ করেছে জাপানের ওবায়েশি করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন, জেএফআই করপোরেশন এবং আইএইচআই কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর জুলাই মাসে সেতু দুটির নির্মাণ শেষ করার কথা। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো আট হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। সেতু দুটির প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান বলেন, কাজের প্রতি জাপানিদের নিষ্ঠা আর সততায় সেতু দুটির কাজ শেষ হয়েছে ঈদের আগেই। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ায় প্রকল্পের নির্ধারিত ব্যয় থেকে অন্তত ৭৩৮ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। ব্যক্তি জীবনের মতো কর্মক্ষেত্রেও জাপানিরা মিতব্যয়ী হওয়ায় খরচ কম হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সেতু দুটি আজ উদ্বোধনের পর আসন্ন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা স্বস্তিতে নির্ধারিত সময়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন এই প্রকল্প কর্মকর্তা।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকায় যানজট তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এক ঘন্টার পথ যেতে সময় লাগে তিনঘন্টা। দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু আজ উদ্বোধন হলে যানজট অনেকাংশে যাবে বলে তারা মনে করেন। এতে করে সাধারন মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। এ সেতু দুটি চালু হলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ বিভাগসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন দ্রুত, সহজ ও নিরাপদ হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করছে। মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সংযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম। দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত জাতীয় মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। চার লেনের এই মহাসড়কের যানবাহনগুলো দুই লেনের সেতু অতিক্রম করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যানজটের মুখে পড়ে। এ মহাসড়কে শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও গোমতী নদীর ওপর কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু যথাক্রমে ১৯৭৭, ১৯৯১, ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে মহাসড়কের ২৫তম কিলোমিটারে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের মেঘনা নদীর ওপর মেঘনা সেতু এবং ৩৭তম কিলোমিটারে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি স্প্যানে ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের গোমতী নদীর ওপর গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪১ মাসে কাজ সম্পন্ন হয়।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।