দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী সা. বলেন, পবিত্র রমযান উপলক্ষ্যে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। ১। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। ২। সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে। ৩। জান্নাতকে রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন সজ্জিত করা হয় এবং আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দাগণ দুনিয়ার ক্লেশ-যাতনা দূরে ফেলে রেখে অতিশীঘ্রই আমার নিকট আসবে। ৪। রমযানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়। যার দরূন সে ঐসব পাপ করাতে পারে না, যা অন্য মাসে করানো সম্ভব। ৫। রমযানের শেষ রাত্রে রোজাদারের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। সাহাবীগণ আরজ করলেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ক্ষমা কি শবে কদরেও হয়ে থাকে? রাসূল সা. বললেন, না; বরং নিয়ম হলো শ্রমিক কাজ শেষ করার পরই পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। (আহমদ, বায়হাকী)
রোজা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. বলেছেন, রোজা এবং কুরআন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন এবং কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বাঁধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতএব উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। (মেশকাত শরীফ)
ত্রবার জেনে নিই রোজার জরুরি মাসায়েল
রোজার নিয়ত করা ফরজ: রমযানের রোজার জন্য নিয়ত করা ফরজ। আর নিয়ত হচ্ছে অন্তরের ইচ্ছার নাম। সুতরাং অন্তরে রোজা রাখার দৃঢ় সংকল্প করার নামই হচ্ছে নিয়ত। মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম। আবার মুখে নিয়ত করলেও আরবিতে হওয়া জরুরি নয়। যে কোনো ভাষায় নিয়ত করা যায়। বাংলায় নিয়ত এভাবে করা যায়। আমি আজ রমযানের রোজার নিয়ত করলাম। (হিন্দিয়া,-১, পৃ. ১৯৫)
নিয়তের সময়: রমযানের রোজার নিয়ত করার সময় হল রাতের শুরু থেকে দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত। তবে রাত্রেই নিয়ত করে নেওয়া উত্তম। (বাদাইউস সানাইয়ি)
সাহ্রী খাওয়া নিয়তের স্থলাভিষিক্ত: রোজা রাখার জন্য রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে সাহ্রী খাওয়া সুন্নত এবং যেহেতু আমাদের দেশে রোজা ছাড়া এ সময়ের মধ্যে খানা খাওয়ার নিয়ম নেই, তাই এ সময়ের মধ্যে সাহরী খাওয়াই নিয়তের স্থলাভিষিক্ত। যদিও মুখে নিয়তের কথা উল্লেখ করা না হয়। (শামি, খ-২, পৃ. ৪১৯)
রমযান মাসে অন্য রোজার নিয়ত করা: রমযান মাসে নফল বা কাযা রোজার নিয়ত করলেও রমযানের রোজা আদায় হবে। নফল বা কাযা রোজা আদায় হবে না। (শরহুন্নেকায়া)
কাযা-কাফ্ফারা রোজার নিয়ত: রমযানের ক্বাযা রোজার জন্য আগের দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর থেকে পরের দিন সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে কাযা- কাফ্ফারা রোজার নিয়ত করা জরুরি। যদি সূর্য উদয় হওয়ার পর নিয়ত করা হয়, তাহলে উক্ত রোজা শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে অনির্দিষ্ট মান্নত রোজা বা কাফ্ফারা রোজার হুকুমও একই। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির রোজা: যে রোগের দ্বারা প্রাণ বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর রোজা রাখা আবশ্যক নয়। এমনিভাবে ‘সফরে’ থাকাবস্থায় মুসাফির ব্যক্তির উপরও রোজা আবশ্যক নয়। তবে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর ও মুসাফির ব্যক্তি সফর থেকে ফেরার পর উক্ত রোজাগুলোর কাযা করতে হবে। অতএব সফরে যদি কষ্ট না হয়, তাহলে মুসাফির ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা উত্তম। যাতে সে কুরআন-হাদিছে বর্ণিত ফযিলতের অধিকারী হতে পারে এবং পরবর্তীতে ক্বাযা রোজা রাখার কষ্ট অনুভব করতে না হয়। (হেদায়া)
রোজা অবস্থায় চোখে ঔষধ বা ড্রপ ব্যবহার: চোখে ড্রপ, ঔষধ, সুরমা বা মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। কারণ, চোখে ঔষধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙ্গার বিষয়টি হাদিছ ও ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত। (যাদীদ ফিক্বহি মাসায়েল, পৃ. ১৮৩)
মুখে ঔষধ ব্যবহার করা: মুখের অভ্যন্তরে কোনো ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তা যত স্বল্প পরিমাণই হোক না কেন। অতএব, কেউ যদি রমযানে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু গিলে ফেলে, তাহলে তার উপর উক্ত রোজার কাযা-কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান) রোজা অবস্থায় অক্সিজেন ব্যবহার: নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু শরীরের ভিতর বাহির থেকে কোন কিছু প্রবেশ করার যে চার নালি রয়েছে নাক তন্মধ্যে অন্যতম। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, খ-১, পৃ. ২৫৩) (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।