পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদযাত্রায় প্রতি বছরই সড়কে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ফিটনেসবিহীন যান, অতিরিক্ত যাত্রী, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণহীন গতি ও দুর্বল সড়ক অবকাঠামোর কারণে প্রতি বছরই প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ঈদুল ফিতরে ঘরে ফেরার পথে ২০১৬ সালে সড়কে প্রাণ হারান ১৮৬ জন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭৪। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৩৯ জন। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে শুধু ঈদুল ফিতরেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮০০ জন। বছর বছর দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ করেছে। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দফা সুপারিশ করা হয়।
প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য প্রতি বছরই কয়েক লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে যায়। এ লাখ লাখ মানুষের সিংহভাগ যাতায়াত করে সড়কপথে। সড়কপথে ঈদ আনন্দের সেই যাত্রা নিমিষেই সব কিছু ম্লান করে দেয় যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের সময় চালকদের বিরুদ্ধে একটানা গাড়ি চালানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং সাথে চালকের ক্লান্তিতেই ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, পরিবহন চালকরা সারা বছরের আয় ঈদের সময়টাতেই করে নেয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য তারা একটানা গাড়ি চালান। দূরপাল্লার রুটে গাড়ি চালানোর সময় প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর চালককে বিশ্রাম দেয়ার নিয়ম থাকলেও আমাদের দেশে তা মানা হয় না। উল্টো ঈদের সময় তাদের টানা একাধিক ট্রিপ দিতে বাধ্য করা হয়। একটানা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত চালকের পক্ষে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার ধরনগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে ঈদের পর। ফিরতি যাত্রায়। এর প্রধান কারণ হলো সে সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা ঢিলেঢালা থাকে। মহাসড়কে বাড়ে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা। এসব অব্যবস্থাপনা সড়ক দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দেয়। চালকদের ক্লান্তিও দুর্ঘটনা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত দক্ষ চালক নেই। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। ঈদের সময় এটি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। এ অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগে অদক্ষ চালকরা মহাসড়কে নেমে পড়ে। একইভাবে আনফিট গাড়িগুলোই মহাসড়কে নামে। যেগুলো দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দেয়।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে যানবাহনের তুলনায় লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। গত বছর ৩৪ লাখ মোটরযানের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ। চলতি বছর লাইসেন্সধারী চালকের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা গড়ে আরও বেড়েছে। এর অর্থই হলো ঈদে বেশিরভাগ গাড়িতে লাইসেন্সধারী চালক থাকে না। আবার এক রুটের গাড়ি আরেক রুটে চলে। সেই সাথে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুলপাল্লার রুটে চলাচল করে। এসব গাড়িই মূলত দুর্ঘটনার শিকার হয়।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরে চালকদের বিাংদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ডিআইজি হাইওয়ে, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতিকে দায়িত্ব দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ-সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যথাযথ শ্রেণীর লাইসেন্স ব্যতীত অনভিজ্ঞ গাড়িচালক মহাসড়কে গণপরিবহন চালাতে পারবে না। গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এবার ঈদে মহাসড়কে লাইসেন্সবিহীন কোনো চালক থাকবে না।
গত ঈদেও এমন নির্দেশনা দিয়েছিল মহাসড়ক বিভাগ। অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের হুমকি দেন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় অভিযান। ভুক্তভোগিদের ধারণা, এবারো ঈদযাত্রায় মহাসড়কে থাকবে অবৈধ ও অদক্ষ চালক।
ঈদের সময় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দেয় মহাসড়কে চলা ধীরগতির যানবাহন িিথ্র হুইলার। এজন্য কয়েক বছর আগেই ২২টি মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এসব বাহন নিষিদ্ধ হলেও মহাসড়কে চলাচল ঠেকাতে এখন পর্যন্ত সক্ষম হয়নি সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
সওজ সূত্র জানায়, দেশের মহাসড়কগুলোয় ৬৯৩টি ঝুঁকিপূর্ণ মোড় চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কে ৩৬৫টি ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩২৮টি। ৬৯৩টি মোড়ের মধ্যে ৩৯১টি অর্থাৎ ৫২ শতাংশই তিন রাস্তার মোড়। বাকিগুলো চার রাস্তার মোড়। এর মধ্যে রয়েছে ৬১টি গোলচক্কর। সওজের জরিপে আরো উঠে এসেছে, জাতীয় মহাসড়কের ৫৭ দশমিক ৫ ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল। মহাসড়কে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এসব মোড় সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে জানিয়েছেন সওজ কর্মকর্তারা।
এদিকে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়িয়ে দেয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ঈদকে সামনে রেখে মিনিবাসগুলোকেও মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজের বাসগুলোকেও ঈদের সময় ঢাকা থেকে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট পর্যন্ত চলতে দেখা গেছে। গত বছর ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাওয়ার পথে বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসকে দুর্ঘটনায় কবলিত হতে দেখা গেছে। এর বাইরে ভাঙাচোরা সড়ক, সড়কের নকশাগত ত্রুটিসহ আরো বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ২০ প্রস্তাব
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সোমবার গণমাধ্যামে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদ আনন্দ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় বহুলোকের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটিয়ে সড়ককে নিরাপদ করার জন্য দীর্ঘগতি ও দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালুর দাবি জানান তিনি। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে রেশনিং পদ্ধতিতে ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা গেলে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা সক্ষম হবে মনে করে সংগঠনটি। এই জন্য সংগঠনর পক্ষ থেকে ২০ দফা প্রস্তাবনা অনুসরণের দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবগুলো হলো- জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা। মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা। গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা। টোল প্লাজার সবকটি বুথ চালু করা ও দ্রুত গাড়ি পাসিংয়ের ব্যবস্থা করা। মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী হাটবাজার উচ্ছেদ করা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার ও উল্টোপথের গাড়ি চলাচল বন্ধ করা। মহাসড়ক অবৈধ দখল ও পার্কিংমুক্ত করা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। অযান্ত্রিক যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করা। ঈদের আগে ও পরে সড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক ঈদযাত্রায় নিষিদ্ধ করা। বিরতিহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ করা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুটপাত, জেব্রাক্রসিং, পথচারী সেতু, আন্ডারপাস, ওভারপাস দখলমুক্ত করে যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের ব্যাবস্থা রাখা। ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা। ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, নগরীর প্রবেশমুখ ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন সমূহে দ্রুত গাড়ি পাসিংয়ের ব্যবস্থা করা। যাত্রা বিরতিকালে খাবার হোটেলে যাত্রীসাধারণ যাতে মানসম্পন্ন সাশ্রয়ীমূল্যে সেহেরি ও ইফতার গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন দ্রুত উদ্ধার আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা। অপ্রত্যাশিত যানজটের কবলে আটকে পড়া যাত্রীদের টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা রাখা, ইফতারির সুবিধার্থে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা। জাতীয় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন, মিডিয়ান গ্যাপ ও বাঁকে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা রাখা। এবং সড়কে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ঈদের ছুটি বাতিল করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।