মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তান ও তুরস্ক তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায় সূচনা করে স¤প্রতি তাদের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আঙ্কারা সফরের পর থেকে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হচ্ছে, দ্রæত তাতে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত নিরাপত্তাগত গতিশীলতার সাথে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ দুটি যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী মহড়া চালাচ্ছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে উজবেকিস্তানের সাথে মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
পার্টনারশিপ শিল্ড ২০১৯ সামরিক মহড়ায় প্রক্সি যুদ্ধকৌশলের দিকে নজর দেয়া হয়। পূর্ব উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত তিন জাতির এই মহড়ার পরবর্তী অংশ অনুষ্ঠিত হবে তুরস্কে। আঙ্কারা-ইসলামাবাদ সমীকরণ সম্পর্কে তুর্কি বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল হাসান কুচুকাকিয়ুজ বলেন, ভয়াবহ শোচনীয় অবস্থাসহ সব পরিস্থিতিতে তুরস্কের পাশে থেকেছে পাকিস্তান। গত মাসে পাকিস্তানের রিসালপুর এয়ার ফোর্স ঘবøটিতে অফিসারদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুই দেশ ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময় কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তারা ২০০৩ সালে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক সংলাপও প্রতিষ্ঠা করেছে। সময়ের পরিক্রমায় দুই দেশ নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্ব ও দ্বিপক্ষীয় সামরিক ব্যবস্থায় আবদ্ধ হয়েছে। এটি দিন দিন জোরালো হয়েছে।
বর্তমানে আমরা যে কৌশলগত সম্পর্ক দেখি, তা নজিরবিহীন এবং ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবনতিশীল ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে আঙ্কারা ও ইসলামাবাদ একসাথে থাকার পরিকল্পনা করেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও ইরান ও কাতারের সাথে আরব-বিশ্বের উত্তেজনায় তুরস্কের আশপাশের এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, আর আফগানিস্তানের স্থায়ী অস্থিতিশীলতার কারণে পাকিস্তান সন্ত্রাসী হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যেই আরো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গত বছর থেকে পাকিস্তান ও তুরস্ক উভয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়া। সিরিয়া নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে ইস্তাম্বুলের মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে, আর আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের কারণে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সবসময় ওঠানামা করতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬এ বিমান আধুনিকায়ন করতে দ্বিধায় থাকার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের কাছে সহায়তা চেয়েছে পাকিস্তান। তুরস্ক এখন চীনের পর পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি হয়েছে তাতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য তুরস্ক চারটি মিলজেম এডা কোরভেটেস সরবরাহ করবে। আর দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে, তাতে করে পাকিস্তানের কাছে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে ৩০টি টার্কিশ টি১২৯ এটাক হেলিকপ্টার বিক্রি করবে তুরস্ক। একইসাথে তুরস্ক স¤প্রতি পাকিস্তানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ বিমান কিনেছে।
গত বছর ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের ‘গ্রে লিস্টে’র সময় পাকিস্তানের একমাত্র সমর্থক ছিল তুরস্ক। দেশটি পাকিস্তানের ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স এক্সিবিশন ও সেমিনার (আইডিইএএস)-এ নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে দেশটি। এসবের মাধ্যমে ইসলামাবাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্রে পরিণত হয়েছে আঙ্কারা। এদিকে পূর্ব ও পশ্চিমকে বিভক্তকারী আঙ্কারা ব্রিগেডকে সহায়তা করে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সাথে স¤প্রসারিত সামরিক সম্পর্কের রেশ ধরে প্রাচ্যে তুরস্কের সুযোগ বাড়ছে, দক্ষিণ এশিয়ার সাথে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতায় উভয় দেশ আরো নানা ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা বাড়াতে পারে।
অদূর ভবিষ্যতে ইস্তাম্বুল ট্রাইপ্যাটরিট সামিট (তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান) হবে আঙ্কারায়। আফগান জটিলতা অবসানে তুরস্ক আরো বেশি ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় বিশ্বের অংশ হিসেবে ইসলামাবাদ ও তুরস্ক ব্রিগেডের উভয় অংশে একে অপরকে সহায়তা করতে পারে।
কৌশলগত সম্পর্কের পাশাপাশি আরো বেশি অর্থনৈতিক লেনদেনের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে এবং একটি স্ট্র্যাটেজিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (এসইএফ)-এর কথাও ভাবা হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রয়োজন প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ, আর তুরস্কের আগ্রহ নির্মাণ প্রকল্পে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগামী ৫ বছরে ৫০ মিলিয়ন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।
দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের আকার অন্তত ৫ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনায় এসইএফ শিগগিরই কাজ শুরু করবে, অবাধ বাণিজ্য চুক্তিতে সই নিয়েই আলোচনা চলছে। এর পাশাপারি ২০১৮ সালের এপ্রিলে টিআইআর ব্যবস্থার আওতায় পাকিস্তান সরাসরি ইস্তাম্বুল-তেহরান-ইসলামাবাদ বাণিজ্য করিডোরের প্রস্তাব করেছে। এটি পূর্ণভাবে কাজ শুরু করলে দ্রæতগতির রুট সংযুক্ত করবে ইরান, মধ্য এশিয়া তুরস্ক ও ইউরোপকে এবং বাণিজ্যের সম্ভাবনা হবে সীমাহীন। ভারতবর্ষে তুর্কি-বংশোদ্ভূত মোগল সম্রাটদের সময় থেকে দুই দেশের মধ্যকার চলমান সম্পর্ক নানাভাবে সম্পৃক্ত। এমনকি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দুর শিকড় তুর্কি ভাষায় থাকার কারণে এই সম্পর্ক অত্যন্ত মূল্যবান। উভয় দেশ আবেগময় বন্ধনে আবদ্ধ। এর একটি সেরা উদাহরণ হলো তুর্কি নেতা কামাল আতাতুর্কের নামে পাকিস্তানি নগরীর নামকরণ করা। আবার পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নার নামে আঙ্কার একটি প্রধান অ্যাভেনিউর নামকরণ করা হয়েছে জিন্নাহ ক্যাদেসি। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।