নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসী এক দলকেই দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুড়িয়ে প্রতাপের সাথেই ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। প্রলেপ পড়েছে আগের সকল ‘ফাইনাল’ ব্যর্থতার কালিমায়। সপ্তমে এসে কেটেছে সেই জুজু। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বোর্ডের সামনে গগনবিদারী চিৎকারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে টাইগাররা। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহরা ছুঁয়েছেন রূপালি ট্রফি। ডাবলিনেই নতুন করে লেখা হলো বাংলাদেশের ইতিহাস। যে ইতিহাস সাক্ষ দিল আরেকটি ইতিহাসের।
সালটি ১৯৯৮। মাস মে, তারিখ ১৭। ভারতের হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। কোকা-কোলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ। মাঝে পেরিয়ে গেছে ২১টি বছর। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এশিয়া কাপ ও ত্রিদেশীয় সিরিজ মিলিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ছয়বার ফাইনাল খেলেও কোনো শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের।
সব মিলিয়ে সপ্তম ফাইনালে এসে পেল সেই ‘লাকি’র দেখা। সেই লাকি শিরোপার স্বাদেও মিশে রইলো সৌভাগ্যের ছোঁয়া। বৃষ্টি বিঘি্নত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সিরিজের শিরোপা জিতলো মাশরাফির দল।
ওয়ানডেতে এটি ছিল বাংলাদেশের পঞ্চম ফাইনাল, দুটি আছে টি-টোয়েন্টিতে। এর আগে বাংলাদেশ হেরেছে সবকটি ফাইনালে। হারের ধরনও ছিল বেদনায় মাখা। তিনটি ফাইনালে শেষ বলে হেরেছে বাংলদেশ, দুটিতে হেরেছে শেষের আগের ওভারে। বারবার তাই হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে গেছে শিরোপা। ছয় ফাইনাল হারের পাঁচটিতেই ছিলেন মাশরাফি, নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনটিতে। নাগালে পেয়েও হারিয়ে ফেলার হতাশায় মুষড়ে পড়ার যাতনা তার চাইতে আর কে ভালো বোঝে! তবে এবার সেই আক্ষেপ ঘুঁচেছে। সেই মে মাসের ১৭ তারিখেই প্রথম কোন সিরিজের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলো বাংলাদেশ।
জয়ের লক্ষণ কি শুরু থেকেই ছিলো না! প্রথমত, এই প্রথম উপমহাদেশের বাইরের কোনো দলের বিপক্ষে ফাইনাল। আগের ছয় ফাইনালের তিনটিতে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, দুটিতে শ্রীলঙ্কা ও একটিতে পাকিস্তান। দ্বিতীয়ত, সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচেই টসভাগ্য বিপক্ষে গিয়েছে মাশরাফির। এদিন ঠিকই টস ভাগ্যে হাসলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মেঘলা আকাশ দেখে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল মাশরাফি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুটা আঁটসাঁট হলেও শেই হোপ আর সুনিল আমব্রিস সতর্ক শুরুর পর ঝড় তুলতে শুরু করেন। তাতে তরতরিয়ে বাড়ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান। প্রথম ৫ ওভারে যেখানে উঠল ১৫, সেখানে ২০.১ ওভারে ১৩১ রান! দুই থিতু হওয়া ওপেনার হোপ ৫৬ বলে ৬৮ এবং আমব্রিস ৬৫ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। যেভাবে এগুচ্ছিলেন তাতে রানপাহাড়ের সম্ভাবনাই জাগছিল ম্যালাহাইডে। তবে সেসব ভাবনাকে দূরে ঠেলে ৩ ঘন্টা ২০ মিনিটে তিন পরস্ত ভারী বর্ষণের ফলে খেলা বন্ধ থাকে সাড়ে ৫ ঘন্টা। আর খেলা সম্ভব না হলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল হিসেবে শিরোপা উঠত বাংলাদেশের হাতেই।
কিন্তু ওভাবে শিরোপা জয় করলে মনের মধ্যে একটা খচখচানি রয়েই যেত। সহায় হলো প্রকৃতি। খেলা শুরু হল বটে তবে ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। বাকি ৩ ওভার ৫ বল খেলে হোপের উইকেট হারিয়ে উইন্ডিজ তোলে ১৫২। কিন্তু ডাকওয়ার্থ ও লুইস নিয়মে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০। সেই দুরূহ লক্ষ্য ৭ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে বিজয়োল্লাসে মেতেছে বাংলাদেশ।
দলকে জেতাতে সবচেয়ে বড় অবদান ওপেনার সৌম্য সরকারের। ঝড় তুলে ২৭ বলে ফিফটি করে তিনি দেখিয়েছিলেন পথ। আর দলের চাপের মধ্যে নেমে আরেকটি ঝড়ো ফিফটি করে কাজটা সেরেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ৫২ রানে। মাত্র ২১ বলে ফিফটি তুলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় দ্রæততম ফিফটির রেকর্ডও গড়েন তিনি। যেখানে চার ছিল দুটি আর ছক্কার মার ছিল ৫টি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২১ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। মুশফিকুর রহিমের ২২ বলে ৩৬ রানের ইনিংসও ছিল মহামূল্যবান।
বিশ্বকাপ ‘প্রস্তুতি মঞ্চ’ হিসেবে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো মাশরাফির দল। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সময়টা দারুণ কাটছে বাংলাদেশের। সবশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জিতেছে টাইগারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দেশের মাটিতে জিতেছে সবশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজ।
ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রাথমিক পর্বের দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ ও ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। পরেরটিতে তিনশ ছুঁই ছুঁই স্কোর ৬ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী।
ব্যাটসম্যানরা তো বটেই সিরিজে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ে এসেছে নতুন পেসার আবু জায়েদ রাহী। অভিষেকে স্লান থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই ছড়িয়েছেন আলো, তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট। বিশ্ব মঞ্চে যাবার আগে ফিরে পাওয়া গেছে ‘হারিয়ে যাওয়া’ সেই আগের মুস্তাফিজুর রহমানকেও। এবার বিশ্বকাপে টাইগারদের হুঙ্কার দেখার অপেক্ষা।
স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ফাইনাল
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টস : বাংলাদেশ, ডাবলিন
উইন্ডিজ ইনিংস রান বল ৪ ৬
হোপ ক মোসাদ্দেক ব মিরাজ ৭৪ ৯৬ ৬ ৩
আমব্রিস অপরাজিত ৬৯ ৭৮ ৭ ০
ব্রাভো অপরাজিত ৩ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, নো ১, ও ৩) ৬
মোট (এক উইকেট, ২৪ ওভার) ১৫২
উইকেট পতন : ১-১৪৪ (হোপ)।
বোলিং : মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফউদ্দিন ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৫-০-৫০-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ৪-০-২২-১, সাব্বির ২-০-১২-০।
বাংলাদেশ (লক্ষ্য : ২৪ ওভারে ২১০) রান বল ৪ ৬
তামিম ক হোল্ডার ব গ্যাব্রিয়েল ১৮ ১৩ ২ ০
সৌম্য ক কট্রেল ব রেইফার ৬৬ ৪১ ৯ ৩
সাব্বির এলবি ব গ্যাব্রিয়েল ০ ২ ০ ০
মুশফিক এলবি ব রেইফার ৩৬ ২২ ২ ২
মিঠুন এলবি ব অ্যালান ১৭ ১৪ ১ ১
মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১৯ ২১ ১ ০
মোসাদ্দেক ৫২ ২৪ ২ ৫
অতিরিক্ত (ও ৫) ৫
মোট (৫ উইকেট, ২২.৫ ওভার) ২১৩
উইকেট পতন : ১-৫৯ (তামিম), ২-৬০ (সাব্বির), ৩-১০৯ (সৌম্য), ৪-১৩৪ (মুশফিক), ৫-১৪৩ (মিঠুন)।
বোলিং : নার্স ৩-০-৩৫-০, হোল্ডার ৪-০-৩১-০, রোচ ৫-০-৫৭-০, গ্যাব্রিয়েল , রেইফার , অ্যালান ।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মেসাদ্দেক হোসেন।
ফাউন্ডেশন অব দ্য ম্যাচ : সৌম্য সরকার।
সিরিজ : চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : শেই হোপ।
সিরিজের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
শাই হোপ ৫ ৫ ৪৭০ ১৭০ ৯৪.০০ ২/২
সুনিল আমব্রিস ৫ ৪ ২৭৮ ১৪৮ ৯২.৬৬ ১/১
পল স্টার্লিং ৩ ৩ ২০৭ ১৩০ ৬৯.০০ ১/১
সৌম্য সরকার ৩ ৩ ১৯৩ ৭৩ ৬৪.৩৩ ০/৩
অ্যান্ডি বালবির্নি ৩ ৩ ১৮৪ ১৩৫ ৬১.৩৩ ১/০
বোলার ম্যাচ রান উইকেট সেরা গড় ৪/৫
শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ৪ ১৭৯ ৮ ৩/৪৪ ২২.৩৭ ০/০
অ্যাশলে নার্স ৫ ২২২ ৭ ৪/৫১ ৩১.৭১ ১/০
মুস্তাফিজুর রহমান ৩ ১৭৭ ৬ ৪/৪৩ ২৯.৫০ ১/০
মাশরাফি মর্তুজা ৪ ১৮৪ ৬ ৩/৪৯ ৩০.৬৬ ০/০
বয়ড র্যানকিন ২ ১১৩ ৫ ৩/৬৫ ২২.৬০ ০/০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।