মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সিরিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মুহাম্মদ গাবাসের কব্জিতে দড়ি বেঁধে কয়েক ঘন্টা ঝুলিয়ে রেখেছিল, পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল ও মুখের ভেতরে অস্ত্রের নল ঠেসে ধরেছিল। গাবাস ছিলেন আলেপ্পোর একজন আইনের ছাত্র, তিনি বারবার তার আসল অপরাধের কথা স্বীকার করেছিলেনঃ তিনি শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন। ১২ দিন ধরে তার উপর নির্যাতন চলে যতক্ষণ না তিনি বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে ভুয়া স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, এটা ছিল শুরুমাত্র।
তাকে বিমানে করে দামেস্কের মেজ্জি বিমান ঘাঁটির একটি জনাকীর্ণ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রক্ষীরা তাকে ও অন্যান্য বন্দীদের উলঙ্গ অবস্থায় একটি বেড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখত, শীতের রাতে তাদের গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হত ঠান্ডা পানি। গাবাস ও বেঁচে যাওয়া অন্য সহবন্দীরা বলেন, ডিনারের পর তার সহকর্র্মীদের আনন্দ দেয়ার জন্য নিজেকে হিটলার বলে ঘোষণা করা একজন অফিসার বন্দীদের কুকুর, গাধা ও বিড়ালের মত আচরণ করতে বলতেন। যারা ঠিকমত কুকুরের ঘেউঘেউ বা গাধার ডাক দিতে পাতেন না তাদের পেটানো হত।
তিনি বলেন, একটি সামরিক হাসপাতালে পা কেটে ফেলা এক রোগী যখন পেইন কিলার দেয়ার জন্য আকুতি জানাত তখন একজন নার্সকে তার মুখে আঘাত করতে দেখেছেন। আরেকটি কারাগারে তিনি রোগ, নির্যাতন ও অবহেলায় মাত্র এক মাসে ১৯ জন বন্দিকে মারা যেতে দেখেন।
৩১ বছর বয়স্ক গাবাস বলেন, আমি ছিলাম ভাগ্যবান। একজন জজকে ঘুষ দিয়ে মুক্তি লাভের আগে পর্যন্ত তাকে ১৯ মাস কারাগারে কাটাতে হয়।
আট বছরের বিদ্রোহের পর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এখন বিজয়ী হয়েছেন বলা যায়, এর পিছনে প্রধান ভ‚মিকা পালন করেছে গোপন, নির্বিচার গ্রেফতার ও নির্যাতনের কেন্দ্র কারাগারগুলো। যখন রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে সিরিূয়ার সামরিক বাহিনী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করেছে তখন সরকার বেসামরিক লোকজনের ওপর নিষ্ঠুর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষকে অস্বাস্থ্যকর কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সেগুলোতে হাজার হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে ও মারা গেছে।
একটি নিরপেক্ষ মনিটরিং গ্রুপ সিরিয়ান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের মতে, প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার লোকের খোঁজ নেই, তারা হয় নিহত নয় কারাগারে আছে। প্রায় ১৪ হাজার লোক নির্যাতনে নিহত হয়েছে। বহু বন্দি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মারা গেছে যে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা একে ‘নির্মূলকরণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এখন যুদ্ধ যখন শেষের পথে তখন বিশে^র মনোযোগ সিরিয়ার দিক থেকে সরে গেছে এবং বিভিন্ন দেশ সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে শুরু করেছে, সে সময় গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা বৃদ্ধি পেয়ে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। সিরিয়ায় যুদ্ধের প্রথম দিকের বছরগুলোতে এর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু সিরিয়ান নেটওয়ার্ক গত বছর ৫ হাজার ৬০৭ জন লোকের গ্রেফতারের কথা বলেছে যাকে তারা নির্বিচার গ্রেফতার বলে আখ্যায়িত করেছে। প্রতি সপ্তাহে গ্রেফতার হয়েছে ১শ জন এবং আগের বছরের তুলনায় গ্রেফতারের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেশি।
বন্দিরা সম্প্রতি গোপনে বাইরে খবর পাঠিয়েছেন যে শত শত বন্দিকে হত্যার জন্য সাদনায়া কারাগারের বধ্যভ‚মিতে পাঠানো হয়েছে। নতুন মুক্তি পাওয়া বন্দিরা জানান, হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অপহরণ ও হত্যার খবর পাশ্চাত্যের মনোযোগ লাভ করেছে। কিন্তু সিরিয়ার কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা আইএসের বন্দিদের চেয়ে বহুগুণ বেশি হলেও ও তাদের হত্যা করা সত্তে¡ও সে ব্যাপারে পাশ্চাত্য নিশ্চুপ। সিরিয়ান নেটওয়ার্কের তথ্যমতে, ৯০ শতাংশ লোক নিখোঁজ হওয়ার জন্য সরকার দায়ী। তবে, সিরিয়া সরকার ধারাবাহিক নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছে।
এদিকে নতুন আবিষ্কৃত সরকারি মেমোতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট বাশারের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করা কর্মকর্তারা গণ আটকের নির্দেশ দাতা ও তারা সব নিপীড়ন সম্পর্কে জানেন।
অলাভজনক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার ও জবাবদিহিতা কমিশনের যুদ্ধাপরাধ তদন্তকারীরা দমনের আদেশ ও আটক ব্যক্তিদের হত্যার আলোচনা সংক্রান্ত সরকারী মেমো খুঁজে পেয়েছেন। এসব মেমোতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বাশারের কাছে সরাসরি রিপোর্টকারী কেন্দ্রীয় সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরাসহ শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়েছেন।
একটি সামরিক মেমোতে নির্যাতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। অন্যান্য মেমোতে বন্দিদের মৃত্যুর রিপোর্ট রয়েছে। পরে সামরিক পুলিশের পক্ষ ত্যাগকারী একজনের বাইরে পাচার করা ছবির মধ্যে হাজার হাজার মৃত বন্দির লাশের ছবি পাওয়া গেছে। দুটি মেমোতে সুনির্দিষ্ট বন্দিদের ওপর কঠোর নির্যাতনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সামরিক গোয়েন্দা প্রধান রফিক শেহাদেহর একটি মেমোতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে বিচারের আশংকা করছেন। এতে সকল মৃত্যুর খবর তাকে দিতে ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিচারিক দায়মুক্তি দেয়ার পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
২০১৬ সালে দামেস্কে এক অটোম্যান প্রাসাদে তার অফিসে এক সাক্ষাতকারে বাশার জীবিত ব্যক্তি ও নিখোঁজ পরিবার সম্পর্কে বক্তব্যের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। সুনির্দিষ্ট ঘটনা বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আপনি কি বলতে চান যে এসব অভিযোগ সত্য? তিনি বলেন, যারা বলে যে তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ধরে নিয়ে গেছে তারা মিথ্যা কথা বলে। তিনি বলেন, কোনো অত্যাচার হয়ে থাকলে তা ভুলের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তিনি বলেন, এটা এখানে ঘটেছে, বিশে^র সব জায়গাতেই ঘটে। তবে এটা কোনো নীতি নয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস ৭ বছর ধরে কয়েক ডজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং নিহত ও নিখোঁজ বন্দিদের আত্মীয় স্বজনের সাক্ষাতকার নিয়েছে, কারাগারে নিহত ও ভিন্নমতের লোকদের দমন বিষয়ে সরকারের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছে এবং মানবাধিকার রিপোর্টের সাক্ষ্যগুলোর শত শত পৃষ্ঠা এবং আদালতের কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে।
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্য একই কারাগারে আটক অন্য বন্দিদের বিবরণের সাথে মিলে যায় এবং সরকারের মেমোগুলো ও কারাগারের বাইরে পাচার করা ছবিগুলোতে তার সমর্থন মেলে।
কারাগার ব্যবস্থা হচ্ছে বাশারের যুদ্ধ উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি জনসাধারণের বিক্ষোভ আন্দোলন দমন এবং বিরোধীদের একটি বিজয়হীন সশস্ত্র সংঘাতে ঠেলে দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়া সরকার পরোক্ষ ভাবে হলেও আটকাবস্থায় শত শত বন্দি নিহতের কথা স্বীকার করেছে। মস্কোর চাপে মৃত্যু সনদ প্রদান অথবা নিহতদের নাম পরিবার নিবন্ধন ফাইলে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে দামেস্ক কমপক্ষে কয়েক শত বন্দির মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। সিরিয়ান নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ফাদেল আবদুল গণি বলেন, এ পদক্ষেপ সিরিয়ার অধিবাসীদের কাছে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যেঃ আমরা জয়ী হয়েছি, আমরা এটা করেছি এবং কেউ আমাদের শাস্তি দিতে পারবে না।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আশু সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ইউরোপীয় আদালতগুলোর মাধ্যমে ন্যায়বিচার চাওয়ার আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। ফরাসি ও জার্মান কৌসুলিরা সিরিয়ার ৩ জন সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছেন এবং সিরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান আলি মামলুক, বিমান বাহিনী গোয়েন্দা পরিচালক জামিল হাসান এবং সে দেশের নাগরিক ও এসব দেশের অধিবাসীদের নির্যাতন ও হত্যার জন্য অন্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করেছেন। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।