Inqilab Logo

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বগুড়া বিএনপিতে ভজঘট পরিস্থিতি, দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে

উপ নির্বাচনে সাফল্য নিয়ে সংশয়!

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ৭:৫২ পিএম

বগুড়া বিএনপিতে বহিষ্কার, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, কমিটির বিলুপ্তি ও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে তালা পাল্টা তালা , সিনিয়র নেতার বাড়িতে হামলা , ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াকে ঘিরে এখন এক ভজঘট অবস্থা বিরাজ করছে । এই অবস্থায় আগামী ২৪ জুন বগুড়ার সদর সংসদীয় আসনে যদি বিএনপি প্রার্থী দেয় তাহলে ভোটের ফলাফল অতীতের মতো বিএনপির পক্ষেই যে যাবে কেউই তা’ হলফ করে বলতে পারছেনা ।
গত ৪ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনার দু’সপ্তাহ পর ১৫ মে সকালে ফেসবুকে বিভিন্ন নেতার পোষ্ট সুত্রে জানা যায় , চিহ্নিত সংষ্কারবাদি সাবেক এমপি জিএম সিরাজকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিস্ট বগুড়া জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে । এতে আগে থেকেই তার ওপর খাপ্পা নেতা ও কর্মিরা ইফতারের পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন জালায় ও দলের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় । এসময় সেখানে ক্ষিপ্ত নেতা কর্মিরা জি এম সিরাজকে টাকা দিয়ে মনোনয়ন ক্রয়ের পর টাকা দিয়ে দলের পদ ক্রয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত করে । পাশাপাশি তারা জি এম সিরাজকে আওয়ামীলীগের এজেন্টে বলে দাবি করে ।
এই গ্রুপের নেতা কর্মিরা স্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তারাবীর নামাজ শেষ করে নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে রেজাউল করিম বাদশা, আলী আজগর তালুকদার হেনা প্রমুখের নেতৃত্বে একদল নেতা কর্মি দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিরোধিদের লাগানো তালা ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে তালা লাগায় । তাদের বক্তব্যে নেতারা বলেন , দলে সুষ্টু গণতন্ত্র চর্চার অংশ হিসেবে তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় যে কমিটি হয়েছে সেই কমিটিকে যারা মানেনা তারা সরকারের এজেন্ট ।
এরপর আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা বগুড়ার ‘চম্পা মহল’ খ্যাত সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালুর বড়িতে সমবেত হয়ে আলোচনায় বসে । খবর পেয়ে আহ্বায়ক কমিটির বিরোধিরা লালু এমপির বাসভবন চম্পা মহলের বাড়ির বাইরে জড়ো হয়ে হামলা ও ভাংচুর করে । পরে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নেতা কর্মিরা হামলাকারিদের ধাওয়া করে । এতে রাতের বেলায় ওই এলাকায় বসবাসকারি লোকজনের মধ্যে আতংক ও ভীতির সঞ্চার হয় । এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে পরদিন বৃহষ্পতিবার বিএনপি নেতা স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা শাহাবুল আলম পিপলু, জাসাস নেতা দেলোয়ার হোসেন হিরু পশারী সহ যুবদলের ৬ নেতা কর্মিকে বহিষ্কার ও ছাত্রদলের ২ নেতা কর্মিকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ।
একই দিনে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলমের এবং বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে । দলের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে বগুড়া সদর সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচন । ২৩ মে এই আসনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ । এই নির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আওয়ামীলীগ , মহাজোট, ১৪ দলীয় জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যচ্ছে । তবে বিএনপি এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবে কিনা ১৬ মে এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত তা’ জানা সম্ভব হয়নি । তবে বিএনপির নেতা কর্মিরা ধারণা করছে , এই আসনে কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন এমন কথা কৌশলে প্রচার করে দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুলকে পদত্যাগ করানো হয় । এরপর আসলে জিএম সিরাজকেই এখানে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হবে এটা প্রায় নিশ্চিত । মুলত সিরাজের এমপি হওয়ার খায়েশ পুরণ করতেই এত কিছুর আয়োজন বলেও মনে করছেন অনেকে ।
এবিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বিষয়টি কারাবন্দী দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত্ পৌঁছে গেছে। তিনি এতে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
এদিকে বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে , স্্েরাতের প্রতিকুলে বগুড়া সদর আসনের প্রার্থী বিএনপি মহাসচিবকে ভোট দিয়েছিল তারা । এখন তিনি শপথ নেননি কৌশলগত কারণে। কিন্তু কি কৌশলগত কারণে বগুড়া ৪ আসনের বিজয়ী প্রার্থী সংসদে গেলেন আর বগুড়া সদরের প্রার্থী বিজয়ী হয়েও সংসদে গেলেননা বগুড়ার ভোটাররা তা’ বুঝতে অক্ষম। অনেকেই বলছেন , বিদ্যমান ভজঘট পরিস্থিতিতে বগুড়া সদর আসনের নির্বাচনে বিএনপির অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি আর নাও হতে পারে। বিএনপি সমর্থিত অনেক ভোটারই এবার বগুড়া সদরের ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ।
নব গঠিত আহ্বায়ক বৃহষ্পতিবার পার্টি কার্যালয়ে ইফতার পার্টি করার ঘোষনা দিলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিকাল থেকেই আহ্বায়ক কমিটির বিরোধিরা দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বসে পড়ে । তাদের টাঙানো ব্যানারে লেখাছিল হঠাও সিরাজ বাঁচাও দল । এই অবস্থান ও পাল্টা প্রস্তুতিকে ঘিরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে টান টান উত্তেজনা ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ