পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নিম্নমানের পণ্য হিসাবে চিহ্নিত ৫২টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে সাতটির উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল এবং ১৮টি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন স্থগিত করেছে জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই। বুধবার (১৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে মানুষের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের যে সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব রয়েছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছে হাই কোর্ট। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারকে সতর্ক করে আদালত বলেছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আদালত কাউকে ছাড় দেবে না। দুধ, দইয়ে ক্ষতিকর মাত্রার অনুজীব, টেট্টাসাইক্লিন, কীটনাশক ও সীসার উপস্থিতি নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে গতকাল বুধবার এই হুঁশিয়ারি আসে।
অন্যদিকে লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলোর তালিকায় ড্রিংকিং ওয়াটারের মধ্যে আল সাফি ড্রিংকিং ওয়াটার, শাহারী অ্যান্ড ব্রাদার্সের নারজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ন ডিউ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার এবং আর আর ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার রয়েছে। কেরাণীগঞ্জে শান্তা ফুড প্রডাক্টসের টেস্টি, তানি ও তাসকিয়া এবং কামরাঙ্গীরচরের জাহাঙ্গীর ফুড প্রডাক্টসের প্রিয়া ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংক পাউডারেরও লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া মিরপুরের বনলতা সুইটস অ্যান্ড বেকারীর বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি-এর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
লাইসেন্স স্থগিত হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সরিষার তেলে সিটি অয়েল মিল-গাজীপুর (তীর), গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েল-নারায়ণগঞ্জ (জিবি), শবনম ভেজিটেবল অয়েল-নারায়ণগঞ্জ (পুষ্টি), বাংলাদেশ এডিবল অয়েল-নারায়ণগঞ্জ (রূপচাঁদা); সুপেয় পানির মধ্যে আররা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (আররা), ডানকান প্রোডাক্ট (ডানকান), দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার (দিঘী); প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের প্রাণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই; হলুদের গুড়ার মধ্যে ড্যানিশ, প্রাণ ও ফ্রেশ। কারী পাউডারের মধ্যে প্রাণ ও ড্যানিশ; আয়োডিনযুক্ত লবণের মধ্যে এসিআই ও মোল্লা সল্ট; ধনিয়া গুড়ার মধ্যে এসিআই পিওর, নুডলসের মধ্যে নিউ জিল্যান্ড ডেইরির ডুডলস এবং চিপসের মধ্যে কাশেম ফুডের সান ব্র্যান্ড রয়েছে।
মনোন্নয়ন করে আবার লাইসেন্স গ্রহণের আগে এসব পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ এমনকি খুচরা বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এর সংরক্ষণ ও বাণিজ্যিক প্রচার বন্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোজা শুরুর আগে বাজারে গোপন অভিযান চালিয়ে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এসব পণ্যের মধ্যে ৫২টি পণ্য নি¤œমানের হিসাবে চিহ্নিত হয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষায়। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট বিপণন কোম্পানিগুলোকে এ নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
বিএসটিআইয়ের সার্টিফিকেশন মার্কস বিভাগের উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক জানান, নোটিশের উত্তর দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পরও উত্তর না আসায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব। দুধ, দই এবং পশু খাদ্যে ভেজাল মেশানোয় কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান জড়িত তা জানাতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বুধবার রিট মামলাটি আদেশের জন্য রেখেছিল আদালত। শুনানি শুরু হলে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত ২৩ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন তাদের। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের গবেষণা প্রতিবেদনটি না দেওয়ায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রধান শাহনীলা ফেরদৌসীকে ২১ মে আদালতে তলব করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের দুধ-দই ও গোখাদ্য নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি নিয়ে আদালতে থাকতে বলা হয়েছে তাকে। গতকাল বুধবার আদালতে শুনানির শুরুতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতে বলেন, আমাদের কাছে তো রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট না আসলে অ্যাকশনে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, কোন কোন কোম্পানির দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে ভেজাল রয়েছে তা চিহ্নিত করতে চাই।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম এসময় বলেন, সাব স্ট্যান্ডার্ড বলতেই যে হার্মফুল এমন কিন্ত নয়। তাই সাব স্ট্যান্ডার্ড বিষয়টা নিয়ে ঢালাওভাবে বলে ফেললে মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়। তখন বিচারক বলেন, এই যে রিপার্টগুলো (যে রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছিল) আপনারা দেখেন? দেখার পর কি আপনাদের বিবেক জাগ্রত হয় না? আপনারা একটু কি টেস্ট করে দেখবেন না?
ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহেই আমরা কমিটি করেছি। এক মাসের মধ্যে সব টেস্ট করে রিপোর্ট দিতে পাবব বলে আশা করি। এ পর্যায়ে বিএসটিআই’র আইনজীবী হাসান মামুন বলেন, প্রফেসর শাহনীলা ফেরদৌসী (নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রধান) যে রিপোর্ট করেছেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ওই রিপোর্ট করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। বিএসটিআই তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ডকে মেইনটেইন করে পরীক্ষা করে রিপোর্ট করে। উনি (শাহনীলা ফেরদৌসী) তো ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করে রিপোর্টটি করেছেন। এখানে তো সারা দেশের সামগ্রিক চিত্র নাও উঠে আসতে পারে। আর এই সকল রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আতঙ্কের তৈরি হয়।
তখন বিচারক বলেন, এটা বলতে হবে যে, মিডিয়াতে এই সকল ভেজাল বিষয় উঠে আসার কারণেই আমরা বিষয়গুলো জানতে পারি। তাই মিডিয়াকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। তারা বিষয়গুলো সামনে না নিয়ে আসলে আমরা তো জানতেই পারতাম না। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না। মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে জীবন থেকে লাভ কী? এসব ব্যাপারে কোনো ছাড় দেব না।
বিচারক বিএসটিআইর আইনজীবীকে বলেন, আপনারা কবে রিপোর্ট দেবেন, কতদিন সময় লাগবে? আইনজীবী ‘এক মাস’ সময় চাইলে আদালত তখন জানতে চায়, প্রতিবেদনে কী থাকবে? জবাবে বিএসটিআইর আইনজীবী বলেন, আমরা যাদের লাইসেন্স দিয়েছি তাদের নাম, তাদের উৎপাদিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট। এবং পরীক্ষায় ভেজাল পেলে সেক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরব। এরপর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল ইসলামের কাছে আদালত জানতে চায়, তাদের প্রতিবেদন দিতে কত সময় লাগবে? আইনজীবী বলেন, আমরা একটা ডিটেইল রিপোর্ট দেব। আমাদের এক মাসের মধ্যে সময় লাগবে। তখন আদালত প্রতিবেদন দিতে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে ২৩ জুন পর্যন্ত সময় দিয়ে ওইদিন পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে রিট মামলাটি।
দুধ, দই এবং পশু খাদ্যে ভেজাল মেশানোয় কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান জড়িত সে বিষয়ে গত ৮ মে হাই কোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল হাই কোর্ট। কিন্ত তারা তা দিতে পারেনি। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, গত সপ্তাহে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রদান করেছি। আমরা তাতে বলেছি, এক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করব। এটা বিশাল একটি কাজ। বিভিন্ন রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। মিটিং করে তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও নি¤œমানের তা নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে হবে। তাছাড়া আমরা শাহনীলা ফেরদৌসীর প্রতিবেদনটিও সংগ্রহ করব।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনউদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই তাদের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক শাহনিলা ফেরদৌসীকে আগামী ২১ মে সকাল সাড়ে ১০টায় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তার প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর দেখে গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছিল আদালত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।