Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একেই বলে প্রতিভা!

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : প্রতিভা থাকলে তা এক সময় তা বিকশিত হবেই। কোনও প্রতিকুলতাই সেটাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। তার প্রমাণ আবারও মিললো জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে। বাঁম পায়ের চেয়ে প্রায় ৮ ইঞ্চি ছোট ডান পা। তারপরও থেমে থাকেননি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন চিলমারী গ্রামের হাইজাম্পার সেলিম রেজা। প্রায় এক পায়ে লাফিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। এ আসরে সেলিম হাইজাম্পে অংশ নিয়ে পদক জিততে না পারলেও সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখা যায়, সেটা প্রমাণ করেছেন তিনি। একপায়ে লাফিয়ে আর কতটা উচ্চতায় ওঠা সম্ভব। আর সেটা যদি হয় হাইজাম্প, তাহলে কি এক পায়ে লাঁফিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব? হয়তো নয়, কিন্তু সেটাই করে দেখাচ্ছেন সেলিম। দু’পায়ের অনুচ্চতায় তিনি পিছিয়ে থাকতে রাজী নন। স্বপ্ন, একাগ্রতা আর চেষ্টায় যে অনেক কিছুই সম্ভব তার প্রমাণ রেখেছেন কুষ্টিয়ার অজপাঁড়া গায়ের ছেলেটি। তার স্বপ্নই তাকে টেনে এনেছে এবারের জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে। প্রচÐ মনোবল নিয়ে লাফিয়েছেন। হয়েছেন চতুর্থ। আসরে যিনি ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন তার চেয়ে মাত্র .০৫ সেন্টিমিটার কম লাফিয়েছেন সেলিম। হতাশ হননি। এ ফলাফলেই সন্তুষ্ট তিনি। তাই প্রতিযোগীতা শেষে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘অল্পের জন্য ব্রোঞ্জপদক জিততে পারিনি। আশাকরি ভবিষ্যতে স্বর্ণপদকই জিতবোই।’
চিলমারীর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সেলিম রেজা। খুব ছোট বেলায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার ডান পাঁ বাঁম পায়ের চেয়ে প্রায় আট ইঞ্চি ছোট হয়ে যায়। নদী ভাঙ্গন এলাকার সন্তান হওয়ায় খুব অভাবের সংসার। যার ফলে কৃষক বাবা সিরাজ শেখের সঙ্গে দিনমজুরিতে নাম লেখান সেলিমের বড় তিন ভাই। তবে পড়ালেখায় মনোযোগী হন সেলিম। পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সকে বেছে নেন প্রিয় খেলা হিসেবে। তাকে এই খেলায় উৎসাহ যোগান নড়াইল লোহাগড়া পাইলট হাইস্কুলের ফিজিক্যাল টিচার দিলীপ চক্রবর্তী। উনার উৎসাহেই সেলিম হাইজাম্পে আসেন। এবারের জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে নড়াইল জেলার পক্ষে খেলেন এই অ্যাথলেট। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার সেলিম প্রতিযোগিতায় সাফল্য না পেলেও ভালোই লাঁফিয়েছেন। ১.৬৫ সেন্টিমিটার লাফিয়ে যে প্রতিযোগিটি তৃতীয় হন, সেখানে ১.৬০ সেন্টিমিটার লাফিয়ে সেলিম হন চতুর্থ। জাতীয় আসরে ব্যর্থ হলেও তিনি কিন্তু আন্তঃস্কুল অ্যাথলেটিক্সের স্বর্ণজয়ী অ্যাথলেট। ২০১৪ ও ’১৫ সালে চিলমারীর হাইস্কুলের হয়ে আন্তঃস্কুল অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় হাইজাম্পে স্বর্ণপদক জিতেন তিনি। এ সাফল্য সেলিমের স্বপ্ন বড় করে দেয়। উৎসাহ যোগায় আরো বড় কিছু করে দেখাতে। কুষ্টিয়ার এই বালক অ্যাথলেটের লক্ষ্য স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা। সেখানে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জিতে দেশের মান বাড়াতে চান তিনি। সেলিম বলেন, ‘আমার ডান পায়ে সমস্যা থাকলেও আমি স্বাচ্ছ¡ন্দ্যে লাফাতে পারি। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় যার প্রমাণ দেখিয়েছি টানা দু’বার সেরার খেতাব জিতে। আমার লক্ষ্য স্পেশাল অলিম্পিক থেকে স্বর্ণ জিতে দেশের সম্মান বাড়ানো।’ তিনি আরো বলেন, ‘এক নাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে লাঁফানোর সময় কোন সমস্যা হয় না আমার। স্যার (দিলীপ) আমাকে নিজের মতো করেই গড়ে তুলছেন। তার উৎসাহেই জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় আসতে পেরেছি।’
প্রিয় অ্যাথলেটকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন শিক্ষক ও কোচ দিলীপ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সেলিম স্পেশাল অলিম্পিকে যেতে পারবে। তাকে সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করছি আমি। অভাবী সংসারের সন্তান হলেও অ্যাথলেটিক্সে তার আগ্রহ দেখেই আমি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। চেষ্টা করছি নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুর সাহায্য নিয়ে তাকে সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে। মিকু ভাই আমাকে কথা দিয়েছেন সেলিমকে সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকম সহযোগিতা করবেন। আমার লক্ষ্য, জেএসসি পাশ করার পর তাকে লোহাগড়া পাইলট হাইস্কুলে নিয়ে আসা। এখানে খেলাধূলার পাশাপাশি সে ফ্রি লেখাপড়াও করতে পারবে। কারণ এই স্কুলে মেধাবী ক্রীড়াবিদদের পড়াশুনার খরচ স্কুল কর্তৃপক্ষই বহন করে।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একেই বলে প্রতিভা!
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ