Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শ্রমিক আন্দোলনে এবার ক্ষুধার্ত শিশু

পাটকল শ্রমিকদের ৯ম দিনের কর্মবিরতি

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে এখন আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। জঠর জ্বালা সইতে না পেরে শ্রমিক পরিবারের শিশুরাও নেমে এসেছে রাজপথে। তাদের চোখের পানিতে ভিজছে রাজপথ। সোমবার ইফতারের সময় কয়েকটি শ্রমিক পরিবারের শিশু সন্তানরাও অংশ নেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কিছুই বলতে পারছিল না, শুধু ছলছল চোখে তাকিয়েছিল। তারা কেবল থালায় থাকা একমুঠো ভেজা চিড়া হাত দিয়ে নাড়ছিল আর কান্না ভেজা চোখে তাকিয়েছিল। এ যেন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
এ সময় ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নাদিম হোসেন বলেন, সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে প্রতিটি বাবা মা কত কষ্ট করে। সেই সন্তানরা আজ ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। প্রতিটি পরিবারের আজ এ অবস্থা। অনেকে লজ্জায় রাস্তায় নামতে না পারলেও ক্ষুধার জ্বালায় ঘরে বসে বসে কাঁদছে। আর আমরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি। সন্তান যখন ক্ষুধার জ্বালায় না খেয়ে কাঁদতে থাকে তখন কিভাবে বাসায় বসে বসে এ দৃশ্য দেখবো আপনারাই বলুন? তিনি আরও জানান, ‘এ দেশের নাগরিক হয়ে কাজ করেও মজুরি না পেয়ে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। আর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের লোক হয়েও এদেশে খেয়ে পরে বেঁচে আছে।’
এদিকে, বকেয়া মজুরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খুলনা ও যশোরের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে মঙ্গলবার ৯ম দিনের কর্মসূচি পালন করে। তারা বিকাল ৪টায় রাজপথ ও রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে এ কর্মসূচি পালন করে। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় পাটকল শ্রমিকরা স্ব স্ব কর্মস্থলে না গিয়ে নবম দিনের মতো আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। সকাল ১০টার দিকে খালিশপুর ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রশাসনিক ভবনের সামনে শ্রমিকরা সমবেত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিআইডিসি সড়কে আসে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
পাটকল শ্রমিকলীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, বকেয়া মজুরি ও বেতন না দেয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। অনাহারি শ্রমিকরা রুটি রুজি নিশ্চিত না করে রাজপথ ছাড়ছে না।’ ক্রিসেন্ট সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন,‘খুলনা থেকে শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন দেশব্যাপি দাবানল ছড়াতে শুরু করেছে। যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, পাটখাত প্রয়াজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারিদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারিদের পূণর্বহাল, সব মিল সটআপের অনুকূল শ্রমিক-কর্মচারিদের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিকরা ১৩ মার্চ থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত ৭ এপ্রিল বিজেএমসি থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া মজুরি ও বেতন দেয়াসহ ১৮ মে’র মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর শ্রমিকরা অবরোধ ও কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে যোগ দেয়। ২৫ এপ্রিল শ্রম প্রতিমন্ত্রী এসে এক সপ্তাহ সময় নেন। এরপর ২ মে মজুরি না দেয়ায় ৫ মে থেকে আবার উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে। ঢাকার শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ি গত ১৩ মে সোমবার থেকে সারাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ পাটকলে একযোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাটকল

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ