পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাঝখানে দুয়েকদিন বিরতি বাদে এক মাসেরও বেশিদিন যাবৎ সমগ্র দেশ পুড়ছে খরতাপের দহনে প্রচন্ড গরমে। মাহে রমজানে বৃষ্টির জন্য রোজাদারসহ সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের আকুল ফরিয়াদ- ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে...’। কিন্তু প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে কখনও কখনও মেঘের আনাগানো থাকলেও তীব্র রোদের গরমের লু-হাওয়া হালকা সেই মেঘকেও শুষে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ছিটেফোঁটা সাময়িক বৃষ্টি হলেও তাতে আরো উসকে উঠছে ভ্যাপসা গরম। দেশের প্রত্যেক এলাকায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লিগণ স্বস্তির বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করছেন।
এ মুহূর্তে তাপমাত্রার পারদে যৎসামান্য হেরফের ছাড়া আবহাওয়ায় আপাতত উন্নতির কোনো নমুনা নেই। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ-কাল দেশের কোন কোন স্থানে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে এরপরের ৫ দিনে অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ আবারও বেড়ে যাবে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে যদি উপকূলের দিকে এগিয়ে আসে তাহলেই দেশজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা তৈরি হবে। কমবে তাপদহন। তবে গতকাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি। সমুদ্র উপকূলে নেই কোনো সতর্ক সঙ্কেতও। তাছাড়া বর্ষারোহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমীর আগমন এখনও অনেক দেরি। যা জুনের মাঝামাঝি কিংবা এরপর শুরু হতে পারে।
এদিকে অসহ্য ভ্যাপসা গরমে ঘরে ঘরে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের প্রায় সর্বত্র হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। প্রচন্ড গরমের সাথে ঘামে মানুষের শরীর দ্রুত কাহিল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।
ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোঃ আবুল কালাম বলেছেন, অসহীয় তাপদাহের কারণে এ সময়ে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। মানুষ অতিরিক্ত ঘামে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার বেশি থাকায় গরমের সাথে শরীর থেকে ঘাম বেশি ঝরছে। তাছাড়া ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়া, জ্বর-কাশি থেকে শরীর এখন সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন-পানি ও ফলের শরবৎ পান করতে হবে। সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকলেও বাস্তব তাপের দহন ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রি। বাতাসে আগুনের হলকা। অবিরাম গা-জ্বলা গরমের দাপটে দেড় কোটি মানুষের বাসস্থল রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে উত্তপ্ত গ্যাস চেম্বারে। সারাদেশে তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবনের স্বাভাবিক গতি। সকালে আগুনের তেজ ছড়িয়ে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্য ডোবা পর্যন্ত ঘরে-বাইরে তাপদাহে টেকা দায়। রাতেও নেই স্বস্তি। সেই সাথে সর্বত্র পানি ও বিদ্যুতের জন্য বেড়ে গেছে জনদুর্ভোগ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
দূর ও নিকট অতীতের দুর্যোগ খতিয়ান অনুসারে, সচরাচর এপ্রিলের শেষের দিক থেকে শুরু করে মে মাস ও জুনের প্রথমার্ধ এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। যা বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের উপকূলে আঘাত হানে। অতীতে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসও এ সময়ে সংঘটিত হয়। বঙ্গোপসাগরের কোলে বাংলাদেশের চোঙা (ফানেল) আকৃতির সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ প্রবণ। চলতি মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি এবং এরমধ্য থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়।
তাপমাত্রা আরো বাড়বে
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫.৫ এবং সর্বনিম্ন ২৮.৮ ডিগ্রি সে.। তাছাড়া খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়।
এরমধ্যে তেঁতুলিয়ায় ৫৪, ডিমলায় ৪৭, রংপুরে ৪৩, রাজারহাটে ৩৩, সিলেট ও নেত্রকোনায় ১০, নিকলিতে ১১, শ্রীমঙ্গলে ৩, ময়মনসিংহে ১ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে বৈশাখের তাপদাহে খটখটে রুক্ষ আবহাওয়া বিরাজ করে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, নোয়াখালী ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রার পারদ ফের ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।