পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুটমিল আমদজী পাটকল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও ঢাকার ডেমরায় হাতেগোনা কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল টিকে রয়েছে। কিন্তু সে পাটকলগুলোর শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার সীমা পরিসীমা নেই। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে শ্রমিকরা যে পরিমাণ টাকা ‘সপ্তাহ’ পান তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। সেটাও ঠিক মতো জোটে না। সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং মাসের পর মাস ‘সপ্তাহ’ না পাওয়ায় মানবিকভাবে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ে গেছেন সারাদেশের পাটকলে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক। বাধ্য হয়েই তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের সাথে চলছে প্রতারণা। এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।
বারবার বঞ্চনা আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির শিকার হয়ে ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পাটকল শ্রমিকরা। দফায় দফায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ফলাফলও শূন্য। শ্রমিকরা ক্ষোভে বিক্ষুদ্ধ। রাজপথ-রেলপথে আন্দোলন অব্যাহত থাকায় জনদুর্ভোগ এখন চরমে। অথচ বিজেএমসি যেন ঠুটোজগন্নাথের মত কেবলই সাক্ষী গোপাল। রামজানে পাটকল শ্রমিকদের সেহরি ও ইফতারীবিহীন মানবেতর জীবন কেবল শ্রমিক পরিবারেই প্রভাব ফেলেনি। বরং এই বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে আমজনতার প্রতিটি ঘরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে পাটকল শ্রমিকদের রাস্তায় ইফতারি আর মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র এখন ভাসছে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সোমবারের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হবে।
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে পাটকল শ্রমিকরা গত ২ এপ্রিল থেকে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে সচিবালয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। ওই বৈঠকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া সব মজুরি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ইনকিলাবকে বলেন, সার্বিক অবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে। শিগগিরি এর সুষ্ঠু সমাধান হবে। শ্রমিকদের প্রতি আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। কিছু দাপ্তরিক জটিলতার কারণে একটু সময় লাগছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর গোচরিভূত রয়েছে এবং তা দ্রুত সুরাহা হবে।
এবিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আসলে শ্রমিকরা যে দাবি করছে তা সঠিক নয়। কারণ সরকারের কাছে তারা বকেয়া মজুরী পায় না। শ্রমিকরা মজুরী পায় পাটকল মালিকদের কাছে। তার পরও সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও শ্রম ও কর্মসংস্বার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ শ্রমিক নেতারদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে সরকার এ খাতে অনেক ভর্তুকি দিয়েছে। আর কত দিবে সরকার।
জানা গেছে, সাধারণ শ্রমিকদের সংগঠিত করতে ৯ দফা দাবি কথা বলেছেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শ্রমিকরা। নিয়মিত সপ্তাহিক মজুরি ও বেতন প্রদান, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি, উৎপাদন শীলতা কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ-গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।
কোনও রকমে সরকারকে যদি টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল করার দাবি বাস্তবায়নে রাজি করানো যায় তাহলে অন্য দাবি পূরণ না হলেও পাটকলে শ্রমিক আন্দোলন থেমে যাবে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা চলমান পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা গেছে, সরকার বিজেএমসিকে ২০১২ সালে ১০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ৮০ কোটি ০৬ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা (সাময়িক), ২০১৮ সালে ১০৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা (সংশোধিত) ভর্তুকি বাবদ দিয়েছে। খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার পাটজাত রফতানি পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের মূল বাজার সুদান, ঘানা, সিরিয়া, ইরান ও ভারত। কিন্তু প্রায় এক বছর এ সব দেশে পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ফলে মিলগুলো আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে।
মজুরী কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে পাটকল শ্রমিকদের ডাকা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলস ও ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলসের শ্রমিকরা। ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথম দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নরসিংদীর সাটিরপাড়া-কামারগাঁও আঞ্চলিক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এছাড়া ইউএমসি জুট মিলের সামনে জামতলা পৌর শ্রমিক মঞ্চে অবস্থান ধর্মঘট করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে পাটকল শ্রমিকরা। অন্যদিকে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে শ্রমিকদের ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে। খুলনার খালিশপুরে সমাবেশ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে তারা। খুলনায় ১২ এপ্রিল থেকে পাটকল শ্রমিকদের ১০ দিনের আন্দোলন শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল বিজেএমসির ২২ পাটকলে ৯৬ ঘণ্টা ধর্মঘট ও সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজপথ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনকারীরা।
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরী কমিশন গঠনসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আমিন জুট মিলের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতিও শুরু করেছে তারা। এর অংশ হিসেবে সকাল থেকে নগরীর অক্সিজেন মোড়ে শ্রমিক কর্মচারীরা জোট বেঁধে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সে সময় নাজিরহাট-চট্টগ্রাম রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এর আগে একই দাবিতে গত ২ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট এবং রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ কর্মসূচি পালন করেছিল দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক তোফাজ্জেল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কাজে যোগ দেয়ার পরে শুধু শবে-বরাতে এক সপ্তাহের মজুরি দিয়েছে। আগের মজুরি তো দেয়ইনি, বরং চলতি সপ্তাহেরও মজুরি দেয়নি। সবকিছু সহ্য করা যায়, পেটের ক্ষুধা কীভাবে সহ্য করি। কেউ কেউ শুধু পানি পান করে রোজা রাখছে। তার সঙ্গে থাকা শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, রমজান মাস চলছে ঘরে একটা চালও নেই। ইফতারির কোনো ব্যবস্থা নেই। রাতে কিছু খেয়ে রোজা রাখবো সে উপায়ও নেই। কাজ করি, আমাদের পাওনা টাকা দেবে না কেন?
অপরদিকে, প্রতিদিনের মতো গতকাল রোববার বিকেল ৪টা থেকে খুলনার খালিশপুর ও দিঘলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৫টি পাটকল শ্রমিক নতুন রাস্তা মোড়, আটরা শিল্পাঞ্চলের ২টি পাটকলের শ্রমিক আলিম জুট মিলের সামনে ও নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের ২টি মিলের শ্রমিক রাজঘাটে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। ফলে রেলপথ রাজপথ অবরোধ হওয়ায় প্রতিদিন এই রমজান মাসে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির আর অন্ত থাকছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, বকেয়া কেতন ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
অবরোধের ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। রেল চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে। শ্রমিকদের আন্দোলনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ থাকায় মহাসড়কের যাত্রীরা পড়েছিলেন চরম দুর্ভোগে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।