পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত ৫ মে রবিবার রাতে সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হয় জিসান নামের চার বছরের এক শিশু। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। দুর্বৃত্তের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে শিশু সালমান জাহান জিসানের মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী, তার ব্রেনে রক্ত জমেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। একই হাসপাতালে জুঁথি (১২) নামে আরেক শিশু অন্য একটি ট্রেনে ছোড়া পাথরের আঘাত পেয়ে চিকিৎসাধীন আছে। জুঁথির স্বজনরা জানান, গত রবিবার চিকিৎসার জন্য মধুমতি এক্সপ্রেসে ভেড়ামারা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলেন তারা। পথে পাকশী ও ঈশ্বরদীর মাঝামাঝি স্থানে একটি পাথর এসে জুঁথির মাথায় লাগে।
এদিকে, শিশু জিসানকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় গত সোমবার রাতে আবু হানিফ (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হানিফ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কড্ডা কৃষ্ণপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। হানিফ জিজ্ঞাসাবাদে ওইদিন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনে এ রকম ১৭টি ঘটনা ঘটেছে। যা বাংলাদেশ রেলওয়ে রেকর্ড রেখেছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, কেবল কেউ আহত হলে এবং ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেই তা রেকর্ড রাখা হয়। অন্যসব ঘটনার রেকর্ড রাখা হয় না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জিএম খোন্দকার শহিদুল ইসলাম।
ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রেলের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে প্রতিমাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, ট্রেনে পাথর ছোড়ার দায়ে এ পর্যন্ত কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। হলে এই প্রবণতা কমে যেতো। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, পাথর ছোড়া প্রতিরোধে তারা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রেনে পাথর ছোড়ার যেসব ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে জড়িত কমবেশি ৮০ ভাগই শিশু-কিশোর। তাদের আটক করা হলেও বেশিরভাগ সময় মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত শিশু ও কিশোররা এক হয়ে এই পাথর নিক্ষেপের মতো ‘নিষ্ঠুর খেলা’য় মেতে ওঠে। এতে প্রায়ই যাত্রীরা গুরুতর আহত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তবে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, দুষ্কৃতকারীরা চলন্ত ট্রেনে ঢিল মেরে নিরাপদ বাহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। এতে ট্রেনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনও বিপন্ন হচ্ছে।
সারাদেশে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ২০ জেলার ওপর দিয়ে চলার সময় ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি জেলায়। আর গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে ৬৫টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৩৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলের ২৯টি। সূত্রমতে, গত মাসে পূর্বাঞ্চলে চারটি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রেকর্ড রয়েছে। এই চারটি ঘটনায় ট্রেনের ক্ষতি হয়েছে। তাই এগুলো রেকর্ড রয়েছে। তবে এর বাইরেও ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো রেকর্ড হয়নি। পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপক (জিএম) ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে। তিনি বলেন, প্রতিমাসেই পশ্চিমাঞ্চলে আমরা ২০ থেকে ২৫টি ঘটনা পাচ্ছি। পূর্বাঞ্চলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বছরে প্রায় সাত-আটশ’র মতো ঘটনা ঘটে। আমরা এসব ঘটনা নিয়ে শঙ্কিত। ছোট ছোট শিশুরা আজ এই নিষ্ঠুর আঘাতের শিকার হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছর পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় বায়েজিদ নামে রেলের একজন কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর এ বছর ফের এই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।
রেলের তথ্য মতে, পশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো হলো, খুলনার দৌলতপুর, ফুলতলা, নোয়াপাড়া, যশোর, দর্শনা হল্ট, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ, মিরপুর, ভেড়ামারা, পাকশী, ঈশ্বরদী বাইপাস, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, পঞ্চগড়, ডোমার, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও চাটমোহর। পূর্বাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো, ঢাকার কাওরানবাজার, ঢাকার বিমানবন্দর, গাজীপুরের টঙ্গী, জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, কিশোরগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সীতাকুÐু, পাহাড়তলী, বটতলী ও নরসিংদী।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, পাথর ছোড়া ঘটনায় জড়িতরা বেশির ভাই শিশু। কয়েকজন টিনএজার একসঙ্গে হলেই ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে। আমরা এসব শিশুকিশোরকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা কোনও কারণ বলতে পারে না। অকারণেই তারা ট্রেনের জানালা টার্গেট করে পাথর নিক্ষেপ করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের পশ্চিমের পুলিস সুপার (এসপি) সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, আমরা যত ঘটনা পেয়েছি, তার ৮০ শতাংশ শিশুকিশোরদের কাজ। পাথর নিক্ষেপের সঙ্গে শিশুকিশোর জড়িত। তারাই এর ভয়াবহতা না বুঝে এগুলো করে থাকে।
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার সঙ্গে শিশুকিশোররা জড়িত থাকায় বেশির ভাগ সময়ই থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হায়। তবে তাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
আইন কী বলে
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় ট্রেনে পাথর ছুড়লে যাবজ্জীবন জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। পাথর ছোড়ায় যদি কারও মৃত্যু হয়, তাহলে ৩০২ ধারায় দোষীর মৃত্যুদÐের বিধানও রয়েছে। তবে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় শিশু ও কিশোর জড়িত থাকায় তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো হয়।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, তাদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও নিক্ষেপকারীদের চিহ্নিত করাও চ্যালেঞ্জ। তাদের প্রায়ই চিহ্নিত করা যায় না। তাই তাদের আইনের আওতায়ও আনা যায় না।
সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিকার খুঁজছে রেলওয়ে
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, চিহ্নিত এলাকায় পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামদের এবিষয়ে প্রচারণার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের এই ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা লিফলেট তৈরি করে সেগুলো প্রচার করছি। মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলা করে আমরা তাদের সতর্ক করছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি এর ভয়াবহতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।