মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রোজার মাসকে ‘রমজান’ বলে, বাঙালিরা তো বটেই, মোটামুটি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই মুসলিমরা প্রায় আবহমানকাল থেকে সেটাই জেনে এসেছেন। কবি নজরুল ইসলামের লেখা গান ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’ তো অমর হয়ে আছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই বলতে শোনা যাচ্ছে বা লেখা দেখা যাচ্ছে ‘রামাদান করিম’। হোয়াটসঅ্যাপে বা ইমেলেও এর মধ্যেই অনেকের ফোনে চলে এসেছে ‘রামাদান মুবারক’ বার্তা।
কিন্তু উপমহাদেশের মুসলমানরা চিরকাল যাকে রমজান বলে জেনে এসেছেন, হালে সেটাই কীভাবে ধীরে ধীরে রামাদানে পরিণত হল? এ বিষয়ে ভারতের বিশিষ্ট ইসলামের গবেষক ও ইতিহাসবিদ কিংশুক চ্যাটার্জি বলেন, ‘আসলে ভারতে ইসলামের মূল স্রোত যখন প্রথম আসে, তখন তা ছিল প্রবলভাবে পারস্য ভাবধারায় প্রভাবিত। আর ফার্সিতে যেহেতু শব্দটা রমজান, যেখানে জ-য়ের উচ্চারণটা জেড এর মতো, তাই ভারতীয়রাও সেটাই বলতো। বাংলায় জেড উচ্চারণটা নেই বলে বাঙালি মুসলিম তো পরিষ্কার রমজান উচ্চারণ করত। কিন্তু গত এক-দেড়শো বছর ধরেই ভারতীয় ইসলামে আরবিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরব দুনিয়ার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগও হালে অনেক বেড়েছে। আরবিতে জ উচ্চারণটা নেই, তার জায়গায় ওরা বলে ধ আর জেড এর মাঝামাঝি একটা কিছু, আর সেটা অনুসরণ করে ইদানীং ভারতেও রামাদান বলার চল শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলছিলেন, ‘আসলে এখন ইংরেজিতে লেখার সময় ফার্সির বদলে আরবি ট্রান্সলিটারেশনটাই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে, সে কারণে রমজান এর বদলে রমদান লেখাটাই এখন বেশি চোখে পড়ছে।’
তবে ভারতীয় উপমহাদেশে যে মুসলিমরা উর্দুতে কথা বলেন, তাদের যে ‘রামাদানে’র বদলে ‘রমজান’ই বলা উচিত, তা নিয়ে কিছুকাল আগেই ক্যাম্পেন শুরু করেছিলেন পাকিস্তানি লেখক-অ্যাক্টিভিস্ট বীনা সারওয়ার হার্ভার্ডের সাবেক ছাত্রী সারওয়ারের যুক্তি ছিল, ‘উর্দুতে মূল শব্দটা রমজান। কিছুতেই রামাদান নয়। ঠিক যেভাবে আমাদের বলা উচিত খোদা হাফেজ, আল্লাহ হাফেজ নয়। এই ধরনের পাঁচমিশেলি শব্দ কিন্তু আরবিতেও নেই!’
সে সময় তার এই প্রস্তাব নিয়ে তর্কবিতর্কও হয়েছিল বিস্তর। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বীনা সারওয়ারের নিজের শহর করাচি-ই বলুন, অথবা ভারতের দিল্লি-হায়দ্রাবাদ - সর্বত্রই রমজানের বদলে ধীরে ধীরে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রামাদান।
রমজান না রামাদান এ নিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কিন্তু রমজান না কি রামাদান, মুসলিমদের জন্য কোনটা বলা বেশি শুদ্ধ? কিংবা বেশি ইসলামসম্মত?
দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা আবদুল খালিক বলেন, ‘কোরানে তো রামাদান-ই বলা আছে, কাজেই ওটাই ঠিক মানতে হয়। ইসলামে শিক্ষিত লোকজন রামাদানই বলেন, যারা অতটা পড়াশুনো জানেন না তারা বলেন রমজান।’
তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘পুঁথিগত উচ্চারণের বাইরেও অবশ্য সাধারণ মানুষের একটা নিজস্ব ‘জবান’ বা ভাষা মুখে মুখে তৈরি হয়ে যায়, তাতে যে ভাষার ব্যাকরণগত শুদ্ধতা সব সময় থাকে তা নয়। রমজান শব্দটাও সেভাবেই তৈরি হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস, কাজেই সেটাকেও হয়তো পুরোপুরি ভুল বলা যায় না।’
তবে রমজান যেভাবে ধীরে ধীরে রামাদান হয়ে যাচ্ছে, সেটাকে ‘ক্রমবর্ধমান আরবি প্রভাবের’ চেয়ে বরং একটা ‘শুদ্ধিকরণের প্রবণতা’ হিসেবেই দেখছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক কাজী সুফিওর রহমান। তিনি বলছিলেন, ‘আমি মনে করি এটা উচ্চারণগত ব্যাপার। দেখুন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নিয়ত বাড়ছে, তাই অনেকেই মনে করছেন এই সুযোগে আমার বিদেশি শব্দের উচ্চারণটাও ঠিক করে নিলে ক্ষতি কী?’ তিনি আরো বলেন, ‘আসলে আমাদের এটা বুঝতে হবে আরবি ভাষায় 'জ' শব্দটাই নেই - ওই জায়গায় তারা যেটা বলে সেটা অনেকটা ধ-এর কাছাকাছি। মিশরে একজন ফুটবলার আছে রামধান আলি নামে, সে যদি এখন কলকাতার মোহনবাগানে খেলত তাকেই আমরা ডাকতাম রমজান আলি বলে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।