মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবাংলার রামপুরহাটের গ্রামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেছিল যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন তো? বর্ষীয়ান অধ্যাপক আশিসবাবু তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, তাতে তোমার কী হবে? সেই কিশোরের সরল জবাব, আমি তো সামনের বছর নাইনে উঠবো। দিদি থাকলে একটা সাইকেল আমিও পাব। নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সবুজ সাথী প্রকল্পের যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, সেই প্রকল্পে পাওয়া সেই সাইকেল নিয়েই এখন স্কুলে যায় আবিদা সুলতানা। বাকি সময়ে সেই সাইকেলেই মনোহারি সামগ্রী ফেরি করেন তাঁর বাবা। কামারুদ্দিন মৃধা কিংবা শেখ মিনার উদ্দিনরাও এখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু তাদের বোনেরা পেয়েছে সাইকেল। সেই সাইকেলে চেপেই এখন তারা চক্কর কাটে পাড়ায়। পড়তে যায় শিক্ষকের কাছেও।
গত পাঁচ বছরে শুধু সবুজ সাথী প্রকল্পেই ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল বিলি করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এছাড়াও কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় এসেছেন ১৬ লক্ষ ছাত্রী। আরও প্রায় সমসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এসেছে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায়। শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের জন্যই নয়, এই সরকারের আমলেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ক্লাব পেয়েছে আর্থিক অনুদান। ৭ কোটির বেশি মানুষকে ২ টাকা কিলো দরে চাল সরবরাহ করেছে তৃণমূল সরকার। বস্তুত, কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর অনেক আগে থেকেই আয়লা বিধ্বস্ত এলাকা, জঙ্গলমহল, বন্ধ চা-বাগান, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকসহ রাজ্যের ৩ কোটির বেশি মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করে এসেছে মমতার সরকার। রাজ্যের ৪০ হাজার ইমাম-মোয়াজ্জিন, ১ লাখ বেকার, ৬০ হাজারের বেশি লোকশিল্পীকে মাসিক ভাতা দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসারও ফল মিলেছে হাতেনাতে। তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে শিল্প হচ্ছে না। চাকরি হচ্ছে না। মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এহেন নানা ইস্যু নিয়ে যখন সরব হচ্ছিল বিরোধীরা, তখন এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমেই রাজ্যের অধিকাংশ ঘরে ঘরেই পৌঁছে গিয়েছিল নবান্ন। বিরোধী থেকে শুরু করে অনেক অর্থনীতিবিদরা সরকারের এই কর্মসূচিগুলিকে বলেছেন, দান-খয়রাতির রাজনীতি। উপকৃত মানুষই দুই হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে আমলারা সকলেই যখন ক্লান্ত তখন মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন মমতা। হাসি মুখে। রাস্তার দুপাশে বিপুল সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। বয়স্ক মহিলাকে জড়িয়ে ধরছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত রাজ্যসহ জাতীয় রাজনীতি। এই অফুরন্ত জীবনীশক্তির চাবিকাঠি কিন্তু কড়া ডায়েট। হ্যাঁ, ডায়েট সম্পর্কে মমতা যথেষ্ট সচেতন। তেল ও মশলা জাতীয় খাবার যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। মুড়ি, চা ও চকোলেট রোজকার ডায়েটে মাস্ট। আর প্রচুর পরিমাণে পানি। তবে তেলেভাজা ছোটবেলা থেকেই তাঁর খুব প্রিয়। তাই মাঝেমধ্যে আলুর চপ এড়াতে পারেন না। স্বাস্থ্য সম্পর্কেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদা সচেতন। এমনিতেই তিনি প্রচুর হাঁটেন। তা ছাড়াও বাড়িতে প্রতিদিন নিয়ম করে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ট্রেডমিলে হাঁটেন। বিধানসভা ভোটের আগে তো একদিনে টানা ১০ কিলোমিটারও হেঁটে ফেলেছেন অনায়াসে। জাতীয় রাজনীতিতে দিদির পোশাকও চর্চার বিষয়। মমতা ছাড়া ভারতের কোনও রাজনীতিবিদের পোশাক ওরকম নয়। সরু পাড়ের সুতির শাড়ি ও পায়ে সাদা হাওয়াই চটি। মমতা বন্দ্যোয়ারে শাড়ি ধনেখালির তাঁত। ওই শাড়ি ছাড়া তিনি অন্য কোনও শাড়ি কোনও দিনও পরেন না। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনেই অভ্যস্ত তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। তাই একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও কালীঘাটের টালির চালের একতলা বাড়িটি ছেড়ে চলে যাননি। বৃষ্টি হলে টালি নালার ধারে মমতার বাড়িতে এখনো পানি ঢুকে যায়। বর্যাকালে প্রবল বৃষ্টিতে এক হাঁটু পানি টপকে বাড়ি ঢুকতে হয়, যা দেখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। মমতার সাধারণ জীবনযাপনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন বাজপেয়ী। প্রকৃতিকে বড় ভালোবাসেন মমতা। তাই বার বার চলে যান হিমালয়ে কিংবা জঙ্গলমহলে। ব্যস্ততা থেকেও সময় বার করে পাহাড়ে বা জঙ্গলে কাটিয়ে আসেন দিন কয়েক। নিজের ট্যাবে প্রকৃতির ছবিও তোলেন। প্রকৃতি ভালোবাসেন বলেই শহরকে সাজানোর নানাবিধ পরিকল্পনা নিয়ে নেন মুহূর্তে। একবার রাজারহাট বাইপাস হয়ে ফিরছিলেন মমতা। চোখে পড়ে রাজারহাটে একদিকে বিস্তীর্ণ জলাশয়। সঙ্গে সঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দেন, এই জলাশয়কে কেন্দ্র করে পার্ক তৈরি হোক। যার নির্যাস, সেন্ট্রাল পার্ক, ক্যাফে ও একটি ট্যুরিস্ট রিসর্ট।
গানও খুব প্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সব ধরনের মিউজিক শোনেন তিনি। তাই ক্ষমতায় এসেই কলকাতার ট্র্যাফিক সিগনালগুলিতে চালু করেন রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানো। কাজি নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানও ভালোবাসেন মমতা। গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। ছোটবেলায় মায়ের কাছে নানা বাংলা গান শুনতেন তিনি। ছেলেবেলার কথা মনে পড়লেই মমতার মনে পড়ে বীরভূমে মামাবাড়ির দিনগুলো। ধানখেতের আল ধরে হেঁটে যাওয়া এবং ধানের শিষ দিয়ে পুতুল গড়া সেই স্মৃতি তৃণমূল নেত্রীর কাছে বড় মধুর। রাজনীতিতে আসার আগে একাধিক চাকরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই জানেন না, স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন। অভাবের সংসার চালাতে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউটর, এমনকি সরকারি দুগ্ধ কেন্দ্রে সেলসগার্লের কাজও করেছেন তিনি। এছাড়া রাজ্যের বহু প্রবীণ নেতা, যাঁরা একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাইড ছিলেন, তাঁরা এখন অনেকেই মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হল সুব্রত মুখোপাধ্যায়। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।