Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাম্পার ফলনেও কৃষকের হাসি নেই

তালা (সাতক্ষীরা) থেকে এম. এম. হায়দার আলী | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ঘরে তুলতে কৃষান-কৃষানীরা এখন ব্যস্ত। ধান কাটার শুরুতে শ্রমিক সঙ্কটের পাশাপাশি ধানের বাজারমূল্যে হতাশ হয়ে পড়েছেন তালার হাজার হাজার ধান চাষিরা।
সূত্র মতে, তালা উপজেলার বিলাঞ্চলের জমিগুলোতে বছরে একবার ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়। যা এখানকার হাজার হাজার শ্রমজীবী ও নিন্মমধ্যবিত্ত মানুষরা বছরের খোরাকি ঘরে তোলা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় এ ধান চাষে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যের কাছ থেকে শুধু মাত্র ইরি ধানের জন্য তিন মাস মেয়াদে ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ এক বিঘা জমি ৬ হাজার টাকা হিসেবে হারি নিয়ে মূলত এই ধান চাষ করে থাকেন। আর বাকি সময়টা ঐ জমিতে লোনা পানির চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়।
তারপরও এখানকার কৃষকগণ কোনভাবেই আর্থিকভাবে ঘুরে দাড়াতে পারছে না। বৈরি আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বøাস্ট রোগসহ নানান সমস্যার কারনে গত কয়েক বছর ধরে প্রান্তিক চাষিরা তাদের কষ্টের ধান ষোলআনা ঘরে তুলতে পারেনি। যে কারণে এসব ভূক্তভোগী কৃষকদের কাঁধে ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। তবে এবছর ধানের বাম্পার ফলন হবার পরও ধানের বাজার দর কম হওয়ায় তাদের মুখে হাসি নেই।
তালা উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে তালা উপজেলার বারটি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আটাশ, হাইব্রিড ও ঊনপঞ্চাশসহ বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। যা বিঘা প্রতি গড় ২০ মণ হারে বাড়িতে আনা সম্ভব হলে, এবার উৎপাদিত ধানের পরিমান দাড়াবে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন।
উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আ. সামাদ মোড়ল (৪৭) জানান, এবছর নিজের ও অন্য লোকের জমি হারি নিয়ে ২০/২২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। একদিকে উচ্চ দামে শ্রমিক মজুরি, অন্যদিকে সাড়ে সাতশ’ টাকা ধানের মণ। হিসেব করে দেখলাম ধানের দাম যদি না বাড়ে তাহলে আমার এ বছরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা লোকসান হবে। ডিজেল, সার, ওষুধের দোকানেও অনেক টাকা ঋণ হয়ে পড়েছি, এত ক্ষতি সহ্য করা যায় না, সামনের বছর আর হয়তো ধান চাষ করবো না।
একই গ্রামের কৃষক ফিরোজ সরদার (৩৫) জানান, বীজতলা থেকে শুরু করে জমি চাষাবাদ, সার, কিটনাশক, জমি রোপন এবং আগাছা পরিষ্কারসহ এক বিঘা জমির ধান উৎপাদন শেষে কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ। সেচ খরচ দিয়ে বিঘা প্রতি টিকবে প্রায় পনের মণ ধান। বর্তমান ধানের যা দাম শুনছি তাতে করে ঐ ধান বিক্রি হবে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। পাওনাদাররা হালখাতার কার্ড দেয়া শুরু করেছে, যে কারনে সরকারিভাবে গোডাউনে ধান বিক্রি করা হয়ে ওঠে না।
এদিকে উপজেলার ব্যবসায়িক প্রান কেন্দ্র পাটকেলঘাটা বাজারের পাইকারী ধান ক্রেতা আনারুল ইসলাম সবুজ (৩৮) জানান, চিকন মানের আঠাশ ধান বর্তমানে প্রতি মণ ৭৬০-৭৭০ টাকা এবং মোটা জাতের হাইব্রিড ধান ৫৭০-৫৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধান কিনে করবো কি? চাল ব্যবসায়ীদের গুদামে এখনো গত বছরের অনেক ধান-চাল রয়েছে। যে কারনে চাতাল মালিকদের নতুন ধান কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। তারপরও ধান কেনাকাটা করছি লাভ লোকসান যা হয় হবে। এই ধরনের অভিযোগ ভূক্তভোগী বহু কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বলে জানা যায়।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, তালায় এ বছর ধানের ফলন যথেষ্ঠ ভাল হয়েছে, কৃষকরা তাদের ধান কাটাও শুরু করেছেন, তবে আবাদকৃত সকল ধান কেটে বাড়িতে আনতে এখনো বেশ কিছু দিন সময় লাগবে।
তালা উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় বা সংগ্রহের চিঠি এখনো পাইনি। আশা করছি তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ