পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আঘাত আজ : ভারত হয়ে আঘাত করলে কম ক্ষয়ক্ষতি, সরাসরি হলে বেশি : চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে অচলদশা পূর্ণ সতর্কতা : উপকূলব্যাপী থমথমে গুমোট আবহাওয়া
বঙ্গোপসাগরে ফুলে ফুঁসে উঠেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। মংলা ও পায়রা বন্দরসহ খুলনা-বরিশাল সমুদ্র উপকূলে ৭ নম্বর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসহ চট্টগ্রাম উপকূলে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত উঠেছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস আঘাত হানতে পারে আজ শুক্রবার। গত চার-পাঁচ দিনে ‘ফণি’ ঘন ঘন গতিপথ বদলায়। উত্তর-পশ্চিমমুখী গতি থেকে বুধবার কিছুটা ডানে বেঁকে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। গতকাল বেড়ে যায় শক্তি ও গতি। শেষ মুহূর্তে এসে যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আসে তাহলে ঝড়ের গতি কমে যাবে। ক্ষয়ক্ষতিও হবে কম। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের প্রায় সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ কিলোমিটার কাছে এসে গেছে। এটি তৈরি হয় দুই হাজার কি.মি. দূরে। ‘ফণি’র ভেতরের গতিবেগ
ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। এটি ২৭ কি.মি. গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান।
‘ফণি’র আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি লাঘব বা এড়াতে সরকারের সবধরনের প্রস্তুতি ও সতর্কতা রয়েছে। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ফণি’র গতিবিধি ও সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছেন। দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দির্দেশনা। খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় জেলা-উপজেলাগুলোতে সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে হয় সমন্বয় সভা। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা-বিভাগ সবধরনের ছুটিছাটা বাতিল করে জনবলকে স্ট্যান্ডবাই রেখেছে। কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। আজ সকাল থেকে উপকূলীয় জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।
দেশের সমুদ্র উপকূলে চর ও দ্বীপাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ববসবাবরত লোকজনদের জানমাল রক্ষা, উঁচু ও নিরাপদ স্থানের দিকে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে রেডক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতায় উপকূলীয় ১৯ জেলায় প্রায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে তৎপর রয়েছেন। দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে অচলদশা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কাঠামো জেটি-বার্থ সুরক্ষায় পূর্ণ সতর্কতা গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বড় বড় জাহাজ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বহিঃসমুদ্রে। ছোট নৌযান-ট্রলারগুলো চলে গেছে কর্ণফুলী নদীর উজানে। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে ফেরি নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ‘ফণি’র প্রভাবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপকূলব্যাপী থমথমে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। ২৯ এপ্রিল’৯১, সিডর-আইলা-নার্গিস-রোয়ানু-মোরা’র পর ‘ফণি’র নতুন আপদ মাথায় নিয়ে সাড়ে চার কোটি উপকূলবাসীর মাঝে অজানা ভয়-আতঙ্ক দানা বেঁধে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র গা-জ¦লা অসহ্য ভ্যাপসা গরম অব্যাহত থাকে। ‘ফণি’ চলে যাবার পর মেঘ বৃষ্টি-বাদলের মধ্যদিয়ে আজ-কাল থেকে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসছে। এমনকি অঞ্চলভেদে হঠাৎ বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
‘ফণি’ মানে বিষধর কালনাগিন সাপের ফণা। অবশেষে ফণা তুলেছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের একেক নামকরণ করা হয়। এবারের নামটি দিয়েছে পালাক্রমে বাংলাদেশ। গত ২৪ এপ্রিল ভারত মহাসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ-সুস্পষ্ট লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ-গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। একদিন পরই সেটি শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’তে রূপ নেয়। আগের ৪ নম্বর সঙ্কেতের পরিবর্তে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে এক লাফে বিপদ সঙ্কেত উঠে যায় ৭-এ। অথচ ফণির আগে গতিমুখ ছিল তামিলনাডু-অন্ধ্র-উড়িষ্যা বরাবর। বঙ্গোপসাগরে ফণির শক্তি ও গতি বৃদ্ধি পেয়ে এটি যদি ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গের দিকে না গিয়ে বাঁক ঘুরে সরাসরি বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ধেয়ে এসে আঘাত করে তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হতে পারে মারাত্মক ধরনের।
ঘূর্ণিঝড়ের ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পরপরই সবাই নড়েচড়ে বসেন। ঘূর্ণিঝড় ফণি ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ। গতকাল দুপুরে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদফতরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ফণির গতি বেড়ে এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। শুক্রবার বিকেল কিংবা সন্ধ্যা নাগাদ ফণি সরাসরি কিংবা ভারত হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তবে তা রূপ নেবে সুপার সাইক্লোনে। আমরা বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছি ফণি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কিন্তু দুপুরের পূর্বাভাসে দেখা যায় ফণি বেশ শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন তার গতি বেড়েছে। ফণি’র গতিবেগ ২০০ কি.মি.
গতকাল রাতে সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ফণি গতকাল গভীর রাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরো ঘনীভূত এবং উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শুক্রবার বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৮০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল-বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মংলা ও পায়রা উভয় সমুদ্র বন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় পড়বে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এসব এলাকার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেন। উপকূলীয় উপজেলাগুলোর ইউএনওকে আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণির কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে বিআইডাবিøউটিএ’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দেশের সকল রুটে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া ফণির সম্ভাব্য দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের ৮০১/ক নম্বর কক্ষে খোলা হয়েছে এই কন্ট্রোল রুম। এর টেলিফোন ০২৯৫৪৬০৭২ সার্বক্ষণিক খোলা রাখা আছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য আঘাতের আশঙ্কায় পূর্ব-প্রস্তুতি ও সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে বন্দর চ্যানেল (কর্ণফুলী) থেকে সব নৌযান শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে বা নিরাপদ পোতাশ্রয়ে পাঠানো হচ্ছে। বন্দর স্থাপনাসমূহ, কন্টেইনারের নিরাপদ স্টেকিং, জেটি-বার্থগুলোর এবং জাহাজের নিরাপত্তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক।
ফণির কারণে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল জেটি-বার্থ থেকে সবধরনের জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখানোর পরই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর পাশাপাশি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, শোর ক্রেন, আরটিজি, স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ারসহ সবধরনের কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের যান্ত্রিক সরঞ্জাম নিরাপদ করে রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের আগের ৪ নম্বর সঙ্কেত ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়নি। এক লাফে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণায় সর্বত্র সাধারণ সচেতন মানুষের মাঝে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো- ফণির অবস্থা ‘মোরা’র মতো হবে নাতো? বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রচÐ শক্তি এবং বাংলাদেশে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে আবহাওয়া দপ্তর ২০১৭ সালের ২৯ মে রাতে হঠাৎ করে দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করেছিল। শেষ পর্যন্ত ৩০ মে’১৭ সকালে ‘মোরা’র আঘাতটি ছিল খুবই মামুলি ধরনের। তাও কক্সবাজারের কিছু জায়গায় সীমিত থাকে।
অতিমাত্রায় তোড়জোড়ের মধ্যদিয়ে ক্রেডিট নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি তখন জনমনে সমালোচিত হয়। তাছাড়া সত্যিকারের ‘দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতে’র বিশ^াসযোগ্যতা ও এর গুরুত্বও হালকা করা হয়। অবশ্য ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সঙ্ঘটিত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের পর আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সঙ্কেত বাস্তবসম্মত প্রমাণিত হয়নি। তবে সিডর, আইলাসহ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
আসছে ‘বায়ু’
ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে গত ২৪ এপ্রিল সৃষ্ট একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। একদিন পর শক্তি অর্জন করেই সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়। এর নাম বাংলাদেশেরই দেয়াÑ ‘ফণি’। যেটি আজ আঘাত করার শঙ্কা মাথায় নিয়ে গতকাল লাখো উপকূলবাসী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করেছেন।
২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরকূলের দেশগুলো মিলে একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। এর আওতাভূক্ত ৮টি দেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ওমান।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি মে মাসেই বঙ্গোপসাগরে জন্ম নিতে পারে আরও একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী এটির নাম হবে ‘বায়ু’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।