পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাপানের সম্রাট আকিহিতো গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। গত ২০০ বছরে চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসন (জাপানের সিংহাসনের নাম) থেকে এটাই প্রথম পদত্যাগের ঘটনা। তার পুত্র যুবরাজ নারুহিতো নতুন সম্রাট হয়েছেন। নতুন সম্রাজ্ঞী হয়েছেন মাসাকো। জাপানে শুরু হল তাদের অধ্যায়। গত ২৯ এপ্রিল এ নিয়ে দি নিউইয়র্ক টাইমসে লেখেন মতোকো রিচ।
স্কুপ নিউজটি করেছিল আসাহি শিম্বুন। ১৯৯৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রচার সংখ্যায় জাপানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সংবাদপত্র প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম করেছিল- ‘প্রিন্সেস মাসাকোর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে।’ দেশ এ খবরের অপেক্ষা করছিল। জাপানের পরবর্তী সম্রাট যুবরাজ নারুহিতোকে বিয়ে করার জন্য ছয় বছর আগে মেধাবী তরুণী ক‚টনীতিক মাসাকো ওয়াদা তার চাকরি ছেড়েছিলেন। কেউ কেউ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে মাসাকো রাজতন্ত্র, এমনকি দেশের আধুনিকায়নে সাহায্য করবেন।
কিন্তু তার গর্ভবতী হওয়ার খবরে দেশে সাড়া পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এ সম্ভাবনাটিও বিলীয়মান স্বপ্নের মতই মনে হল। মাঝের বছরগুলো হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ডে পড়া বহুভাষিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞকে এমন এক মহিলাতে নামিয়ে আনল যার চাকরির একমাত্র দায়িত্ব হল সিংহাসনের উত্তরাধিকারীর জন্মদান যা জাপানিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
জাপানি সংবাদপত্রের কাছে মাসাকো ছিলেন সেই নারী যিনি সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন। যদি তিনি নীচু হিলের জুতো পরতেন বা কোনো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ না দিতেন, ট্যাবলয়েডগুলো জল্পনা-কল্পনার ঝড় বইয়ে দিত যে তিনি মা হতে যাচ্ছেন। জাপানের মর্যাদাপূর্ণ সংবাদপত্র আসাহি শিম্বুন বের করত স্কুপ- যা কয়েক বছর ধরেই মাসাকোর কাছ থেকে আশা করা হচ্ছিল।
সাংবাদিকরা তার বাবা-মার বাড়িতেও হানা দিতেন। বিশ্লেষকরা আলোচনা করছিলেন যে সম্রাট পরিবারের নতুন শিশু জাপানের পতনশীল অর্থনীতি বা হ্রাস পেতে থাকা জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো পূর্বাভাস বয়ে আনবে কিনা। আরো নানা বিষয়। তিন সপ্তাহ পর সম্রাটের প্রাসাদে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হল। জানানো হল- সাত সপ্তাহের মাথায় প্রিন্সেস মাসাকোর গর্ভপাত হয়েছে।
পন্ডিতেরা প্রিন্সেসের গর্ভবতী অবস্থায় বেলজিয়ামে রাজকীয় সফর বাতিল না করার সমালোচনা করলেন। প্রাসাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করার আগেই তার গর্ভবতী হওয়ার খবর প্রকাশ করে তার উপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করার জন্য আসাহি শিম্বুনকে দায়ী করল। প্রিন্সেস নিজে লোকচক্ষুর অন্তালে চলে গেলেন। এই রাজকীয় নাটকের পিছনে ছিল দেশবাসীর অস্বস্তি- আরেকবার বুঝি রাজবংশ বিলুপ্তির সম্মুখীন।
এক হাজার ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসন টিকে রয়েছে। সিংহাসন যাতে উত্তরাধিকারিশূন্য না হয় তার জন্য সম্রাটদের বিবাহিত পতœী ছাড়া উপপতœীরও ব্যবস্থা ছিল। জাপানের অভিজাত সমাজ এক্ষেত্রে পালাক্রমে সম্রাটের জন্য খন্ডকালীন সঙ্গিনীর ব্যবস্থা করত যাতে ছেলে উত্তরাধিকারী নিশ্চিত হয়। কিন্তু নারুহিতোর পিতামহ সম্রাট হিরোহিতো এ প্রথা বিলুপ্ত করেন। ১৯৪৭ সালে আমেরিকা বর্তমান সম্রাট বা তার ভাই বা চাচাদের সরাসরি পুত্র সন্তান ছাড়া আর কোনো শাখা থেকে উত্তরাধিকারী না করার জন্য জাপানের উপর চাপ করে।
নতুন আইন যা লিখিত, এর উদ্দেশ্য হল রাজ পরিবারের অন্য কোনো শাখার পক্ষ থেকে সামরিকতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা প্রতিহত করা যা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সৃষ্টি করেছিল। তারপর থেকে উত্তরাধিকার নিয়ে সঙ্কট দেখা দেয়নি। হিরোহিতোর তিন ভাই, দুই পুত্র ও তিনজন যোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র রয়েছেন।
মাসাকোর গর্ভপাতের সময় সিংহাসনের পুরুষ উত্তরাধিকারী ছিল অল্প কয়েকজন। সম্রাট আকিহিতোর একটিই ভাই হিটাচির কোনো সন্তান ছিল না। আকিহিতোর ছোট ছেলে প্রিন্স আকিশিনোর দুটি মেয়ে। রাজসিংহাসনের ভবিষ্যত নির্ভর করছিল সম্রাটের বড় ছেলে নারুহিতো ও তার স্ত্রী মাসাকোর উপর। ক্রাউন প্রিন্সেস মাসাকোর উপর বড় রকম চাপ পড়েছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি তার প্রথম একক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জনগণকে আশ^স্ত করতে বাধ্য হন যে তিনি কোনো হতাশায় ভুগছেন না।
গর্ভপাত ঘটার পর ৪০ দিনেরও বেশি সময় তিনি জনসমক্ষে আাসেননি। তিনি সম্রাট আকিহিতোর মা সম্রাজ্ঞী নাগাকোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও যাননি। এমনকি তিনি বার্ষিক রাজকীয় কবিতা পাঠ উৎসবেও যাননি যদিও একটি কবিতা পাঠান। কবিতাটি হল- ‘এই সাতটি বছর অতিবাহিত হয়েছে আমার পথ প্রদর্শক স্বামীর সাথে/ প্রতিটি পেরিয়ে যাওয়া দিনের সাথে সাথে আমাদের হৃদয়ের প্রেম হয়েছে আরো গভীর।’
দুই বছর পর, বিয়ের প্রায় এক দশক পূর্তিকালে, ৩৮তম জন্মদিনের কয়েকদিন আগে মাসাকো এক মেয়ের জন্ম দেন। দম্পতি তার নাম রাখেন আইকো যার অর্থ ভালোবাসা। কিন্তু একটি ছেলে উত্তরাধিকারী জন্ম দেয়ার চাপ তার উপর থেকেই যায়। প্রাসাদ মাসাকোর বিদেশ সফর বন্ধ করে দেয়। সংবাদ মাধ্যম তার প্রতিটি কাজের উপর চোখ রাখে।
২০০৪ সালে অবস্থা এত খারাপ হয় যে মাসাকো কোনো অনুষ্ঠানেই জনসমক্ষে আসতেন না। যুবরাজ নারুহিতোর চেহারা একটু মøান দেখাত। সাংবাদিকদের তার কাছে আসতে মানা করতেন তিনি। মাসাকোর ভ্রমণে বাধা আরোপের জন্য প্রাসাদ কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, উত্তরাধিকার বিষয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অত্যন্ত সচেতন। আমি আশা করি, কোনো চাপ ছাড়া শান্তিতে বাস করতে আমরা সক্ষম হব। আমি মনে করি প্রিন্সেস মাসাকো যদি একটু বেশি স্বাধীনতা নিয়ে বাইরে যেতে পারেন ও বিভিন্ন কাজ করতে পারেন তাহলে ভালো হবে।
এখানে এ সমস্যার একটিই সমাধান আছে বলে মনে করা হচ্ছিল, তাহল জাপান নারীদের সিংহাসনে আসীন করার জন্য আইন পরিবর্তন। সেটা হলে সম্রাট আকিহিতোর তিন নাতনি ছোট আইকো ও তার দুই চাচাতো বোন মাকো ও কাকো সিংহাসনের উত্তরাধিকারিণীর সারিতে থাকত। ২০০০-এর দশকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির সংস্কারের অঙ্গীকার তাকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করেছিল। তিনি স্থিতিশীল পদ্ধতিতে রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখার জন্য পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। আসাহি শিম্বুন এ ধারণাটি সমর্থন করে এবং জনমত জরিপ চালায় যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সুস্পষ্টভাবে এর প্রতি সমর্থন জানায়।
কিন্তু এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা আসে, বিশেষ করে কোইজুমির দলের জাতীয়তাবাদী অংশের কাছ থেকে। একজন সাবেক মন্ত্রী সমাট পরিবারের পুরুষ উত্তরাধিকারের ধারাকে জাপানি জাতির মূল্যবান সম্পদ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে এ বিষয় ভোটাভুটির পর্যায়ে যাওয়ার আগেই নিয়তি হস্তক্ষেপ করে। নারুহিতোর ভাই ও তার স্ত্রী প্রিন্স আকিশিনো ও প্রিন্সেস কিকো তাদের তৃতীয় সন্তানেরজন্ম দেন। এক ছেলের বাবা-মা হন তারা। সম্রাট পান নাতি। এ শিশুর নাম হিশাহিতো।
এর ফলে চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসনের কমপক্ষে আরেক পুরুষের উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়। আর জাপানের মাসাকো (যিনি এখন সম্রাজ্ঞী) ছেলে উত্তরাধিকারীর জন্ম দেয়ার চাপ থেকে রক্ষা পান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।