পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড়ের দিকেই সবার সতর্ক চোখ অসহনীয় গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ : ঢাকায় বাস্তব খরতাপের দহন ৪৪ ডিগ্রি
প্রচন্ড শক্তিতে ধেয়ে আসছে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে এই ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ ভারতের উপক‚ল বরাবর উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে আঘাত হানার সময়ে যদি হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যায় তাহলে ‘ফণি’ বাংলাদেশের খুলনা-বরিশাল হয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের ছোবলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানির আশঙ্কাও রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ভারতের বিশাল পূর্ব উপক‚লের অন্ধ্র-উড়িষ্যা-তামিলনাডু থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত ব্যাপক দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল চর ও দ্বীপাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র আতঙ্কে রয়েছেন সাড়ে ৪ কোটি উপকূলবাসী। ‘ফণি’ মানে বিষধর সাপের ফণা। এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ।
গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে আজ-কালের মধ্যে ‘ফণি’র শক্তি আরও বৃদ্ধি পেয়ে এটি সাগরে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার এমনকি আরো বেশি ঘূর্ণন গতি লাভ করতে পারে। ‘ফণি’ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে ১১শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ‘ফণি’ সাগরে কম গতিতে অগ্রসর হয়ে অত্যধিক শক্তিমত্তা অর্জন করছে। এটি শিগগিরই হ্যারিকেনের তীব্রতা ও ব্যাপক শক্তিসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে কিনা সে সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর সুস্পষ্ট করে কোনো কিছু জানায়নি। তবে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি), যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ ভারত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলেও আছড়ে পড়তে পারে। গতবছর ২০১৮ সালে বঙ্গোপসাগরে ৬টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। যার সবগুলোই সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ উপকূলভাগ এড়িয়ে ভারত এবং মিয়ানমার উপকূলে ছোবল হানে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘ফণি’ যদি বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে এবং তার শক্তি অব্যাহত বা বৃদ্ধি পায় তাহলে বন্দরসমূহহে সঙ্কেত বাড়ানো হবে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রধান সমুদ্র বন্দরসহ দেশের বন্দর ও এর সংলগ্ন স্থাপনাগুলোতে সতর্কতা গ্রহণ করা হবে। প্রত্যন্ত উপকূলীয় চর ও দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম দ্রæত শুরু করা হবে। এরজন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ মুহূর্তে সবারই সতর্ক দৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র মতিগতির দিকেই।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র সক্রিয় উল্টো প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের অঞ্চল থেকে মেঘমালা শুষে চলে যাচ্ছে ‘ফণি’র ভেতরেই। এরফলে অবিরাম তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। গতকাল রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলেও দুপুর বেলায় বাস্তব খরতাপের তহন ছিল ৪৪ ডিগ্রি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ ডিগ্রি সে.। সিলেট ছাড়া দেশের কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টিপাত নেই। তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিভ্রাট। সেই সাথে পানির সঙ্কটে শহর নগর গ্রাম-গঞ্জে মানুষের দুঃখ-কষ্ট সীমাহীন। প্রচÐ গরমের যাতনা গত দুই সপ্তাহ ধরেই সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা জানান দিয়ে আসছে।
গতকাল রাতে সর্বশেষ বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশীদ জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থারত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরো ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ‘ফণি’র অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারে প্রশাসনের প্রস্তুতি
বিশেষ সংবাদদাতা কক্সবাজার থেকে জানান, ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে বড় ঘ‚র্ণিঝড় ‘ফণি’। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘ফণি’ আগামী শনিবার দিবাগত ভোর রাত থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ উপক‚লে তীব্রভাবে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান আবহাওয়াবিদগণ। ‘ফণি’র আয়তন ২ লক্ষাধিক বর্গকিলোমিটার। যা বাংলাদেশের চেয়েও বড়। এটি গত তিনদিন যাবৎ কম গতি বজায় রেখে শক্তি বৃদ্ধি করেছে, ধীরে ধীরে হ্যারিকেনে রূপ নিচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মঙ্গলবার সার্বিক আবহাওয়া পর্যালোচনার বরাত দিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘ‚র্ণিঝড় প্রস্তুতির লক্ষ্যে সারাদেশে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সম্ভাব্য ঘ‚র্ণিঝড় মোকাবেলায় বিশেষ সভা ডেকে সবধরনের প্রাক-প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপক‚লবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিওসহ সংশ্লিষ্টদের ঘ‚র্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সবকিছু গুরুত্ব সহকারে মনিটর করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।