পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ১ মে। মহান মে দিবস। দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার রক্তঝরা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। মাঠেঘাটে কলকারখানায় খেটে খাওয়া মানুষের এক গৌরবময় ইতিহাসের দিন। বিশ্বের মেহনতী জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সংহতির প্রতীক হিসেবে এ দিনটি পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণের শিকার হতে থাকা শ্রমিক শ্রেণি এই বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে বুকের রক্ত ঝরিয়েছিল। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল অমর এক উপাখ্যান। ১৮৮৬ সালের মে মাসে শ্রমঘণ্টা ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরের ‹হে মার্কেটে’ নির্যাতিত শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ জনসভায় মালিক এবং সরকারপক্ষের বর্বরোচিত আক্রমণ, গুলিবর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ‹মহান মে দিবস›-এর সূচনা হয়। সেই দিন মালিক ও সরকার শ্রেণির নির্দেশে গুলি চালালে জীবন দেয় ১০ শ্রমিক। আর রক্ত ঝরে অসংখ্য শ্রমিকের। আর এতেও জনতার জোয়ার থামিয়ে দিতে পারেনি শোষকশ্রেণি। ১ মে শুরু হওয়া শ্রমিকদের এ আন্দোলন অব্যাহত ছিল আরও কয়েকদিন। অব্যাহত থাকে ধর্মঘটও। ৩ মে একটি ফসল কাটার কারখানার সামনে শ্রমিক সভায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় আরও ৬ শ্রমিক। হত্যার প্রতিবাদে ৪ মে হে মার্কেট স্কয়ারে স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম শ্রমিক সমাবেশে আবারও বর্বরোচিত হামলা চালায় পুলিশ। প্রাণ হারায় আরও ৪ শ্রমিক। পরে ৬ অক্টোবর মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত চার শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তিন বছরের মাথায় ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগো ট্র্যাজেডিকে ‹আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস› হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। সেই থেকে আজ অবধি শ্রমিকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনার অমিত তেজ সঞ্চারের দিন হিসেবে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হতে শুরু করে ‹মে দিবস› নামে। মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যে কোন সঙ্কটে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে মে দিবস পালন করছে বিশ্বের সব দেশের শ্রমিকরা।
মে দিবস উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক মে দিবসের বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে মে দিবসের নানা কর্মসূচী।
গতকালও দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা করেছে। সর্বস্তরের শ্রমিক শ্রেণির জন্য সংসদে আইন পাশ করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করার আহŸান জানিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। সংগঠনটির উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে শ্রমিক শ্রেণীর জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়সঙ্গত মজুরি প্রদানে ধনিক-বণিকশ্রেণী ও সমাজপতিদের যত অনিহা। যা কোন অবস্থাতেই সমাজের প্রগতির জন্য সহায়ক নয়।
রাজধানীর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে বাংলাদেশ জনসেবা শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিনিধি সভায় মুফতী ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ইসলাম শ্রমিকের যে অধিকার দিয়েছে সে অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে শ্রমিকের ন্যায্য অধীকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। মালিক-শ্রমিকের মাঝে বৈষ্যমের স্থান ইসলামে কোথাও নাই। শ্রমিকদের ন্যায্য অধীকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে মে দিবস মূল্যহীন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী এক বিবৃতিতে বলেছেন, মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। এ দিবসটি প্রতিষ্ঠার জন্যে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা ও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক আন্দোলন ও আত্মাহুতিকে এদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। ভাগ্যবঞ্চিত মানুষের মনে এ দিনটি প্রেরণা যুগিয়ে আসছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের শ্রমের ফলেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা ও সম্পদের পাহাড়। কিন্তু কোনো কালেই তাদের শ্রমে গড়া সম্পদ শ্রমিকরা ভোগ করতে পারে না।
এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বিজয়নগরস্থ পানির ট্যাংকির সামনে শ্রমিক মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে এক সমাবেশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।