Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বস্তির বৃষ্টির আশা

নিম্নচাপে সাগর উত্তাল, বন্দরে সতর্ক সঙ্কেত : কমছে গরমের দাপট : ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা এ সপ্তাহে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

বগুড়াসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ও সাময়িক হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সেই সাথে প্রত্যাশিত শীতল হাওয়ার পরশ। আজ শনিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা হলেও স্বস্তির বৃষ্টিপাতের আশা জেগেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের সক্রিয় প্রভাবে আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে। তৈরি হয়েছে বৃষ্টিপাতের আবহ। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে গত ১০ দিনের তাপদাহ পরিস্থিতির। কমে আসছে অসহ্য গরমের দাপট। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে অথবা অপর একটি নিম্নচাপ তৈরি হলে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা আছে এ সপ্তাহেই।
গতকাল শুক্রবার মাঝ-বৈশাখে দিনভর ঠা ঠা রোদে দেশজুড়ে যেন সূর্য আগুন ঢেলে দিয়েছে। ছুটির দিন থাকায় রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলের মানুষজন তাপদাহের কারণে দরকারি কাজকর্ম ছাড়া বাড়িঘরের বাইরে যাননি। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের অনেক জেলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎবিভ্রাট জনজীবনে চরম দুর্ভাগ তৈরি করেছে।
তবে গতকালের সার্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) তুলনায় কিছুটা কম। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সুবাদে বগুড়ায় দিনের তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ৩২.৮ ডিগ্রি, রংপুরে ৩২.১ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে ৩০.৬ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ১১ মি.মি. বৃষ্টির পর ৩১.৭ ডিগ্রি এবং তেঁতুলিয়ায় ১৩ মি.মি. বর্ষণের পর ৩২.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৬.২ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে তা ৩৪.২ ও ২৬.৭ ডিগ্রি সে.। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৮ ডিগ্রি সে.।
আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুমিল্লা অঞ্চলসহ খুলনা ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাতের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এদিকে ঢাকা, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও তাপমাত্রা হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে।
ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে গতকাল দুপুরে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপের সক্রিয় প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরসমূহকে সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সুবাদে আজ শনিবার থেকে ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত ও সাময়িক বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। খরতপ্ত আবহাওয়ার হতে পারে কিছুটা উন্নতি। হিমেল হাওয়া বুলিয়ে যেতে পারে স্বস্তির পরশ। এর ফলে গরমের দাপট কমতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল দেশের সবক’টি বিভাগে টানা অসহনীয় তাপদাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। দিনভর কড়া সূর্যের তীর্যক দহনে মানুষ আর প্রাণিকুলের প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি (ঢাকায় গত সন্ধ্যায় ৫৫ শতাংশ) থাকায় গরমের সাথে মানুষ প্রচুর ঘামে কাহিল হয়ে পড়ছে। এতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
চলমান অন্তত ১০ দিনের তাপদাহের উন্নতির এবং স্বস্তির বর্ষণের আশায় আকাশপানে চাতকের মতো মানুষ তাকিয়ে আছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকেই ডায়রিয়াসহ মৌসুমী রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজে সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বৃষ্টিপাতের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করেন খতিব-ইমামগণ।
নিম্নচাপ পরিস্থিতি
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২০৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার বহরকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
চলতি এপ্রিল মাসের শেষ কয়েকটি দিনে অথবা মে মাসের গোড়াতে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবহাওয়া দপ্তর এই নিম্নচাপটির পরবর্তী গতি-প্রকৃতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অবিরাম এক সপ্তাহ বা ততোধিক সময়ে ২৮ ডিগ্রি সে. ও ততোধিক থাকলে সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ বঙ্গোপসাগরের উপরতল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল পর্যন্ত সমুদ্র বেষ্টিত কক্সবাজার (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সে.) এবং পটুয়াখালীতে (৩৬.৮ ডিগ্রি সে.) বঙ্গোপসাগরে সেই ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তৈরিরই আলামত বহন করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ