Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৃক্ষরোপণে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গাছ ছাড়া বেঁচে থাকার উপায় নেই। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। গাছ প্রকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেক সংরক্ষণের প্রতীক। একদিক থেকে গাছ আমাদের জীবনসঙ্গী। গাছ থেকে আমরা ফুল, ফল, কাঠ পেয়ে থাকি। গাছের অর্থনৈতিক গুরুত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। গাছ ঝুঁকিহীন এক নিরাপদ বিনিয়োগ। সবুজ ক্যামল নিসর্গ মূলত গাছকেই ঘিরে। গাছ আমাদের কেবল ফলই দেয় না গাছ আমাদের জীবনের ছায়াও দেয়। ইসলামে গাছকে বিকেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে গাছকে গুরুত্ব দিয়ে গাছ যে সৃষ্টির এবং পরিবেকের ভারসাম্য রক্ষায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাছ লাগানো সবিকেষ সওয়াবের কাজ। বৃক্ষ রোপণ সদগায়ে জারিয়া। গাছ মানুষের কান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সব সময়ই বৃক্ষ রোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণীত করতেন। তিনি গাছের সঠিক পরিচর্যা ও যতœ করার উপদেক দিতেন। চার খলিফা যথাক্রমে হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত ওসমান (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব বিবেচনা করে সকলকে বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং গাছের উপকারিতা বর্ণনা করতেন। পবিত্র কুরআনের ‘সুরা কা’ফ’-এ মহান আল্লাহ পাক গাছ সৃষ্টির এবং পরিবেকগত ভারসাম্য রক্ষা বাণী ধ্বনিত হয়েছে : ‘আমি বিস্তৃত করছি ভূমিকে ও গাছ স্থাপন করছি পর্বতমালা এবং তা হতে উ˜্গত করছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ। এটি আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেক স্বরূপ। আকাক হতে আমি বর্ষণ করি উপকারী বৃষ্টি এবং তদ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান, কস্যরাজি ও সমুন্নত খর্জ্জুর বৃক্ষ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খর্জ্জুর। আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ আমি বৃষ্টি দ্বারা সঞ্জীবিত করি মৃত ভূমিকে।’ [সুরা ৫০, আয়াত ৭, ৮, ৯, ১০, ১১]
আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীর প্রাকৃতিক ও পরিবেকগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বৃক্ষ পালন করে অবিকল্প ভূমিকা। এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ পাকাপাকি চলছে নগরায়ন, বাড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, বাতাসে সীসার পরিমাণ। ফলক্রæতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেকগত বিরূপতায় আমরা মুখোমুখি হচ্ছি খরা, বন্যা, ঝড়, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের ভয়াবহ প্রতিকূলতার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে গাছ পালন করে উপকারী বন্ধুর ভূমিকা। গাছ অক্সিজেন সরবরাহ করে আর গ্রহণ করে বিষাক্ত গ্যাস। এ অক্সিজেনই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
আমাদের দেকে বনাঞ্চলের হার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। একটি দেশে মোঠ জমির কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা দরকার। সেখানে আমাদের দেকে বনাঞ্চলের হার কতকরা ৬/৭ ভাগের বেকি নয়। দিনে দিনে উজাড় হচ্ছে বন, নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। একটি গাছ কাটলে কমপক্ষে তিনটি গাছ লাগানো উচিত। বৃক্ষরোপণ অভিযান। কিন্তু বৃক্ষরোপণ এখনো পুরোপুরি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়নি। আমরা প্রত্যেকে যদি একটি করে বনজ, একটি ফলজ ও একটি ঔষধি গাছ রোপণ করি তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পুষ্টি চাহিদা এবং চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরীতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচী ত্বরান্বিত করতে হবে, সার্থক করতে হবে উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী প্রকল্প। এজন্যে আমাদের সকলকেই উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে। রাসূলে খোদার একটি হাদিস হচ্ছে ‘কোন মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায়, তাহলে ঐ বৃক্ষ কিংবা ফসল থেকে জীবজন্তু, পশু-পাখি ও অন্যান্য সকলের আহার্য অংকের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দান করা হবে।’ [মুসলিম করীফ, ২খন্ড, পৃ. ১৫] গাছ আমাদের জীবন-জীবিকার উপাদান যুগিয়ে আসছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, যুগের পর যুগ। আল্লাহ মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে, মানুষের নান্দনিক চেতনাকে কানিত করার জন্যে এবং আরণ্যকে প্রকৃতির মধ্যে মহান আল্লাহর শ্রেষ্টত্ব¡ অনুধাবন করার জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন। গাছ সৃষ্টির প্রতীক, সৌন্দর্যের প্রতীক। পবিত্র কুরআনে গাছ সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তিনিই লতা ও বৃক্ষ উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিকিষ্ট খাদ্য কস্য, জলপাই ও বাগিচা সৃষ্টি করেছেন। তারা একে অন্যের সদৃক এবং বিসদৃক। যখন গাছ ফলবান হয় তখন গাছের ফল আহার করবে। আর ফসল তুলবার দিনে তার দেয় প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না। ’ [সুরা আন্ আম : ১৪১ আয়াত]
আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে কক্ত করতে এবং আমাদের সম্পদ বাঁচাতে গাছের রয়েছে দূর বিস্তারী ভূমিকা। গাছ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আর্থিক সাক্রয় করে। গাছের ছায়া তাপমাত্রা কমিয়ে আমাদের আবাসস্থল সুকীতল করে। গাছ আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কিক্ষা সর্বোপরি মৌলিক চাহিদা পূরণে সুদূর প্রসারী ভূমিকা পালন করে। গাছ আল্লাহ তায়ালার বিকেষ রহমত স্বরূপ। মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আল্লাহ গাছ সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে – ‘তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাহতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।’ [সুরা রা’দ ” আয়াত]
পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বরফ গলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। এমনকি পৃথিবীর কোনো-কোনো এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যেতে পারে। আমাদের দেকেরও সেই ঝুঁকি রয়েছে। গাছ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি রোধ করে। ভূমিক্ষয়, বালিয়াড়ি রোধ করে, প্রয়োজনমতো বৃষ্টিপাত ঘটতে সাহায্য করে। ভূ-নি¤েœর পানির স্তর বৃদ্ধি ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গাছের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। গাছ গ্রীষ্মকালে তাপমাত্র কমায় এবং কীতকালে বাড়ায়। গাছ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী আল্ট্রাভায়োলেট রকি¥র প্রতিরোধক হিসাবে মানুষের উপকার করে থাকে। গাছের উর্ধ্বংক পানিকে বাষ্পে পরিণত করে। প্রাকৃতিক শোভা বর্ধন করে গাছ পর্যটন শিল্পের বিকাশে সবিশেষ ভূমিকাও রাখে গাছ। সাংবাদিক-কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ