পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, খাদ্য, শিশুদের পড়াশুনাতে বাড়তি অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুজাতিক এই সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভার শেষ দিনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আসে। রোহিঙ্গাদের জন্য ইতোমধ্যে ৪২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এই টাকা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে বহুজাতিক সংস্থাটি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে আমূল সংস্কারে আর্থিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, শরণার্থী হওয়ার কী কষ্ট তা আমরা বুঝি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশ থেকে এক কোটি মানুষ পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে যারা বাংলাদেশে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে এই দেশে থাকতে দিয়েছেন। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। সবাই এ কারণে প্রধানমন্ত্রীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব তাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা। বসন্তকালীন সভায় আমরা মানবিক বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের সামনে তুলে ধরেছি। তারা আমাদেরকে বলেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওইসব বৈঠকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে আমূল সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৈঠকে আলোচনা হয়, রোহিঙ্গাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কত টাকা দরকার, তা বের করা।
এদিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সদস্যভুক্ত ১৮৯টি দেশের প্রতিনিধিদের মিলনমেলা ভেঙেছে গতকালই। এদিনও বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে। তাতে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট বহু মানুষকে হত্যা করেছে। গুম ও খুন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিক্ষোভকারীদের আহ্বান ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্টকে সহযোগিতা না করতে। একজন খুনি, একজন স্বৈরশাসক একজন টাকা পাচারকারীর পক্ষে না থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। পরপর তিন দিন বিক্ষোভের কারণে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল কঠোর নজরদারি। এ ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে নিতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাথমিক থেকে এই সংস্কার আনতে হবে। শ্রেণিকক্ষের মান বাড়ানো, পড়াশুনার মান উন্নয়ন, মাল্টিমিডিয়া, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোসহ সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অনেক টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে শিক্ষা খাতে আমূল সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে তাদের কাছে বাড়তি বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছি। বিশ্বব্যাংক আমাদের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষা খাতে আমূল সংস্কারে বিনিয়োগে রাজি হয়েছে। তারা বলেছে, সংস্কারে কত টাকা দরকার, তা বের করে তাদেরকে জানাতে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান চলমান বড় বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে যদি আরো টাকার প্রয়োজন হয়, প্রয়োজনে তা-ও দেওয়া হবে।
এবারের বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভার প্রথম দিন দায়িত্বভার নেন বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যার সখ্য বহুদিনের এবং বিশ্বব্যাংকের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ম্যালপাস। তাই এবারের সভায় ম্যালপাসের ভূমিকা দেখতে অনেক দেশের প্রতিনিধিরা উন্মুখ হয়ে ছিলেন। অবশ্য ম্যালপাস দায়িত্ব নেওয়ার পর জানিয়েছেন, আগে তিনি যা কিছু বলেছেন, তা অতীত। এখন তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। তাই বিশ্বব্যাংকের যে নীতি কৌশল, তা মেনেই তিনি কাজ করবেন। তবে তার এই কথায় এখনো অনেক দেশ আশ্বস্ত হতে পারেনি। বিশেষ করে চীন। কারণ, ম্যালপাস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রশ্ন তুলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও চীন বিশ্বব্যাংক থেকে এত টাকা ঋণ পায় কীভাবে। তাই আগামী দিনে চীনের জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ কমে যায় কি না তা দেখার বিষয়। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের এবারের বসন্তকালীন সভা শেষ হয়েছে সদস্যভুক্ত ১৮৯টি দেশের দারিদ্র্যের হার কমানোর পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা আশ্বাসের মধ্য দিয়ে। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেয়া ডেভিড ম্যালপাসের ভূমিকা সামনের দিনগুলোতে কী হবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছে অনেক উন্নয়নশীল দেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।