Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজ আছে বলে ১১ তলায় নেমেই না ফেরার দেশে

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

বনানীর এফ আর টাওয়ারের ২২ তলায় ইখতিয়ার হোসেন মিঠুর অফিস। ঘটনার দিন লাঞ্চ ব্রেকের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু লাঞ্চ নয় মিঠুর জীবনের চাকা ব্রেক করে স্থায়ীভাবে থামিয়ে দিয়েছে। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার মার্চের ২৮ তারিখ। লাঞ্চ করার সময় ভবনের নিচের দিকে ফ্লোরে আগুন লাগলেও তা ২২ তলার কেউই বুঝতে পারেনি।
সহকর্মীরা লাঞ্চ ব্রেকের সময় মিঠুকে প্রতিদিনের মতো ক্যান্টিনে একসঙ্গে বসে খাবারের জন্য ডাকেন। এ সময় মিঠু বলেন, তিনি কিছুটা সময় পর লাঞ্চ করবেন। সহকর্মীদের কয়েকজন একত্রে বসে লাঞ্চ শেষে অন্য কাজে যাওয়ার কথা বলেন। মিঠু কারো কথা না শুনেই বলেন, নিচে ১১ তলায় সামান্য কাজ রয়েছে। অফিস ছুটির পর সে কাজটি করা যাবে না। সবাই চলে যাবে বলেই তিনি দ্রত লিফটের দিকে এগিয়ে যান।
প্রতিদিনের নিয়ম ভেঙে সহকর্মীদের সঙ্গে লাঞ্চ না করে ১১ তলায় নামাটাই যে জীবনের শেষ তা কেউ বুঝতে পারেনি। মিঠু নেমে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর ১৭ নম্বর সড়কে হাজার হাজার লোকের চিৎকার শুনে ২২ তলায় অবস্থানরতরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রীতিমত বাকরুদ্ধ। ভবনের নিচের দিকের অর্ধেক অংশ থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার বাতাসে ভেসে আসছে।
মিঠু জরুরি কাজ আছে বলে ২২ তলা থেকে ১১ তলায় নেমে গেলে আর উপরে উঠতে পারেননি। ওই ১১ তলায় যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে মরণের সহযাত্রী হলেন। আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ১১ তলা থেকে আগুনে পুড়ে নিহত যে ক’টি লাশ বের করে আনেন তার মধ্যে হতভাগ্য মিঠুও ছিলেন।
মিঠুর স্ত্রী আশা জানান, আড়াই বছরের ফুটফুটে ছেলে মিফতাহুল হোসেন মুগ্ধকে নিয়ে তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন। যে সংসার খুবই ভালো চলছিল, সেটি মুহূর্তেই এক অনিশ্চিত অন্ধকার গহ্বরে চলে গেল। তিনি বলেন, স্বামী ১১ তলায় নামার কয়েক সেকেন্ডর মধ্যেই চারদিকে আগুন দাউ দাউ করে জ¦লতে শুরু করে। সবাই জীবন বাঁচানোর জন্য ফ্লোরের ভেতরেই একদিক থেকে অন্যদিকে ছুটোছুটি করছিল।
মিঠু মোবাইল ফোনে স্ত্রীকে রিং করেন। তিনি বার বার বলছিলেন, ভবনে আগুন লাগার কথা ভুলেও যেন বাবা-মাকে জানানো না হয়। এমনিতেই বয়সের ভারে বাবা অসুস্থ এবং শারীরিকভাবেও দুর্বল। আগে দুইবার স্ট্রোক হয়েছে। আগুনের মাঝে আটকা পড়ার কথা শুনলে ফের স্ট্রোকে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আশা জানান, তিনি স্বামীকে দ্রুত ভবন থেকে বের হওয়ার জন্য বললেও জবাব পান কোন পথ খোলা নেই।
এক পর্যায়ে মিঠু কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রীকে বলেন, ‘আশা আমাকে বাঁচাও। আগুনের মধ্যে থাকতে পারছি না। ছেলের দিকে খেয়াল রাখবে। তুমি ভালো থেকো। আমি বুঝি আর বাঁচতে পারব না। সবাই ভালো থেকো’। ফোনে কথা বলার সময় এফ আর টাওয়ারে আগুনের মাঝে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর আকুতি তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু স্বামীর ফোনটিই যে শেষ ফোন হবে তা আশা কল্পনাও করতে পারেননি।
অসচ্ছল পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে মিঠু তিন বছর আগে এফ আর টাওয়ারের ২২ তলায় একটি গ্লোবাল কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টিং অফিসার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেই তিনি ঢাকায় এসে কর্মজীবন শুরু করেন।
মিঠুর বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের চরবানিয়া পাড়া গ্রামে। বাবার নাম ইসহাক প্রামাণিক আর মা হজেরা খাতুন। তিন সন্তানের মধ্যে মিঠু সবার বড়। তার অকাল করুণ মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। বৃদ্ধ বাবাকে রেখে আগে ছেলের মৃত্যু হবে তা কোনো বাবা-মা কল্পনাও করতে পারে না। বড় ছেলের অকাশ মৃত্যুতে পরিবারে যে সঙ্কট সৃষ্টি হল তা দূর হওয়ার নয়।



 

Show all comments
  • Badrunnesa Eva ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    সবার ই কান্না পাবে ।ভালোবাসা জিনিস টা অসাধারন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Jewel Jewel ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
    আমরা মানুষেরা মায়ায় বাঁচতে চাইনা, বাঁচতে চাই স্বার্থের মায়ায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Chandan Charles Gomes ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    খুবই দুঃখজনক ! খুবই হৃদয়বিদারক! আমি তোমার মত একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম! আমার হৃদয়ের দুঃখে ভারাক্রান্ত! তবে একটি কথা বারবার মনে ঘরে ফেরে আচ্ছা ফায়ার ফাইটার আসছে 30 থেকে 35 মিনিট কেন দেরি করল? কোথায় আমাদের রাস্তাঘাটের কোথায় সমস্যা ?কোথায় সৃষ্ট সমস্যা? কেন তাদের ডাকার পর 5 থেকে 10 মিনিটের মধ্যে আসতে পারল না! আমাদের ফায়ার ফাইটার ভালো, সাহসী! চেষ্টা করে ভালো কাজ করতে কিন্তু সমস্যাটা কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • Shakil Bhuiyan ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    May Allah Bless Him Jannat
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mortuza ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mortuza ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mortuza ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ